বৃহস্পতিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » পাকিস্তান আজ গভীর রাতেই গোলাবর্ষণ শুরু করতে পারে
পাকিস্তান আজ গভীর রাতেই গোলাবর্ষণ শুরু করতে পারে
অনলাইন ডেস্ক :: আচমকা ঘা খেয়ে টালমাটাল শত্রুরা পাল্টা ঘা দিয়ে আনন্দে উদ্বাহু হতে পারে! ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’দের মনোবল বাড়াতে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান আজ, বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই নিয়ন্ত্রণরেখায় অধিকৃত কাশ্মীর থেকে শুরু করতে পারে লাগাতার গোলাবর্ষণ। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপরের আকাশ চিড়ে দিতে পারে হানাদার পাক বোমারু বিমান। ও-পারে ইতিমধ্যেই সেই তোড়জোড়, প্রস্তুতির খবর পেয়ে সব আঁটঘাট বেঁধেই তৈরি হয়ে আছে ভারত। স্থলে শোনা যাচ্ছে ভারতীয় সেনা জওয়ানের বুটের গটগট আওয়াজ। তৈরি বফর্স কামান। অন্তরীক্ষে চক্কর মারছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান। পাকিস্তানের আকাশে আজ বৃসপতিবার দুপুর থেকেই চক্কর মারতে দেখা গিয়েছে হানাদার বোমারু বিমানগুলিকে। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় উরি, কুপওয়ারা আর পুঞ্চ সেক্টরগুলি এখন থরথর করে কাঁপছে উত্তেজনায়। উত্তেজনায় কাঁপছে রাজৌরি সেক্টরও। ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে নৌশেরায়। আর এস পুরায়। ওই সেক্টরগুলিতে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা গ্রামবাসীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এলাকা ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে। সরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে গবাদি পশু। ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে সাম্বা ও কাহুটা গ্রামে। অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে পঞ্জাব সীমান্তের গ্রামগুলির বাসিন্দাদেরও। ওই সব এলাকার স্কুলগুলিকেও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। স্কুলগুলিতে আজ থেকেই ‘ছুটি’ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্জাবের ৬টি জেলা ভারত-পাক আন্তর্জাতিক সীমান্তের লাগোয়া। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল রাজ্য প্রশাসনকে যে কোনও রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। রাজ্যের ফিরোজপুর, ফাজিলকা, অমৃতসর, তরণ তারণ, গুরুদাসপুর ও পঠানকোট জেলাগুলিতে জারি করা হয়েছে ‘হাই অ্যালার্ট’। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বাদলকে সীমান্তের গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা একশো শতাংশ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজনাথ।
সরানো হচ্ছে পঞ্জাবের গ্রামবাসীদের
শত্রু যেহেতু পাকিস্তান, তাই গুজরাত আর পঞ্জাব সীমান্তের কথা মাথায় রেখে জলেও নজর রাখছে ভারতীয় নৌবাহিনী। গভীর সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীদের তড়িঘড়ি ফিরে আসতে বলা হয়েছে উপকূলে। আপাতত ‘ঘোর শত্রু’ প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের ‘মরা-বাঁচার প্রত্যাঘাতে’র জন্য জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে তৈরি হয়ে রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, সামান্তরক্ষী বাহিনী, আধা সমারিক বাহিনী ও উপকূল রক্ষী বাহিনী। গত কাল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ একই সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাপাঁচেকের অভিযানে নেমেছিল ভারতীয় পদাতিক ও বিমানবাহিনী। নেমেছিল অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক। তা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত দু’/তিন কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে আচমকা মিনিট চল্লিশেকের হামলায় ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল জঙ্গিদের সাত-সাতটি দুর্গম, দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। সজোরে আঘাত হেনেছিল কুপওয়ারা আর পুঞ্চ সেক্টরের অন্তত পাঁচ/ছ’টি নির্ভুল নিশানায়। প্রায় আলোর গতিতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শত্রু নিকেশ হয়ে গিয়েছিল সমূলে। আর তার পর কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই নিজেদের ডেরায় ফিরে এসেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। উরিতে পাক সেনা হামলার ঠিক ১১ দিন পর।
সরানো হচ্ছে পঞ্জাবের গ্রামবাসীদের
আন্তর্জাতিক সীমান্তে মোতায়েন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সবক’টি ইউনিটকেই ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে জম্মু, কাশ্মীর, পঞ্জাব, রাজস্থান আর গুজরাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ‘যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি’ নিতে বলা হয়েছে। বিএসএফের ওই আউটপোস্টগুলিতে জওয়ানদের সংখ্যা তিন/চার গুণ বাড়ানো তো হয়েছেই, এমনকী, বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সকেও আপৎকালীন ভিত্তিতে ওই উত্তেজনাপ্রবণ সীমান্তগুলিতে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
সম্ভাব্য হানাদারি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি ‘কূটনেতিক লড়াই’ও শুরু করে দিয়েছে ভারত। বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী দেশ সহ ২২টি রাষ্ট্রের দূতদের সঙ্গে দেখা করেছেন। পাকিস্তানের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে ভারত ইতিমধ্যেই ‘সার্ক’ বৈঠকে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ, ভূটান ও আফগানিস্তানও এ ব্যাপারে ভারতের পথে হাঁটারই সিদ্দান্ত নিয়েছে। আবার ‘ঘরে’ও সবাইকে নিয়ে চলার পথে হেঁটেছে মোদী সরকার। আজ সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সূত্র:আনন্দবাজার পত্রিকা