শুক্রবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে বাফার সার গোডাউন থেকে ১৯ কোটি টাকার সার উধাও
ঝিনাইদহে বাফার সার গোডাউন থেকে ১৯ কোটি টাকার সার উধাও
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউন থেকে হাজার হাজার বস্তা ইউরিয়া সার গায়ের হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে৷ এই সার কি ভাবে গায়েব হলো তার কোন হিসাব নেই কর্মকর্তাদের কাছে৷ অভিযোগ উঠেছে গায়েব হওয়া এ সব সার যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে রাতের আধারে রিসিভ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আর আনলোড করা হয়নি৷
তবে সার গোডাউনের ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেছেন, ২০১৫/১৬ অর্থ বছরে ৫৪৭ মেট্রিন টন অর্থাত্ ১০ হাজার ৯৪০ বস্তা সারের কোন হদিস নেই৷
যার আন্তর্জাতিক বাজার মুল্য ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা৷ তিনি জানিয়েছেন এই সার তিনি স্টকে কম পেয়েছেন৷ সার গায়েব হওয়ার বিষয়ে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ একেবারেই নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ৷
বাফার গোডাউন সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার গোডাউন থেকে সার সরবরাহ করা হয়৷ বিসিআইসির ২১৫ জন তালিকাভুক্ত ডিলার এই সার নিয়ে থাকেন৷ সার ডিলারদের অভিযোগ বাফার কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কম ও জমাট বাঁধা সার সিরিভ করে থাকেন৷
এ নিয়ে তাদের ভোগানত্মির শেষ নেই৷ সুত্রমতে গত ২৪ জুলাই যশোরের নওয়াপাড়ার বালব ও চট্রগ্রামের নবাব ইন্টার প্রাইজের ওজনে কম সার বাফার ইনচার্জ মাসুদ রানা বুঝে নেন৷
এ নিয়ে ডিলারদের মধ্যে হৈচৈ পড়ে যায়৷ প্রতি বসত্মায় সার কম থাকার কারণে সার ডিলারদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে উক্ত সার আনলোড বন্ধ হয়ে যায়৷
পরে আবারো এই দুই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওজনে কম সার বিশেষ কায়দায় বাফারে ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়৷ আর্থিক সুবিধা নিয়ে ইনচার্জ মাসুদ রানা কম ওজনের সার বুঝে নেন বলে কথিত আছে৷ কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনের ইউরিয়া সার নিয়ে বেপরোয়া অর্থ বানিজ্য করা হচ্ছে বলেও শোনা যায়৷
গোডাউনের ইনচার্জ, হিসাব রক্ষক ও লোড আনলোডের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথ ভাবে এই অর্থ বানিজ্যের সাথে জড়িত থকলেও তাদের কিছুই হয় না৷
তাদের কারণেই কোট কোটি সারের কোন হদিস মিলছে না এমন কথাও উঠেছে৷ অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহে পাঠানো সরগুলো দীর্ঘদিন বন্দরের ঘাটে পড়ে থাকায় সারের ওজন কমে যাওয়ার পাশাপাশি গুনগতমান নষ্ট হয়ে গেছে৷ এসব সারের বসত্মা ফাটা, ছেড়া ও জমাট বাঁধার কারণে ডিলাররা নিতে চান না৷
ফলে কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনে ৩/৪ হাজার বসত্মা জমাট বাঁধা সার পড়ে আছে৷ এই নিম্নমানের সার কৃষকদের মাঝে বিক্রি করা হচ্ছে৷
সমপ্রতি বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল ও পরিচালক আব্দুল হাই কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনে এসে সঠিক ওজন দিয়ে জমাট বাঁধা এ সব সার রিপ্যাক করে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছিলো৷
কিন্তু প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও জমাট বাঁধা সার তেমনই পড়ে আছে৷ সেগুলো রি প্যাক করা হয়নি৷ সরকারের গুরুত্বপুর্ন এই বিভাগটির কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনের দায়িত্বশীলরা দুর্নতি ও চরম অবহেলার পরিচয় দিচ্ছেন৷ তাদের কারণে কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনে এক বিশৃংখল পরিবেশ বিরাজ করছে৷
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনের ইনচার্জ মাসুদ রানা সার সর্ট হওয়ার তথ্য স্বীকার করে জানান, তিনি ৩ মাস হলো এখানে এসেছেন৷ তিনি এসে ৫৪৭ মেট্রিক টন সার কম পেয়েছেন৷
এই সার আগে থেকেই স্টক রেজিষ্টার কম ছিল বলে তিনি জানান৷ জমাট বাঁধা সারের ওজন ঠিক করে রি প্যাক করা বিসিআইসি চেয়ারম্যানের নির্দেশ মুখে পেলেও রিখিত কোন আদেশ আসেনি বলে তিনি জানান৷
ইিনচার্জ মাসুদ রানা আরো বলেন, বালব ও নবাব ইন্টার প্রাইজের সার ওজনে কম ছিল৷ পরে তারা ঠিক করে দিয়েছে৷ বাংলাদেশ ফারটিলাইজার এ্যসোসিয়েশন ঝিনাইদহ শাখার সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমরা শুনেছি বাফার গোডাউনে ৬/৫’শ মেট্রিক টন সার সর্ট রয়েছে৷
এখন সেগুলো কি ভাবে রিকোভারি করবে সেটা বাফার কর্তৃপক্ষের ব্যাপার৷ তবে তিনি অভিযোগ করেন, জমাট বাঁধা ও নিম্নমানের সার ডিলারদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে৷