শুক্রবার ● ২৮ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আলীকদমে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ শ্রেণীকক্ষ দখল করে নির্মান সামগ্রীর গোডাউন
আলীকদমে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ শ্রেণীকক্ষ দখল করে নির্মান সামগ্রীর গোডাউন
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: (১২ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.০০মি.)বান্দরবানের আলীকদমে দুইটি বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্ণীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)র তত্ত্বাবধানে ও পিইডিপি-৩ এর অর্থায়নে এসব বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ চলছে৷ নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি (এসএমসি) ও স্থানীয় লোকজন লিখিত অভিযোগ করলেও হালে বিষয়টি আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ৷
প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, উপজেলার অসতি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণে আলীকদম এলজিইডি গত ৯ জুন টেন্ডার আহ্বান করে৷ এ বিদ্যালয়ের প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা৷ এলাকাবাসী অভিযোগ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্মা এন্টারপ্রাইজের লোকজন কাজের শুরুতেই খোয়ার জন্য নিন্মমানের ইটের আধলা মজুত করেন৷ বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ দখল করে সিমেন্ট, রড ও মালামাল রাখেন৷
অভিযোগের সূত্রধরে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ভবনের ব্যাজের সলিং, ৩ ইঞ্চি সিসি ডিজাইনে থাকলেও তা করা হয়নি৷ বিদ্যালয়ের ভিত্তিতে ১৫ ইঞ্চি পুরম্নত্বের জায়গায় ১০-৮ ইঞ্চি ঢালাই করা হয়েছে৷ ব্যাজের ডিজাইন মোতাবেক দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মাপকাঠিতেও করা হয়েছে নয়-ছয়৷ আরসিসি ঢালাইতে কংক্রিট মিশ্রণের অনুপাত ১ঃ২ঃ৪ স্থলে ১ঃ৬ঃ১২ করা হয়েছে৷ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে মানহীন খোয়া৷ তাছাড়া নির্মাণ কাজে যেসব রড ব্যবহার করা হচ্ছে তা মানসম্মত নয়৷
এসএমসির সভাপতি মো. ওসমান গনিসহ ৩৭ জন এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ভবনের লে-আউট দেওয়ার সময় এসএমসিকে অবহিত করা হয়নি৷ নির্মাণ শ্রমিক থাকার এবং নির্মাণ সমগ্রী রাখার জন্য বিদ্যালয়ের ক্লাসরূম দখল করে নেয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার৷ এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটার কথাও অভিযোগে উলেস্নখ আছে৷
একই অভিযোগ, আমতলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রেও৷ পৃথক অভিযোগে এসএমসি সভাপতিসহ ৩৩ জন এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত অভিযোগে বলা হয়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মি.ইউটি মং এর লোকজন এ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলার কাজ শুরু করেন কমিটির অনুমতি ছাড়াই৷ স্থানীয় ব্রিকফিল্ড থেকে অতিনিন্মমানের আধলা নিয়ে খোয়া করে পিলার ও সিঁডি ঢালাইয়ে ব্যবহার করা হয়৷ নির্মাণ শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্কুলমাঠের কর্ণারে স্থাপিত ওয়াশবস্নকটি ভাঙ্গলে এর প্রতিবাদ করায় ঠিকাদার প্রতিনিধি আবুবক্করের ইন্ধনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাঁদাদাবীর অভিযোগ আনা হয়৷ পরে ওই প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিতও করা হয়৷
স্থানীয় অভিযোগ করেন, এলজিইডি থেকে সঠিকভাবে কাজগুলো তদারকি করা হচ্ছে না৷ অভিযোগ দেওয়ার পরও বিষয়টি আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ৷
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মইনু মার্মা বলেন, অসতি পাড়া স্কুলের কাজটি আমার পার্টনার করতেছে৷ স্কুলের ক্লাসরূম দখল করে মালামাল রাখার বিষয়টি আমি জানি না৷ কেউ করে থাকলে ঠিক করেনি৷ মি. ইউটি মং বলেন, আমার কাছ থেকে স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজটি কিনে নেন৷ তবে নিয়মমাফিক কাজ না করলে এটি আমি খতিয়ে দেখবো৷ তাছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা জানি না৷
উপজেলা প্রকৌশলী হেলালুর রহমান বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর ঠিকাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ বিদ্যালয়ের দখল করা শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে৷ নিন্মমানের খোয়া মজুদের বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, সেগুলি অপসারণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷