বৃহস্পতিবার ● ৬ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » টাম্পাকোর ৩ কোটি টাকার ওয়েস্টেজ চুরির অভিযোগে মামলা
টাম্পাকোর ৩ কোটি টাকার ওয়েস্টেজ চুরির অভিযোগে মামলা
আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২১ আশ্বিন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.১৩মি.) ধ্বংসপ্রাপ্ত টাম্পাকোর তিন কোটি টাকার মালামাল বা ওয়েস্টেজ লুটপাটের অভিযোগে টঙ্গী মডেল থানায় ৪ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে মামলা হয়েছে৷
পুলিশ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের মালিকানাধীন একটি কারখানার বাউন্ডারির ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ মালামাল জব্দ করেছে৷ একই সাথে আরো তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়ে টাম্পাকোর ধ্বংসপ্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ মালামালের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ৷ এসব ঘটনায় প্রভাবশালী মহল জড়িত বলে জানা গেছে৷ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করতে পারেনি পুলিশ৷
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, লাশ উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে সেনা প্রকৌশলীরা ভারী যন্ত্রপাতির সাহায্যে টাম্পাকোর ধ্বংসাবশেষ অন্যত্র সরিয়ে রাখছিলেন৷ এ সময় সেখান থেকে টাম্পাকোর মূল্যবান মালামাল লুটে নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা৷ এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে টাম্পাকোর ভেতর থেকেও মালামাল লুট হয়৷ এসব মালামালের মধ্যে ছিল কারখানার ধ্বংসপ্রাপ্ত মেশিনপত্র, বিভিন্ন অবকাঠামোর রড, ইট, প্লাস্টিক দানা বা বিভিন্ন কাঁচামাল, কাগজের রুল, সেনিটারি ফিটিংস এবং লোহাসহ বিভিন্ন মূল্যবান দাতব পদার্থ৷ টাম্পাকোর উদ্ধারকাজে সেনা প্রকৌশল বিভাগকে সহযোগিতা করছে দমকল বাহিনী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন৷ সিটি করপোরেশন প্রদর্শিত নির্ধারিত তিনটি স্থানে টাম্পাকোর ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাখা হচ্ছিল৷ সবচেয়ে বেশি মালামাল বা ওয়েস্টেজ রাখা হয় স্থানীয় পাগাড় এলাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের একটি কারখানার সামনে আবাসন প্রকল্পের উন্মুক্ত প্লটে৷ পরে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চাচা পরিচয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসগর হাজী দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে এসব মালামাল নিজের বাড়ির ভেতর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানার বাউন্ডারির ভেতর স্থানান্তর করেন৷ সেখান থেকে এসব মালামাল টঙ্গীর পুরাতন লৌহ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়৷
অপর দিকে নিমতলি রেলগেট সংলগ্ন টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের পাশে এবং আমতলি রেল জংশন এলাকার খালি জায়গায়ও টাম্পাকোর ধ্বংসাবশেষ রাখা হয়৷ নিমতলির মালামালও প্রভাবশালীরা অন্যত্র বিক্রি করে দেন৷ ক্রেতারা অধিকাংশ মালামাল সেখান থেকে ইতোমধ্যে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন৷ আমতলির মালামাল বিক্রি করা হলেও ক্রেতারা ভারী যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে না পারায় এখনো এসব মালামাল সেখান থেকে সরাতে পারেননি৷ এ অবস্থায় টাম্পাকোর একজন নিরাপত্তা প্রহরী ওয়াজেদ মোল্লা লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার এবং কারখানার মূল্যবান সম্পদ রক্ষার্থে মঙ্গলবার রাতে টঙ্গী মডেল থানায় একটি মামলা নং-৫ দায়ের করেন৷
মামলায় তিন কোটি টাকার মালামাল চুরির অভিযোগ আনা হলেও এজাহারে সুনির্দিষ্ট করে কারোর নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে টঙ্গী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ তালুকদার জানান৷
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টঙ্গী মডেল থানার ওসি (অপারেশন) আলমগীর হোসেন জানান, কারখানায় উদ্ধার অভিযান চলাকালে চোরের দল কৌশলে কারখানার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়৷ এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে৷ মামলার তদন্ত চলছে৷ মালামাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের গোডাউন থেকে জব্দ করা হয়েছে৷ এ চক্রের সাথে যারা জড়িত তদন্ত সােেপ তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে৷
এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আসাদুর রহমান কিরনের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মালামালগুলো চুরি হয়নি৷ এগুলো রাখার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আমার নিজস্ব জায়গায় রাখা হয়েছিল৷ বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া সেনাবাহিনী এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কারখানা কর্তৃপরে হেফাজতে মালামালগুলো ফেরত দেয়া হচ্ছে৷
বুধবার বিকেলে পাগাড় সোসাইটি মাঠ এলাকায় ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানার সামনে গিয়ে দেখা গেছে, টঙ্গী বাজার পুরাতন লৌহ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নূরু টাম্পাকোর মালামাল ক্রয়ের জন্য আসগর হাজীর এক প্রতিনিধির সাথে দর কষাকষি করছেন৷
স্থানীয়রা জানান, আসগর হাজী এসব মালামালের দায়িত্বে আছেন৷ মঙ্গলবার রাতে টাম্পাকোর মালামাল উদ্ধারে পুলিশি অভিযানের পর আসগর হাজী পলাতক রয়েছেন৷
এ ব্যাপারে আসগর হাজীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার কোনো দোষ নেই৷ মেয়রের নির্দেশে আমি মালামাল সরিয়ে রেখেছি এবং লেবারের বিল পরিশোধ করেছি৷
উল্লেখ্য, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকায় সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ) আসনের সাবেক দুইবারের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডঃ সৈয়দ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন টাম্পাকো ফয়েল কারখানায় ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়৷ এতে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভবনের তিনটি ধসে পড়ে৷ ঘটনার পর একটানা দীর্ঘ ৪ দিন ফায়ার সাভির্সের ২৫টি ইউনিট রাতদিন চেষ্টা চালিয়ে ওই কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে৷ আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন৷ এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আহত হয়েছেন ৭০/৮০ জন৷ গুরুতর আহতরা এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন৷ এ ছাড়া সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া ৮টি লাশ ডিএনএ টেস্টের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে৷ পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এই ৮ লাশসহ এখনো নিখোঁজ আছেন ৯ জন৷ লাশের সন্ধ্যানে টাম্পাকোতে সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে৷