শুক্রবার ● ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » রাঙামাটিতে পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে মাঠে নামছে পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক বাঙ্গালী সংগঠন গুলো
রাঙামাটিতে পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে মাঠে নামছে পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক বাঙ্গালী সংগঠন গুলো
ষ্টাফ রিপোর্টার ::(১৬ ভাদ্র ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩.১৭মিঃ) আগামী ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে মাঠে নামছে পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক বাঙ্গালী সংগঠন গুলো ৪ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসছে বির্তকিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য ভুমি কমিশনের প্রধান কার্যালয় খাগড়াছড়িতে হলেও এই বৈঠকটি তিন পার্বত্য জেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের বৈঠকের স্থান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষ। কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল-হক কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই হবে কমিশনের প্রথম বৈঠক।
২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই চারপতিকে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি খাগড়াছড়ি এসে কমিশনে যোগদান করেন। তবে আইন সংশোধনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ,পিসিজেএসএস (সন্তু),পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ ও পিসিজেএসএস (সংস্কারপস্থী) পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দাবির প্রেক্ষাপটে বিগত প্রায় দুই বছরে তিনি কোনো সভা আহ্বান করেননি। পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি ও বাঙ্গালী উভয়ের ভুমি রয়েছে এবং উভয়ের ভুমিতেই বিরোধ আছে। সরকার বার বার পাহাড়ি নেতাদের দাবি মেনে নিয়ে সকল আইন পাহাড়িদের পক্ষে প্রনয়ণ করেছে । পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে পার্বত্য বাঙ্গালীদের কোন প্রতিনিধি নাই। পার্বত্য চুক্তির সময়েও পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের মতামতের কোন মুল্যায় করা হয়নি। যুগ যুগ ধরে যে ভুমিতে বাঙ্গালীরা বসবাস করে আসছিলো অস্ত্র ও আইনের মারপ্যাচে ফেলে সুকৌশলে পার্বত্য অঞ্চল থেকে মুসলমান,বড়ুয়া ও হিন্দুদের বাপদাদার ভিটা মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বিদেশী দাতা সংস্থা ইউএনডিপি থেকে পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠনের নেতাদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ভেটিং সাপেক্ষে ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ৯ আগস্ট তা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। শুরু থেকেই এই আইনের বিরোধিতা করে আসছে পার্বত্য জেলায় স্থায়ী ভাবে বসবসাকারী বাঙালি সংগঠন সমূহ তারা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, হরতালের মতো আরো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
কিন্তু সরকার পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠন গুলির বিরোধীতার মুখেই কমিশন আইনের অধ্যাদেশ জারি করে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে ১৯৯৯ সালের ৩ জুন গঠিত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক চৌধুরী কার্যভার গ্রহণের আগেই মারা যান। ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল পুণর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুল করিম কার্যভার গ্রহনের কিছুদিন পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেন। ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর তৃতীয় দফায় কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মাহমুদুর রহমান ২০০৭ সালে মৃত্যুর পূর্ব তিনি পর্যন্ত সন্তু লারমার নেতৃধীন পিসিজেএসএস’র বিরোধিতার মুখে কাজ শুরু করতে পারেননি। পিসিজেএসএসের দাবি ছিল আগে আইন সংশোধন করতে হবে। ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে তিন বছরের জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি তিন পার্বত্য জেলায় অনেকগুলো মত বিনিময় সভা ছাড়াও কমিশনের বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। এ সময়ই আইন অনুযায়ী খাগড়াছড়িতে সদর দফতর স্থাপন করা হয়। বিচারপতি খাদেমুল হক কমিশনের বেশ কয়েকটি সভাও করেন। কিন্তু সভাসমূহে পার্বত্য চট্টগ্রা আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি ও তিন সার্কেল চীফ উপস্থিত না হওয়ায় এসব সভা অতটা কার্যকর হয়নি। তবে আইন অনুযায়ী তিনি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কল্পে আবেদন আহ্বান করেন। কমিশনে তার মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালের ১৮ জুলাই। এর পর টানা প্রায় দুই বছর কমিশন চেয়ারম্যান পদ ছিল শুন্য। দুই বছর পর ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল- হককে কমিশনের ৫ম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ দেওয়ার প্রায় ২ বছর পর কমিশনের বৈঠক করতে যাচ্ছেন নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত পার্বত্য ভুমি কমিশনের চেয়ারম্যান।
রাঙামাটিতে বির্তকিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনএই বৈঠকের বিরোধিতা করছে বাঙালি সংগঠনগুলো।
জানা গেছে বির্তকিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠন সড়ক অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে হরতালসহ কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে পাহাড়ের বাঙ্গালী সংগঠনগুলো।
পার্বত্য নাগরিক পরিষদের আহবায়ক আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকমকে মুঠোফোনে জানান, বহুল বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধনী (২০১৬)আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের সাথে প্রতারনা করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে পাহাড়ের বসবাসরত বাঙালীদের উচ্ছেদ করার একটি হাতিয়ার তুলো দেওয়া হয়েছে উগ্র পাহাড়ি মৌলবাদী সন্তু লারমার হাতে। তাই এই বিতর্কিত আইনটি বাতিলের দাবিতে রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি জানিয়ে আসছে পাহাড়ের বাঙ্গালী সংগঠন গুলোসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে উপ্তত্ত পরিস্থিতিতে রাঙামাটি জেলায় ভূমি কমিশনের বৈঠক আয়োজন করে জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের পরিস্তিতিতে মোটেও বৈঠক আয়োজন করা উচিত হচ্ছে না জানিয়ে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের এই নেতা জানিয়েছেন, পার্বত্য ভূমি কমিশনের রাঙামাটির বৈঠক ঠেকাতে আবরোধ ও হরতালসহ কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাহাড়ের বাঙ্গালী সংগঠনগুলো। রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠন বড় ধরনের আন্দোলন এবং প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে, এতে করে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টরাই দায়ি থাকবে বলেও বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে।