শুক্রবার ● ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বনমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ীদের ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা লোকসান
বনমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ীদের ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা লোকসান
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২৪ ভাদ্র ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৩মিঃ) বিনা কারণে বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র একটি টেলিফোনের নির্দেশে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ীদের কাঠ বোঝাইকৃত ৬টি ট্রাক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে বন বিভাগের বিভিন্ন চেক ষ্টেশনে আটক রাখার ১মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে৷
কোন ধরনের অফিসিয়াল চিঠি পত্র ব্যাতিত কেবল মাত্র বনমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ীদের প্রতি বন বিভাগের এধরনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
আসন্ন ঈদ উল আযহা সামনে থাকার কারণে জনগণের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে৷ কারণ সাধারন বাগানের মালিক, ট্রাকের মালিক এবং শ্রমিকসহ সকল বিনিয়োগকারীরা চরম আর্থিক ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে৷
এ ক্ষোভ থেকে জনরোষ তথা সামাজিক আইন শৃংখলা পরিস্থিত মারাত্মক অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রাঙামাটিতে৷
রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাধারন সম্পাদক কাজী মো. শহীদ উল্লাহ সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১৯২৭ সালের বন আইনের ৪১,৪২ ও ৪৬ ধারার অনুকুলে প্রণীত চিটাগাং হিলট্র্যাক্টস ফরেষ্ট ট্রানজিট রুলস ১৯৭৩ এর আলোকে বন বিভাগ কতৃক ইস্যুকৃত ফ্রি পারমিটের বনজদ্রব্যর স্থানান্তরকরন পাশ (টিপি) এর অনুবলে কাঠ বোঝাইকৃত ৬টি ট্রাক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে বন বিভাগের বিভিন্ন চেক ষ্টেশন ও নির্ধারিত স্থানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতিত বন মন্ত্রীর নির্দেশে আটক করে রেখেছে বন বিভাগ৷
তিনি বলেন, আমাদের সমিতির সদস্যদের গত ৮ আগষ্ট ২০১৬ তারিখে বন বিভাগের ইস্যুকৃত ফ্রি পারমিটের অনুবলে ব্যক্তি মালিকানাধীন জোত ভুমি হতে আহরিত কাঠ বোঝাই ৬টি ট্রাক বাজারজাতকরনের লক্ষে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পরিবহণকালীন রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কস্থ বন বিভাগের বিভিন্ন বন শুল্ক, পরীক্ষণ ফাঁড়ি ও বন বিভাগের অনুমোদিত স্থানে সংশ্লিষ্ট ষ্টেশন ও রেঞ্জ কর্মকর্তাগণ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতিত নিজনিজ ষ্টেশনের কম্পাউন্ডে আটক করে রেখেছেন৷ ইতোমধ্য কাঠ বোঝাই ৩ টি ট্রাকের আন্তজেলা ছাড়পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গেলেও ট্রাকগুলির বিষয়ে ষ্টেশন কর্মকর্তাগণ সঠিক ব্যাখ্যা বা কারণ না জানিয়ে ছাড়পত্র প্রদান করছেনা৷ ফলে কাঠ বোঝাই ট্রাকগুলি টিপি’তে উল্লেখিত গন্তব্যে যথাসময়ে পৌঁছতে পারছেনা৷ পাশাপাশি বন বিভাগের নিয়োজিত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নির্ধারিত স্থানে যথানিয়মে কাঠ বোঝাই করে ৩টি ট্রাক বিভিন্ন জেলায় পরিবহণের লক্ষে দীর্ঘদিন বোঝাই অবস্থায় পড়ে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে আন্তজেলা ছাড়পত্র (টিপি) দেওয়া হচ্ছেনা৷
কাঠ বোঝাই ট্রাকগুলি ১মাস ধরে এভাবে পড়ে থাকার ফলে কাঠের গুণগত মান ক্রমাগত নষ্ট হচ্ছে৷
কাঠের উত্সসহ কাঠ বোঝাই ট্রাক সমূহের যে তথ্য দিয়েছেন সাধারন সম্পাদক সেগুলো হচ্ছে, (ক) ৮৮/ বই নং ০০০১৮৮৩/৮৬৬ টিপি ইস্যুর তারিখ ৮আগষ্ট ২০১৬,ট্রাক নং চট্টমেট্রো ট ১১-৫১৫১, অবস্থান হাটহাজারী বন শুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ি৷
(খ) ৯০/ বই নং ০০০১৮৮৩/৮৬৬ টিপি ইস্যুর তারিখ ৮আগষ্ট ২০১৬,ট্রাক নং চট্টমেট্রো ট ১১-০৭৬০, অবস্থান হাটহাজারী বন শুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ি৷
(গ) ৮৯/বই নং ০০০১৮৮৩/৮৬৬ টিপি ইস্যুর তারিখ ৮আগষ্ট ২০১৬, ট্রাক নং চট্টমেট্রো ট ১১-০২০৮, অবস্থান রাউজান ঢালা বিট কাম চেক ষ্টেশন৷
রাঙামাটি বাস টার্মিনালে ৩টি টিপি দেওয়া হচ্ছেনা ট্রাক নং যথাক্রমে চট্টমেট্রো ট ১১-০৮৩৭, নোয়াখালী ট ১১-০১৮১, চট্টমেট্রো ট ১১-১০৭৩৷
কাজী মো. শহীদ উল্লাহ জানান, কাঠের মালিক, ট্রাকের মালিক এবং শ্রমিকসহ সকল বিনিয়োগকারীরা চরম আর্থিক ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে৷
বন বিভাগ ৬টি ট্রাক আটক রেখেছে ৩০ দিন যাবত্৷ যে ছয়টি কাঠ বোঝাই ট্রাক আটক রেখেছে তাতে ব্যবসায়ীদের এ পর্যন্ত ১কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে৷ এছাড়া রাঙামাটি শহরে আরো ১৫টি ট্রাক কাঠ বোঝাই করে রাখা হয়েছে৷ এতে মোট ট্রাকের সংখ্যা দাড়িঁয়েছে ২১টি৷
সাধারন সম্পাদক তার লিখিত বন বিভাগ বরাবর প্রেরিত এক আবেদনে জানান, এই জেলার ব্যাপক জনগোষ্ঠির জীবণ জীবিকার প্রধান উত্স নিজনিজ জোত ভুমিতে উত্পাদিত বনজ দ্রব্য তথা কাঠের ব্যবসা৷ বন আইন ও বিধিমালার আলোকে পরিচালিত এই কাঠের ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার৷ যার ফলে এই ব্যবসার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিঘ্ন সৃষ্টি হলে জেলার অন্যান্য ব্যবসার উপর তার নৈতিবাচক প্রভাব পড়বে৷
আসন্ন ঈদ উল আযহা সামনে থাকার কারণে জনগণের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে৷ এ ক্ষোভ থেকে জনরোষ তথা সামাজিক আইন শৃংখলা পরিস্থিত মারাত্মক অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
সেহেতু রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর পক্ষ থেকে বন বিভাগ এর কছে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে৷
রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাধারন সম্পাদক কাজী মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, আবেদন পত্রে কি কারণে দীর্ঘ ৩০ দিন যাবত্ কাঠ বোঝাই ট্রাক আটক রাখা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ থাকলে অতীব জরুরী ভিত্তিতে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’কে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়েছে৷ কিন্তু স্থানীয় বন বিভাগ থেকে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর আবেদনের কোন সদুত্তর দেয়নি৷
মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, কে বা কারা বন মন্ত্রনালয়কে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছেন৷
ইতোমধ্যে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র সাথে স্বাক্ষাত করেছেন এবং বিষয়টি নিষ্পিত্তি করার জন্য আমাদের সভাপতি মো. সোলোয়ামান চৌধুরী ঢাকায় রয়েছেন৷
মো. শহীদ উল্লাহ আরো বলেন, বন সচিব স্বপ্রনোদিত হয়ে দায়ের করা মামলটি ঢাকা হাইকোর্টে সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনের ১৯২৭ সালের বন আইনের ৪১,৪২ ও ৪৬ ধারার অনুকুলে প্রণীত চিটাগাং হিলট্র্যাক্টস ফরেষ্ট ট্রানজিট রুলস ১৯৭৩ এর আলোকে বন বিভাগ কতৃক ইস্যুকৃত ফ্রি পারমিটের বনজদ্রব্যর স্থানান্তরকরন সংক্রান্ত মামলাটি আমাদের রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর অনুকুলে রয়েছে৷
কোন ধরনের অফিসিয়াল চিঠি পত্র ব্যাতিত কেবল মাত্র বনমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ীদের প্রতি বন বিভাগের এধরনে পদক্ষেপ নেয়া উচিত্ হয়নি বলে দাবি করেন রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাধারন সম্পাদক কাজী মো. শহীদ উল্লাহ৷
এদিকে ১৯২৭ সালের বন আইনের ৪১,৪২ ও ৪৬ ধারার অনুকুলে প্রণীত চিটাগাং হিলট্র্যাক্টস ফরেষ্ট ট্রানজিট রুলস ১৯৭৩ এর আলোকে বন বিভাগ কতৃক ইস্যুকৃত ফ্রি পারমিটের বনজদ্রব্যর স্থানান্তরকরন পাশ (টিপি) এর অনুবলে কাঠ বোঝাইকৃত ৬টি ট্রাক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ১মাস যাবত্ বন বিভাগের বিভিন্ন চেক ষ্টেশন ও নির্ধারিত স্থানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতিত কেবল মাত্র বন মন্ত্রীর নির্দেশে কেন আটক রাখা হয়েছে ? সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম জানতে চাইলে, এবিষয়ে বন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ১ হাজার ঘনফুট কাঠের পারমিট দেওয়ার মত বাগান নাই ৷
স্থানীয় বন বিভাগ যে সব জোত পারমিট ইস্যু করছে সে সব পারমিটের অনুকুলে পরিবহন করা হচ্ছে ভারতীয় কাঠ৷ স্থানীয় বন বিভাগ কেবল মাত্র স্থানীয় রাজনৈতিক কারণে ব্যাক্তি মালিকানার অনুকুলে ফ্রি পারমিট ইস্যু করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি সাধন করছে৷
বন মন্ত্রনালয়ের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে একটি চক্র সুকৌশলে ফ্রি পারমিটের কাঠ দেখিয়ে বিভিন্ন বন ও সরকারের সংরক্ষিত বন থেকে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ পাচার করছে৷
এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের ভিতর পার্বত্য অঞ্চলের বন উজার হয়ে যাবে৷
স্থানীয় অধিবাসীরাই হয়তো এক সময় আন্দোলন করবেন গভীর বন জঙ্গল এবং অরন্য ফিরে পাওয়ার জন্য বলেন বন মন্ত্রনালয়ের এই কর্মকর্তা ৷