বৃহস্পতিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট
দীপানন্দ ভিক্ষু :: বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ মাইনোরিটি বুড্ডিষ্ট এসোসিয়েশনের আহ্বান।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। হাজার বছর ধরে বৌদ্ধরা এ ভূখন্ডে বসবাস করে আসছে। কুমিল্লা, ময়নামতি, বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ অনেক জায়গায় বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষ বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। মাটি খনন করলেই বৌদ্ধ পূরাকীর্তি এখনও এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্মৃতি বহন করে।
তাছাড়া এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বৌদ্ধ জনসাধারণ ও বৌদ্ধ ভিক্ষুর অসামান্য অবদান রয়েছে। সম্প্রতি কিছু ঘটনা সেই ঐতিহ্য কালিমা লিপ্ত করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বৌদ্ধদের একমাত্র মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মাইনোরিটি বুড্ডিষ্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থাপন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত ২০১২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর পরিকল্পিত ভাবে একটি তুচ্ছ সাজানো ঘটনা ফেইসবুকের মাধ্যমে একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে।
এ অজুহাতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর কতিপয় দুর্বৃত্তরা রামুসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নি সংযোগ, হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। যে ধর্মে সর্বজীবের প্রতি অহিংসা, মৈত্রী, করুণা, শান্তি সম্প্রীতি ও মানব প্রেমের বাণী ধারণ ও বহন করে সেই ধর্মের ধর্মীয় উপসনালয়ে ও বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা, ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায় যা এদেশের শান্তি প্রিয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হৃদয়ে দুর্বিসহ ক্ষত চিহ্নের সৃষ্টি করেছে।
বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্বড়িৎ হস্তক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ বৌদ্ধ বিহার, বসতবাড়ী ও অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিপূরণসহ পূন: নির্মাণে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। এই জন্যে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। কিন্তু সেই সাথে উল্লেখ করতে চাই এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার ৪ (চার) বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও অদ্যাবধি ঘটনার সাথে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের অনেকে এখনও গ্রেফতার হয়নি এমনকি বিচারিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পরপর কিছু লোক দেখানো তৎপরতা দেখা গেলেও ঘটনার মূল নায়কদের এখনও গ্রেফতার পূর্বক বিচারের আওতায় আনা হয়নি। আর এ কারণে উল্লেখিত মামলার এজাহার ভূক্ত আসামীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলার বাদীকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় অনতি বিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানানো হচ্ছে। আমরা জানি, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মানুষ স্ব- স্ব ধর্ম যথার্থ ভাবে পালন করে আসছে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্টের জন্য একটি মহল সর্বদা তৎপর রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে রামুর ঘটনার মত পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাই আমরা মনে করেছিলাম রামু ঘটনার পর বৌদ্ধ
সম্প্রদায়ের উপর আর কোন আঘাত আসবেনা। কিন্তু দেখা গেল বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হল এবং বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধদের সম্পত্তি, ঘরবাড়ি, বৌদ্ধ শ্মশান জবর দখল করতে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তরা সদা তৎপর থাকে। তাই আবারো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে মোদের উদাত্ত আহ্বান এবং সচেতন দেশবাসীর প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ সু-দৃষ্টি রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সকল সুধীজনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।
বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক।