সোমবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিলেটে দুই দলের সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধসহ আহত শতাধিক
সিলেটে দুই দলের সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধসহ আহত শতাধিক
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (৪ আশ্বিন ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪৪মিঃ) দোকানের সামনে সিএনজি অটোরিকশা রাখার জের ধরে ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিলেটের বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ ২ ঘন্টাব্যাপী উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে প্রায় ৩ ঘন্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল৷
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৩৪ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে৷ এতে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন৷ সংঘর্ষের ঘটনার পুলিশসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন৷ গুরুত্বর আহতদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে৷
সংঘর্ষের পর সিলেট সদর উপজেলাবাসী সুনামগঞ্জগামী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-জ ১১-০৮৪৫) ও একটি লেগুনা (সিলেট-থ ১১-২২৬৪) ভাংচুর করে৷ সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সিলেট সদর উপজেলার আখতার হোসেন, উকিল আলী, মকদ্দুছ আলী, আব্দুল মালিক, বারিক মিয়া এবং বিশ্বনাথ উপজেলার আব্দুশ শহিদ, তারেক আহমদ, আকমল হোসেন, জুয়েল মিয়া, আফজল হোসেন৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে৷
ইটপাটকেল ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সিলেট সদর উপজেলার আহতরা হলেন- মনির মিয়া, নিজাম উদ্দিন, মকদ্দুছ মিয়া, জাহেদ মিয়া, সুহেল মিয়া, মাহবুব মিয়া, আব্দুস সালাম, দিলোয়ার মিয়া, মুছাম উদ্দিন, আজমল হোসেন, মানিক মিয়া, ইউসূফ আলী এবং বিশ্বনাথ উপজেলার আহতরা হলেন- হামিদুর রহমান, মৌরশ আলী, আরশ আলী, মারম্নফ মিয়া, পাভেল আহমদ, সোহেল আহমদ, তামিম আহমদ, জাহেদ মিয়া, তাজুল ইসলাম, শিশু মিয়া, রুহুল আমিন, খসরম্ন মিয়া, মতিন মিয়া, সোহেল মিয়া, মোহন মিয়া, চাদনুর, সুহেল মিয়া, মুন্না, আব্দুল কালাম, হায়দর আলী, মুসাদ্দিক হোসেন, আব্দুল কাহার, রিয়াজুল ইসলাম, আকমল, জাকারিয়া, বশারত আলী, ছাদিকুর রহমান, আলমগীর হোসেন, বাবুল মিয়া, ছাদেক আলী, সোহাগ মিয়া, জাহেদ মিয়া, আল-আমিন, কামরম্নল হোসেন, আব্দুলস্নাহ, আজির উদ্দিন, মক্তার মিয়া, আফাজ আলী, আব্দুল করিম, জাকির, লালসাদ, সুন্দর আলী, রিয়াজুল হক, আব্দুল কাদির, জুনেদ, রপিক মিয়া৷ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আহতরা হলেন- বিশ্বনাথ থানার এসআই হাবিবুর রহমান, শুভ্র সাহা, কনষ্টেবল খালিকুজ্জামান, গোলাম কিবরিয়া, মানিক মিয়া, রানা হোসেন, সালেহ আহমদ প্রমুখ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার বিকেলে লামাকাজী বাজার পয়েন্টে ফার্মেসীর সামনে সিএনজি অটোরিকশা রাখা নিয়ে ফার্মেসীর মালিক সদর উপজেলার হাউসা গ্রামের আখতার হোসেন ও অটোরিক্সা ষ্ট্যান্ডের ম্যানেজার বিশ্বনাথ উপজেলার মির্জোরগাঁও গ্রামের আব্দুশ শহিদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়৷ এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে৷ এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আখতার হোসেনের পক্ষ নিয়ে সদর উপজেলা ও আব্দুশ শহিদের পক্ষ নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার এলাকাবাসীর মধ্যে গত ২ দিন ধরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে৷ ফলে অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে লামাকাজী ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শের পুলিশ মোতায়ের করা হয়৷
১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে উভয় পক্ষ নদীর দুই তীরে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়৷ এক পর্যায়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর কাছে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সমযোতা বৈঠকের প্রস্তাব দেন৷ তাতে বিশ্বনাথবাসীও সাড়া দেন৷ এরপর বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সদর উপজেলাবাসীর কাছে যান৷ উভয় উপজেলার চেয়ারম্যান, উভয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ, রাজনৈতিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সদর উপজেলাবাসীর কাছে আপোষ প্রস্তাব প্রদান করেন৷ উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা চলাকালে সদর উপজেলার বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রত্যাক্ষান করে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর উপর হামলা করতে এমএ খান সেতুর উপর আসেন৷ তাদেরকে প্রতিরোধ করতে ধাওয়া করেন বিশ্বনাথবাসী৷ এসময় প্রায় ২ ঘন্টা উভয় পক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার এক পর্যায়ে বিশ্বনাথবাসীর প্রতিরোধে পিছু হটে সিলেট সদর উপজেলাবাসী৷ এসময় পুলিশ ব্রিজের মধ্যখানে অবস্থান নিয়ে দুই উপজেলাবাসীকে দু’দিকে সড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷
সংঘর্ষের পূর্বে উভয় উপজেলায় অনুষ্ঠিত সমযোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার ফয়ছল মাহমূদ, সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর সার্কেল) ধীরেন্দ্র মহা পাত্র, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মাহবুবুল আলম, বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার, বিশ্বনাথ থানার ওসি মনিরম্নল ইসলাম পিপিএম, গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যৰ সুজাত আলী রফিক, বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক একেএম দুলাল, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নুর উদ্দিন, কান্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী, রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর, খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন, মোগলগাঁও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম টুনু, অলংকারীর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রম্নহেল৷
এদিকে, সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি শানত্ম করতে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক করে সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী৷ এসময় তিনি বলেন, বিশ্বনাথবাসী সব সময় শানত্মির পৰে৷ সিলেটবাসীও চান এলাকার পরিস্থিতি শান্ত থাকুক৷ সমাজের কিছু উশৃংখল ব্যক্তির উসকানীমূলক আচরণের কারণে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ এঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে৷
পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে দাবি করে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে পুলিশ ২০০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৩৪ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে৷ এসময় বিশ্বনাথ থানার দুই এসআই’সহ ৮/৯ জন পুলিশ আহত হয়েছেন৷