শনিবার ● ১ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার : কাউখালী পার্শ্ববতী রাঙুনীয়াতে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে
স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার : কাউখালী পার্শ্ববতী রাঙুনীয়াতে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে
মো. ওমর ফারুক, কাউখালী :: (১৬ আশ্বিন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৫৪মি.) রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলায় এবং পার্শ্ববতী রাঙুনীয়া উপজেলার যত্র তত্র ইছামতী নদী থেকে দীর্ঘ দিন যাবত্ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্রের সহায়তায় অবৈধ ভাবে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রশাসন যেন এখানে নির্বিকার ৷
জানা যায়, কাউখালী উপজেলার পোয়াপাড়া, তারাবুনিয়া, রাঙীপাড়া, উপজেলা সদর কবরস্থানের সামনে, কাশখালী, পিডিবি’র পিছনে পার্শ্ববতী রাঙুনীয়ার বেতছড়ি, কাউখালী রানীরহাট সড়কের ইছামতি নদীর দু’পাশে সেগুন বাগান রানীরহাট ইছামতি ব্রীজ সংলগ্ন, ঠান্ডাছড়ি পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন নদী থেকে দীর্ঘদিন যাবত্ বেশ কিছু সংঘবদ্ধ চক্রের সহায়তায় অবৈধভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে বালু তুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ৷ এসব বালু প্রতিদিন ট্রাকে, জীপে করে রাঙামাটি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় ৷ প্রতি ফুট বালুর দাম ১৫-২০টাকা করে নেয়া হয় ৷ প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে দিনে এবং রাতে শত শত জীপ, ট্রাকে করে কোটি কোটি টাকার বালু দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছে ৷ এরই সুযোগে সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নিচ্ছেন বিশাল অংকের টাকা ৷ হয়ে উঠছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ ৷ গড়ে তুলছেন বালু তোলার অবৈধ সিন্ডিকেট ৷ যেখানে রয়েছে সরকার দলীয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সমম্বয়ে গঠিত বালু সিন্ডিকেট ৷ এসব সিন্ডিকেট গুলি বালু মহলগুলি নিয়ন্ত্রণ করে চলছেন ৷
সুত্র জানায়, কাউখালী উপজেলার এবং কাউখালী উপজেলার একদম পার্শ্ববতী উপজেলা রাঙুনীয়ার এসব এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত্ বেশ কিছু নামধারী সরকার দলীয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেয়া সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় এসব সিন্ডিকেট প্রশাসনকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে অবাধে এসব বালু তুলে বিক্রি করে চলছেন ৷
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাউখালী উপজেলার সদর কবরস্থানের সামনে, পোয়াপাড়া, রাঙীপাড়া পার্শ্ববতী উপজেলা রাঙুনীয়ার বেতছড়ি সেগুন বাগান রানীর হাট ব্রিজ সংলগ্ন বালু তুলে পাহাড় সমতুল্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে যেন বালুর পাহাড় দেখার যেন কেউ নেই ৷
এ ব্যাপারে কাউখালীর বালু উত্তোলনকারী বালু ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, আমরা সরকারদলীয় লোক টুকটাক বালুর ব্যাবসা করি বালু তোলার কারনে কবরস্থানের ক্ষতি হওয়ায় আমরা এখন পিডিবি’র পিছনে বালু তুলি যাতে কবরস্থানের যেন কোন ক্ষতি না হয় ৷ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সরকারের প্রশাসন হতে বালু তোলার কোন অনুমতি পাইনি ঠিক কিন্তু কি করবো বলেন ৷ রাঙুনীয়ার সেগুন বাগান এলাকার বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের সদস্য মো. সাজ্জাদ বলেন, আমরা বালু তুলি এটা সত্য এখানে বালু সিন্ডিকেটে অনেক বড় বড় নেতা কর্মীরা জড়িত ৷ তাকে প্রশ্ন করা হলে বালু তোলা কি বৈধ নাকি অবৈধ সে চুপ করে থাকেন কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ৷
অন্য দিকে এসব বালু উত্তলনের সরকারের কোন অনুমতি না থাকার কারনে সরকারকে এসব বালু সিন্ডিকেটের কারনে হারাতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ৷ দীর্ঘদিন যাবত্ এসব অবৈধ বালু উত্তোলনের কারনে কাউখালী উপজেলা ইছামতি নদীর দু’পাশে কাশখালী, রাঙীপাড়া, উপজেলা সদর, পোয়াপাড়া বেতছড়ি, কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে এবং পার্শ্ববতী রাঙুনীয়ার ইসলামপুর, রাজানগর, রানীর হাট বাজার, বগাবিলী উচ্চ বিদ্যালয়, বগাবিলী মাদ্রাসা মসজিদসহ মানুষের বাড়ি ঘরের ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ৷ সাধারনত ইছামতি নদীর দু’পাশের পরিবার গুলি বেশি ভুক্ত ভুগি ৷ ইছামতি নদীর পাশের বাসিন্দা জয়নাব বিবি বলেন, কি বলব দুঃখের কথা নদী থেকে মেশিন লাগিয়ে বালু তোলার কারনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা সাধারন গরীবসহ নদীর পাশে প্রতিটি পরিবার কারন বর্ষার সময় নদীর ভাঙনের কারনে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হই ৷ এ ব্যাপারে কাউকে কিছু জানিয়ে কোন ফল পাইনি ৷ বরং উল্টো আমাদেরকে ভয় ভীতি দেখানো হয় ৷ আমরা সম্পুর্ন অসহায় ৷ এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মো. মাহবুব বলেন, যদিও বালু তোলা আইনে নিষিদ্ধ ৷ কিন্তু কিছু সংঘবদ্ধ চক্র আইনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে আইনকে তোয়াক্কা না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু তুলার কাজে লিপ্ত ৷ যা কিনা সম্পুর্ন বে আইনি ৷
যে হারে দিন দিন কাউখালী উপজেলার এবং পার্শ্ববতী রাঙুনীয়া উপজেলার ইছামতি নদী থেকে মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে ইছামতি নদীর দু’পাশে মসজিদ, মন্দির,মাদ্রসা, স্কুল, বাড়ি ঘর ক্ষেত খামারের বর্ষা মৌসুমে যেভাবে নদীর দুপাশে ভেংগে যাচ্ছে তাতে ভাংগন রোধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করাার মতো থাকবেনা ৷ এখনই যদি সরকারের প্রশাসন এবং উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করে তা হলে অদুর ভবিষ্যতে এই দুই উপজেলার ইছামতি নদীর দু’পাশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর বর্ষায় নদী গর্বে বিলিন হয়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন উভয় উপজেলার সচেতন মহল ৷
দ্রুত এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় জনসাধারন ৷