মঙ্গলবার ● ১৮ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিলেটের বড়লেখায় চলছে বেআইনী ভাবে পাহাড় কাটার উৎসব
সিলেটের বড়লেখায় চলছে বেআইনী ভাবে পাহাড় কাটার উৎসব
সিলেট জেলা প্রতিনিধি :: (৩ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৪৫মি.) সিলেটের বড়লেখায় উপজেলায় টিলা কাটার উৎসব চলছে, যার ফলে ঘটতে পারে মারাত্তক পরিবেশ বিপর্যয়।
পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় উৎসব চলছে পাহাড়-টিলা কাটার। আর প্রশাসন নীরব দর্শক থাকবে না তো, কি আর করবে? কেননা সর্ষেই যে ভূত থাকে! তারই প্রমাণ পাওয়া গেলো এখানে। সরকারি অডিটরিয়ামের ভিটা ভরাট করা হচ্ছে বিপন্ন বনাঞ্চল ও পাহাড়-টিলার মাটি কেটে। সম্প্রতি একটি টিলা কাটাঁর সময় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে স্থানীয় প্রশাসন। তারা বলছে, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করেও থামানো যাচ্ছে না পাহাড় টিলা কাটা। কিন্তু যেখানে উৎসব চলছে সেখানে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার গল্প বেসুরো-ই লাগে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০৬ এর উপধারা ‘খ’ অনুযায়ী পাহাড়-টিলা কাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অসাধু চক্র প্রাকৃতিক টিলার মাটি কেটে বিক্রি করছে। আর পাহাড়ি টিলার মাটি বিক্রি করে আঙ্গুল ফলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে অনেকে। স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য টিলাকাটা রোধে আগামীতে অর্থদ- নয়, কারাদন্ডের চিন্তা-ভাবনা করছে। আর প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে জেল খাটবে নিরীহ চালক, পার পেয়ে যাবে টিলা কেটে বনাঞ্চল ধ্বংসকারীরা-এমনটি-ই মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। অব্যাহত টিলা কাটার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়ের সবুজ বনাঞ্চল। আবাসস্থল হারাচ্ছে বন্যপ্রাণি। অতিবর্ষণে ভূমিধ্বসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। হাতি, বাঘ, হরিণ, বানরসহ বিরল প্রজাতির নানা বন্যপ্রাণি লোকালয়ে বেরিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে এবং মানুষের উদ্বেগ-আতংকের কারণ হচ্ছে। গত ৫ বছরে এ উপজেলায় শত শত বন্যপ্রাণি লোকালয়ে বেরিয়ে পড়ে। মারা পড়েছে শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি। এর মধ্যে হরিণ, মেছোবাঘ-ই বেশি। সরেজমিনে উপজেলার মোহাম্মদনগর, ডিমাই, ছোটলেখা, কেছরীগুল, শাহবাজ পুর, মুছেগুল, জামকান্দিসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে অবাধে পাহাড়-টিলা কেটে মাটি বিক্রি করার এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলায় দেড় শতাধিক ট্রাক-ট্রাক্টর নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কাটায় নিয়োজিত রয়েছে। অবৈধভাবে টিলার মাটি পরিবহনে নিয়োজিত অধিকাংশ ট্রাক্টরের নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এরপরও প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ যানবাহনে চলছে সরকারি ও বেসরকারি ভিটা ভরাটের কাজ।
মোহাম্মদনগরে ফারুক আহমদ নামে এক ব্যক্তি ৫-৬ জন শ্রমিক নিয়ে বিশাল টিলা কাটতে দেখা গেছে। আব্দুল হান্নানের বসতবাড়ি সংলগ্ন বিশাল টিলা কেটে ট্রাক্টরে মাটি উত্তোলনকালে চালক নিজের নাম আব্দুল হাসিব দাবি করে জানান, ট্রাক্টরের মালিক আব্দুল আজিজ। মোহাম্মদনগর বাজারের আব্দুর রাজ্জাক ও ময়নুল ইসলাম তাদের মার্কেট সম্প্রসারণের জন্য পূর্বদিকের নিচু জায়গা ভরাট করতে মালিকের সাথে চুক্তি করেছেন। এজন্য তিনি শ্রমিক নিয়ে টিলা কাটছেন। ওই চালক আরও জানান, এ এলাকায় আব্দুল মজিদ, বদরুল ইসলাম, আতিক মিয়াসহ ৫-৭ জন মালিকের ট্রাক্টর টিলার মাটি কেটে বিক্রি করছেন। উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে নির্মিতব্য অডিটরিয়ামের মাটি ভরাটের কাজ চলছে টিলার মাটি দিয়ে। ইতোপূর্বেও বড়লেখা আদালত চত্ত্বরের পুকুর ভরাট করা হয়েছে টিলার মাটি দিয়ে। উত্তর মুছেগুল এলাকার আব্দুল মালিক, আব্দুল মনাফ, আবু হাসান, সিপার আহমদ, ছাদ উদ্দিন, আব্দুল লতিফ প্রমুখ জানান, পৌরসভার জনৈক মহিলা কমিশনার ও সদর ইউনিয়নের এক ইউপি মেম্বার ঠিকাদারের সাথে ট্রাক্টর প্রতি ১ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে সরকারি অডিটরিয়ামের ভিটা ভরাটের চুক্তি করেছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা উত্তর মুছেগুল ও ডিমাই এলাকার পাহাড়-টিলা ধ্বংস করছে। একই সাথে জনসাধারনের চলাচলের সরকারি রাস্তা নষ্ট করে মাটি ভরাট করছে। এদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহর এলাকায় মাটিভর্তি ট্রাক্টর পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করলেও কাজ হচ্ছে না।
পাহাড়-টিলার মাটিভর্তি ট্রাক্টর অপরোয়াভাবে চলাচল করছে। কিন্তু কেউ-ই এগিয়ে আসছেন না প্রতিরোধে। কারণ, এসব ট্রাক্টরের মালিকরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মী। পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো: কামরান চৌধুরী জানান, পৌর শহরে ট্রাক্টরে টিলার মাটি পরিবহন সম্পূর্ণ নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও অসাধুরা দিনে-দুপুরে মাটি পরিবহন করছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, চলিত মাসে টিলার মাটি পরিহনের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত পৌর শহরে এক ট্রাক্টর চালককে ৫০ হাজার টাকা এবং সীমান্তর্তী শাহবাজপুর এলাকায় অপর ব্যক্তিকে আরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। প্রশাসন আগামীতে টিলাকাটা রোধে অর্থদ- নয়, কারাদন্ডের দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।
পরিবেশবাদীরা মনে করছেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে জেল খাটবে নিরীহ চালক, পার পেয়ে যাবে পাহাড় ও টিলা কেটে বনাঞ্চল ধ্বংসকারীরা।