মঙ্গলবার ● ৪ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » নবীগঞ্জে একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে ১০ গ্রাম
নবীগঞ্জে একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে ১০ গ্রাম
নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: একটি সেতুর অভাবে নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের লহরজপুর, খলিলপুর, সৈয়দাবাদসহ ১০টি গ্রামের লোকজনকে অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ অথচ প্রতিবারই প্রার্থীরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুত দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হন৷ নির্বাচিত হওয়ার পর সেই প্রতিশ্রুতি আর মনে থাকে না৷ যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলছে৷ সেতুর অভাবে ওই গ্রামগুলোর প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে৷ বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷ ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুল-কলেজেও যাতায়াত করে না৷ এছাড়া রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে স্বজনদের কষ্ট তো আছেই৷ লহরজপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ সাবু মিয়া জানান, এ সাঁকো দিয়ে প্রায় ১০টি গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন৷ অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সবাইকে যাতায়াত করতে হয়৷ কখন যে এটি ভেঙে পড়ে৷ ভয়ও হয়৷ সব সময়ই এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার নির্বাচন এলে এখানে সেতু করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না৷ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের দুঃখ কেউ দেখে না৷ স্কুলছাত্র শিবলু জানায়, সাঁকোর অবস্থা নড়বড়ে৷ তাই ভয়ে বই নিয়ে স্কুলে যেতে মন চায় না৷ কৃষক ময়না মিয়া বলেন, এখানকার উত্পাদিত ধান, শাক, সবজি কোনো কিছুই বাজারে নিয়ে যেতে পারি না একটি সেতুর অভাবে৷
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর একটি শাখা ‘শাখা বরাক’ নদী৷ এটি নবীগঞ্জ, বাহুবল, হবিগঞ্জ সদর ও বানিয়াচং উপজেলার হাওর দিয়ে বয়ে গেছে৷ এ নদীটি যেমন হাওরবাসীর সুখের সাথী তেমনি এ নদীর কারণে দুঃখেরও অন্ত নেই৷ এ নদীর বেশির ভাগ অংশই পড়েছে নবীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায়৷ যদিও বানিয়াচংবাসীর যাতায়াতে এ নদীর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি৷ কিন্তু নবীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামকে নানাভাবে ঘিরে রেখেছে এ নদী৷ তেমনি ওই উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নবাসীরও সুখ-দুঃখেরও সাথী হয়ে আছে এ নদীটি৷ নদীর পূর্বপাড় দিয়ে রয়েছে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়ক৷ আর পশ্চিমে রয়েছে লহরজপুর, খলিলপুর, সৈয়দাবাদসহ অন্তত ১০টি গ্রাম৷ গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের শাখা বরাক নদী পেরিয়েই জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়৷ শিক্ষার্থীদেরও প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে যেতে হয়৷ তাই যাতায়াতের জন্য এ এলাকার বাসিন্দারা নদীর ওপর বাঁশ-কাঠ দিয়ে নির্মাণ করেছেন একটি সাঁকো৷ অন্যথায় তাদের হাওরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শ্রীমতপুর গ্রামে নির্মিত পাকা সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়৷ এদিকে গ্রামের পাশেই রয়েছে জেলার বৃহত্ হাওর ঘুঙ্গিয়াজুরী৷ নদীতে সেতু না থাকায় ওই হাওরে উত্পাদিত ধান নৌকা দিয়ে বহন করতে হয়৷ এতে সময়, শ্রমিকের মজুরি ও দুর্ভোগ বাড়ছে৷ তাই জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাগবে সেখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা৷