রবিবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » বাফার গুদামের সার লোপটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
বাফার গুদামের সার লোপটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (১০ আশ্বিন ১৪২৩ বাংলা: বাংলাদেশ সময় বেলা ৩.৪৫মিঃ) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বিসিআইসির বাফার গুদাম থেকে সার লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ এই সার লোপাটের সাথে বাফার গুদামের তত্কালীন ইনচার্জসহ কতিপয় কর্মচারী ও পরিবগন ঠিকাদার জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে৷
এদিকে আসলে কত কোটি টাকার সার লোপাট হয়েছে তা নিয়ে নানা সন্দেহ দানা বেধে উঠেছে ৷ সরকারী হিসেবে ৫৪৭ মেট্রিক টন সারের হিসেব না মেলার কথা বলা হলেও লোপাটের পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করেছেন বাফার গুদামের ইনচার্জ মাসুদ রানা৷
তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, বস্তা গুনলে আরো ৪/৫’শ মেট্রিক টন সার কমতে পারে৷ তার এই হিসেবে সঠিক হলে সর্বমোট ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার লোপাটের ঘটনা ঘটতে পারে৷ যার মুল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ (সরকারী মুল্যে) টাকার বেশী৷ একটি সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে সার বিক্রি করে বিপুল অংকের এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে৷
প্রাথমিক তদন্তে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা মুল্যের ৫৪৭ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে৷
গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, গত ১৮ মে বিসিআইসির অতিরিক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক (বিপনন) মঞ্জুর রেজার নেতৃত্বে ৪ সদস্যর একটি তদন্ত দল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার গুদামে মওজুত ইউরিয়া সার বাস্তব গননা ও ওজন করেন৷
এ সময় ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়ে ৷ যার সরকারী মুল্য প্রায় ১কোটি ৭৬ লাখ টাকা৷ সুত্র মতে বর্তমান মওজুত (১৮ সেপ্টম্বর পর্যন্ত) ৫৩২৭ মেট্রিক টন ৷ এর মধ্যে ৪৫,৫৬০ বসত্মায় (২২৭৮ মেট্রিক টন) ব্যবহার অনুপযোগী কম ওজনের সার রয়েছে ৷
বর্তমান গুদাম ইনচার্জ বলেছেন, সঠিক ভাবে ওজন করা হলে অন্তত আরো ৪ থেকে ৫”শ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি ধরা পড়বে৷ এর আগে ২০০৯ সালের দিকে ২১৩ মেট্রিক টন সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে৷ সব মিলিয়ে প্রায় ১১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার খাতা কলমে থাকলেও গুদামে নেই মর্মে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছেন৷
এদিকে অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসে আরো লোমহর্ষক খবর৷ প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০০৯ সাল থেকে গুদাম থেকে পরিকল্পিত ভাবে সার গায়েব হতে থাকে৷ সে সময় সার কেলেংকারী সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ হয়৷ ২১৩ মেট্রিকটন গায়েব করার খবর সে সময় ফাঁস হয় পড়ে৷
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের জুন মাস পর্যন্ত আত্মসাত্ করা হয় আরো ৫৪৭ দশমিক ৪৯ মিট্রিক টন সার৷ প্রাপ্ত তথ্য মতে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ওই সময়ে আবুল কালাম আজাদ (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় কমর্রত), ফজর আলী (বর্তমানে ঘোড়াশাল সার কারখানায় হিসাব বিভাগে কর্মরত), জালাল উদ্দিন ও একাউন্টস বিভাগের জিয়াউর রহমান অত্র স্টেশনে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে লোমহর্ষক সার কেলেংকারীর এ ঘটনা ঘটে৷
জানা গেছে, বিসিআইসি’র উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ বিষয়টি টের পেয়ে ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর সারা দেশের ২৪ টি বাফার গুদামে সংরক্ষিত ইউরিয়া সার বাসত্মব গননার জন্য প্রতি জেলায় একজন করে নিবার্হী ম্যাজিজষ্ট্রেটকে প্রধান করে ৪ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়৷
অজ্ঞাত কারনে ওই কমিটি তাদের কার্যক্রম করতে পারেনি৷ এতে সংঘবদ্ধ চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং পরিকল্পতি ভাবে সার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে থাকে৷
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় চলতি বছরের ১৮ মে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ কালীগঞ্জ বাফার গুদামের মজুদ নিরীক্ষন করেন৷ এ সময় ফাঁস হয়ে পড়ে প্রকৃত আত্মসাতের খবর৷ অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কতিপয় পরিবহণ ঠিকারদার প্রতিষ্ঠান ও চিহ্নিত কয়েক জন অসত্ সার ডিলার চক্রটির সাথে জড়িত৷
ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় নিয়োগ করা ২১৫ জন তালিকাভুক্ত সার ডিলার রয়েছেন৷ এরা অত্র গুদাম থেকে সার সরবরাহ নিয়ে থাকেন৷ ডিলারদের অভিযোগ ঘুষ না দিলে নিন্মমানের জমাট বাধা সার দেয়া হয় তাদের৷ সেই সাথে সারের বসত্মায় ওজন কম দেয়া হয়৷
সুত্র মতে ডিলাদের কাছে প্রতিবসত্মা ইউরিয়া সারের দাম নেয়া হয় মাত্র ৭০০ টাকা৷ তৃণমুলে সেই সার সর্বচ্চ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়৷ আনর্ত্মজাতিক বাজারে প্রতিটন ইউরিয়ার মুল্য কমপক্ষে ৩৪ হাজার টাকা৷ সেই হিসেবে প্রতিটন সারে সরকার কুড়ি হাজার টাকার বেশী করে ভুর্তুকি দিয়ে থাকে৷
এই রিপোর্ট লেখার সময় ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক ও জেলা সার বরাদ্দ কমিটির সভাপতি মো: মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি শক্ত কমিটি গঠন করার প্রসত্মুতি চলছে৷
ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী শাহনাজ পারভিন অফিসার গুদাম পরিদর্শন করেছেন বলে জেলা প্রশাসক জানান৷