কোটচাঁদপুরে কথিত জ্বীন সাপে’র কামড়ে ১ জনের মৃত্যু : ৪ দিনে অসুস্থ ৭০ জনের অধিক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২২ ভাদ্র ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.১০মিঃ) ঝিনাইদহের হরিণদিয়া গ্রামে অজ্ঞাত রোগে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ওই গ্রামের অনত্মত ৭০ জন৷ গ্রামে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে৷

এ ঘটনায় কোটচাঁদপুর উপজেলা হাসপতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে একটি মেডিকেলটিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷

তবে গ্রামবাসি বলছে কথিত জ্বীন সাপে’র কামড়ে ১ জনের মৃত্যু ও ৪ দিনে ৭০ জনের অধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ আক্রন্তরা ওঝার দারস্থ হচ্ছে৷

হরিন্দিয়া গ্রামসহ আশপাশ এলাকার মানুষের মধ্যে এ নিয়ে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়েছে৷ হরিন্দিয়া গ্রামের মেম্বর আশাদুল ইসলাম জানান, গত শনিবার থেকে গ্রামে জ্বীন সাপের আতংক শুরু হয়৷

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৭০ জনেরও অধিক ব্যক্তি অসুস্থ্য হয়ে রাজাপুর গ্রামের ওঝা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে যেয়ে ঝাড় ফুক করে সুস্থ্য হয়েছেন৷ ওঝা আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন সাপের কামড়ের গ্রামবাসি আক্রান্ত হচ্ছেন৷

খবর পেয়ে মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা৷ মঙ্গলবার হরিন্দয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বাজার পাড়ার শরিফুল ইসলামের বাড়ীতে তার স্ত্রী রিনা বেগমকে ঝাড় ফুক দিচ্ছেন ওঝা আব্দুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী মোন্তাজুল ইসলাম৷

এ সময় খবর আসে পাশের আরো কয়েকটি বাড়ী থেকে ৪/৫ জন আক্রান্ত৷ গ্রামবাসি জানায় কিসে কামড় দিচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না৷ সাপও দেখা যাচ্ছে না৷ এ ভাবেই এলাকাজুড়ে ব্যাপক আতংকে আছে সাধারন জনমানুষ৷

হরিন্দিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, তার স্ত্রী রাহাতুন নেছা (৪০) শুক্রবার রাতে একা ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন৷ হঠাত্‍ রাত ২টার দিকে ঘরের বারান্দায় ঘুমন্ত স্বামী মান্নানকে ডেকে বলেন তার হাতে সাপে কামড় দিয়েছে৷ তবে তিনি সাপ দেখেননি৷ হাতে জ্বালা পোড়া করছে ও বুকে যন্ত্রনা অনুভব করছেন৷

এসময় পরিবারের সদস্যরা ঘর তল্লসী করেও সাপের আলামত না পাওয়ায় গ্রাম্য ডাক্তার রোমজান আলীকে ডাকেন৷ রমজান আলী এসে প্রাথমিক চিকিত্‍সা দেয়ার পরও রোগী অবস্থা ধীরে ধীরে সঙ্কটাপন্ন হতে থাকে৷

শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাহাতুন নেছাকে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিত্‍সক ওয়াদুদুর রহমান রোগীর অবস্থা সঙ্কাটাপন্ন হওয়ায় অন্যত্র রেফার্ড করেন৷ ওই দিনই যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রাহাতুন নেছা৷

গ্রামবাসি জানান, এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে সুচ ফুটানোর মত লাল দাগ ও সেখানে ফুলে যাচ্ছে৷ এরপর ওঝা ডেকে ঝাড়ু ফুক করলে তারা সুস্থ্য হচ্ছে৷

ওঝা আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, এটা অদৃশ্য জ্বীন সাপের কাজ৷ হরিন্দিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তার দুই ছেলে মেয়ে চাঁদনি (১৫) ও মাহিম (২) জ্বীন সাপে কামড়েছিল৷ তাদের শরীরে সুচ ফুটানোর মত ছোট্ট একটি লাল দাগ দেখতে পান৷

পরে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুক চাঁদনি ও মাহিম সুস্থ হন৷ একই গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে জিম (৭), মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে আলী হোসেন (৪০), রতন হোসেনের ছেলে রাতুল (৭), মিরাজূল ইসলামের স্ত্রী রত্না (২৫), আকবর আলীর ছেলে রবিউল (৪২), ফজলুর রহমানের মেয়ে রিমা (১৩), আতিয়ার রহমানের ছেলে ডনার (১৮), মধু মন্ডলের কন্যা জোত্‍না (২৫) সহ এ পর্যন্ত ৭০ জনের অধিক ব্যাক্তি অসুস্থ্য হয়ে ওঝার স্মরণাপন্ন হয়েছেন বলে গ্রামবাসি জানান৷

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর হাসপাতালের মেডিকেল টিমের প্রধান ডাঃ রাকিবুল হাসান জানান, এতে ভয়ের কিছু নেই৷ আতংকে এমনটি হচ্ছে৷ এটি হচ্ছে ম্যাস হিস্টিরিয়া রোগ৷