রবিবার ● ৯ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » অদ্ভুত জঙ্গি আতঙ্কে বাংলাদেশ
অদ্ভুত জঙ্গি আতঙ্কে বাংলাদেশ
সিরাজী এম আর মোস্তাক :: জঙ্গি কি অদ্ভুত হয়? বাংলাদেশে তাই হয়েছে৷ দেশের সর্বত্র জঙ্গি বিরোধী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে৷ যেন জঙ্গি এক মহামারি৷ ভারত উপ-মহাদেশের কয়েকটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও জঙ্গি নেই৷ সবাই চেনে টেরোরিষ্ট, তালেবান, আলকায়েদা, আই এস, মিলিট্যান্ট ইত্যাদি৷ ‘জঙ্গি’ ফারসি শব্দ৷ মানে যোদ্ধা৷ যিনি জঙ্গে লড়াই করেন, তিনি জঙ্গি৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে এদেশ ছিল জঙ্গ বা যুদ্ধক্ষেত্র৷ পাক হানাদার বাহিনী এদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকে জঙ্গি নাম দিয়েছিল৷ তারা সবাইকে জঙ্গি হিসেবে সন্দেহ করতো৷ তা থেকে কৃষক, শ্রমিক এমনকি নারীদেরও রেহাই ছিলনা৷ হানাদাররা নির্মমভাবে ত্রিশ লাখ জঙ্গি হত্যা ও দুই লাখ নারীর সম্বম কেড়েছিল৷ বর্তমানে প্রচলিত দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও কোটায় উক্ত ত্রিশ লাখ জঙ্গি শহীদেরা নেই৷ তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়৷ তারা ছিল অদ্ভুত জঙ্গি৷ স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর পর বাংলাদেশে আবারো জঙ্গি হত্যা শুরু হয়েছে৷ এরা কেমন অদ্ভুত জঙ্গি, আসুন দেখা যাক৷
এটি লেখার সময় ঘটল অদ্ভুত জঙ্গি ঘটনা৷ দৈনিক যুগানত্মর ই-পত্রিকার উদ্ধৃতি দ্রষ্টব্য- “সাভার মডেল থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে যুবদল নেতা শাহা আলম নয়নকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসা থেকে আটক করে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস, আই) তম্ময় ও আহসান৷ পরে শনিবার ভোর রাতে সাভারের বিরুলিয়ায় কৃষিবিদ নার্সারির পাশে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আহত হন তিনি৷ পরে পুলিশ তাকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নঙ্ েভর্তি করলে কর্তব্যরত পুলিশ তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷ ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে৷” (দৈনিক যুগান্তর ই-পত্রিকা. তারিখ-০১/১০/২০১৬ইং)৷
উলেস্নখিত ঘটনায় স্পষ্ট হয় যে, পুলিশ আটক শাহা আলম নয়নকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে একটি বন্দুকযুদ্ধ মোকাবেলা করেন৷ যাদের সাথে পুলিশের গোলাগুলি হয়, তাদের কেউই আহত, নিহত বা আটক হয়নি৷ উল্টো পুলিশের নিরাপত্তায় থাকা ব্যক্তিটি প্রাণ হারিয়েছে৷ এতে প্রমাণ হয় যে, দেশে অনেক শক্তিশালী জঙ্গি আছে৷ তারা পুলিশকে হটিয়ে নিরাপত্তায় থাকা ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারে৷ মাদারিপুরে নিহত জঙ্গি ফাহিম ঠিক এভাবেই রিমান্ডে ও হাতকড়া পরা অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারায়৷ পুলিশ বাহিনী প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠির সাথে বন্দুকযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন আর একে একে অসংখ্য অসহায় বন্দি নাগরিকের প্রাণ হারাচ্ছেন৷ যেমন, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় “আইন ও সালিশ কেন্দ্রের” প্রতিবেদনে উল্লেখ হয়েছে যে, মাত্র নয় মাসে হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে নিহত ১৫০ জন৷ (দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ-০১/১০/২০১৬ ইং, পৃষ্ঠা-৪)৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে অবশ্যই এর দায় বহন করতে হবে৷
গত ১ জুলাই, ২০১৬ তারিখে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরায় একইরকম জঙ্গি হামলা হয়েছিল৷ তাতে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ আটাশজন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছিল৷ নিহতদের বেশিরভাগ ছিল বিদেশি নাগরিক৷ তাই বিষয়টি বিশ্বব্যাপী প্রচার হয়েছিল৷ মাত্র ৬/৮ জঙ্গির কাছে দেশের লৰাধিক প্রশাসন লান্থিত হয়েছিল৷ ঘটনা ছিল এরকম- জঙ্গিরা আক্রমণের পরপরই পুলিশ পাল্টা অভিযান চালায়৷ জঙ্গিদের আক্রমণে পুলিশবাহিনী হতাহতের শিকার হয় ও পিছু হটে৷ পরে পুলিশ ও বিজিবি সমন্বয়ে শক্ত পাহাড়া গড়ে তোলে৷ তারা মিডিয়া কর্মীদেরকে তথ্য সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা দেয়৷ তারপর সম্মিলিত সামরিক অভিযানের লক্ষ সকাল পর্যন্ত বিরতি ঘোষণা করে৷ এসময় হোটেলের ভেতরে জঙ্গিরাও অদ্ভুত নিরবতা দেখায়৷ তারা নিরবে বিশজনকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ অবশেষে জঙ্গিরা রক্তসিক্ত মারণাস্ত্র হাতে হোটেলের রক্তাক্ত মেঝেতে লাশের বিদঘুটে গন্ধেই নিসত্মব্ধ রাত কাটায়৷ পরদিন সকাল ৭.৪০-এ সামরিক অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ড’ শুরু হলে, আবারো প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ ব্যাপক গোলাগুলি শেষে তারা সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারায়৷ সফল অপারেশন শেষে সেনাবাহিনী ছাবি্বশটি লাশ উদ্ধার করে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, কথিত সম্বানত্ম ঘরের জঙ্গিরা দীর্ঘ আটঘন্টা মারণাস্ত্র নিয়ে বিদঘুটে পরিবেশে চুপটি মেরে থাকলো কি করে? জঙ্গিদের এমন অদ্ভুত আচরন কিভাবে সম্ভব?
পরদিন জঙ্গিদের ছবি প্রকাশ হয়৷ উল্লেখ হয় যে, তারা মাদ্রাসা-মক্তব বা ইসলাম পড়ুয়া নয়৷ তারা ইংরেজি মিডিয়াতে পড়ুয়া, সম্বানত্ম ঘরের সনত্মান৷ তারা বহু আগেই পরিবার থেকে নির্খোজ ছিল৷ অর্থাত্ তারা কি নিহত শাহা আলম নয়নের মতো আগেই আটক হয়েছিল? উক্ত ঘটনার পর দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়৷ সবাই জঙ্গি বিরোধী সমাবেশে যোগ দেয়৷ এমনকি বিএনপি-জামাতও জঙ্গিবিরোধী বুলি আওড়ায়৷ ফলাফল শুন্যই থেকে যায়৷ এখনও দেশের কেউ নিরাপদ নয়৷ আসলে এগুলো জঙ্গিবাদ নয়, অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করাই এর লৰ্য৷ এজন্য দরকার-
৭১ এর লাখো শহীদের পরিবার,
গর্জে ওঠো আরেক বার৷
এদেশ নয় কারো পিতার,
ষোল কোটি বাংলাদেশী সবার৷
তবেই ভয়-আতঙ্ক জঙ্গিবাদ,
হবেই হবে নিপাত৷
লেখক এ্যাডভোকেট, ঢাকা ৷
[email protected]