শনিবার ● ২২ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » পর্নোগ্রাফি আসক্তিতে তরুন- তরুনীরা
পর্নোগ্রাফি আসক্তিতে তরুন- তরুনীরা
বরগুনা প্রতিনিধি :: বরগুনার বেতাগীতে শিক্ষার্থী ও তরুন-তরুনীদের একটি বড় অংশ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি দেখতে আভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, বিভিন্ন সূত্র
থেকে এমনটি নিশ্চি হওয়া গেছে।
এতে নীতি-নৈতিকতা বর্জিত ও তরুন সমাজের চরিত্র ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এদের একটি বড় অংশ, এমটাই জানালের অনেকে। বিজ্ঞানের অগ্রসরতা, মাত্রারিক্ত মোবাইল, ইন্টারনেন্ট
ব্যববহার, প্রকৃত শিক্ষার অভাব, পিতামাতা বা অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতাই এর মূল
কারণ বলে মনে করছেন অভিজ্ঞজনরা।
জানা গেছে, ইন্টারেনেটের সম্প্রসারণ বিশেষত ‘স্মার্ট ফোন’ শিশুদের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ জনপদে পর্নোগ্রাফি আসক্তি দেখা দিয়েছে চরমভাবে। ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থী ও তরুন-তরুনীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই যৌন প্রদর্শনীর দর্শক, এ হিসেব মানতে কস্ট হলেও এমন বাস্তবতার মুখোমিুখ এখানকার
জনগোষ্ঠি। বস্তুত এর চেয়ে কমসংখ্যক শিক্ষার্থী ও তরুন-তরুনীও যদি পর্নোগ্রাফি দর্শনে আসক্ত হয় তা এখানকার মানুষ ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য ভয়াবহ চিত্র বলে মনে করছেন সমাজ সচেতনরা।
অভিভাবকরা তাদের বিদ্যালয়গামী সন্তানদের মোবাবাইল ফোন তুলে দেন মূলত নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে ও সহজ যোগাযোগের স্বার্থে, কিন্ত তার অপব্যবহার হচ্ছে,
এটি দেখভালের ক্ষেত্রে নজরদারি না থাকায় ভয়াবহতার দিকে এগোচ্ছে
তাদের সন্তানরা।
উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে গড়ে ওঠা দোকানদার ও কিছু অসাধু
ব্যক্তির মাধ্যমে পর্ণ ছবি আনাচে কানচে ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য মোবাইল সাভিসিং সেন্টারগুলোতে ২৪ ঘন্টাই ভীড় দেখা যায় শিক্ষার্থী ও তরুন-তরুনীদের। ভিডিও চিত্র তৈরি ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার শিকার হয় তরুনী বা কিশোরীরা। তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অজান্তেই ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন,উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিক্ষার্থী ও তরুন-তরুনীদের পর্নো ছবিতে আসক্তি হওয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
অনেক তরুন পর্নো ছবি ব্যবহার পুরুষ সুলভ মনে করছে। এ কারনে বেড়েছে মাদকাসক্তি, জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কার্যকলাপে।
অনেকে আবার চুরি, ছিনতাই এ ধরনের অপকর্মেও লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও মাদকে আসক্তি বাড়ছে। র্যাব, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের অভিযানেও এ সব ঘটনা কমছেনা।
এখানে নারী বা কিশোরী নিগ্রহ তথা ইভটিজিংয়ের পেছনে শিশু বা কিশোরদের পর্নোগ্রাফি আসক্তি উড়িয়ে দেওয়া যায়না বলে অনেকের অভিমত। এর
মধ্যে দিয়ে কোমলমতি তরুন-তরনীদের স্বাভাবিক বিকাশ কেবল বাধাগ্রস্থ নয়, অস্বাভাবিক মানসিকতার মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠার ঝুঁকি তৈরি করছে।
উপজেলা পরিষদ মসজিদের ঈমাম প্রভাষক মাওলানা আব্দুল হাই নেছারি প্রতিবেদক কে বলেন, আমরা মনে করি সতর্ক ও সচেতন না হলে এ উপজেলায় পর্নোগ্রাফির বিকৃতি নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়বে। বিলম্বে হলেও তাই এধরনের নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে এ প্রজন্ম বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি দরকার পারিবারিক সতর্কতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
সেই সাথে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে।
সচেতন নাগরিক পরিষদের সভাপতি এজেডএম বদরুদ্দোজা জুয়েল বলেন, শুধু এখানেই নয়,জাতীয়ভাবে সেল ফোন সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নির্ধারিত বয়স সীমা মেনে চলা হলে শিক্ষার্থী ও শিশু- কিশোরদের পর্নোগ্রাফি দর্শণ নিয়ন্ত্রণে অনেক সুফল পাওয়া যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম,এম মাহমুদুর রহমান বলেন, এ বিষয় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে শীঘ্রই নৈতিকতা বর্জিত এসব কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান কবির বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক
ভাবে সবাই আন্তরিক হলেই শিশু- কিশোরদের স্বাভাবিকতা বিনাশী নেতিবাচক এই সামাজিক অবক্ষয় রোধকরা সম্ভব।
এছাড়া স্থানীয় অধিকাংশের মতে, পর্নো ছবি ব্যবহারকারী সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা একান্ত জরুরি।