শুক্রবার ● ২৮ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও প্রথায় ভুমি বন্দোবস্তী দেয়া হবে : আসলে সেই রীতি ও প্রথা কি ?
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও প্রথায় ভুমি বন্দোবস্তী দেয়া হবে : আসলে সেই রীতি ও প্রথা কি ?
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: (১২ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় ভোর ৬.৩৩মি.) (পূর্ণপ্রকাশ) জাতিগত বঞ্চনার সমাধান হিসাবেই ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি - বাঙ্গালী বহুমূখী বঞ্চনা বিদ্যামান৷ কিছু ক্ষেত্রে তা প্রশাসনিক ভাবেও৷ এর উত্স কাপ্তাই বাঁধ৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধান প্রনয়নকালে এর প্রস্তাবনায়ও বলা হয়েছিল, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে৷
কিন্তু সাম্য-মৈত্রী- স্বাধীনতার কথিত ওই ধারনাটিকে এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে পারেনি৷
এর প্রমান হলো ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ৷
চুক্তিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অদিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নিম্নে বর্ণিত চারি খন্ড (ক,খ,গ,ঘ) সম্বলিত চুক্তিতে উপনীত হন”৷
এই চুক্তিতে কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক দলকে বা একটি সম্প্রদায়কে প্রধান্য দেয়া হয়েছে৷
কিন্তু চুক্তির পর র্দীঘ ১৯ বছর যাবত্ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী ও ক্ষুদ্র গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ভিতর পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ স্থানীয় অদিবাসীদের মধ্যে কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি বা পার্বত্য জনপদের সকল জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সম-ভুমিকা রাখতে পারেনি৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, কথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অদিবাসীদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দ ১৯ বছরের মধ্যে একবারও পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এর কোন সাধারন পাহাড়ি - বাঙ্গালীদের এক সাথে নিয়ে বৈঠক করেনি, (আর অদ্যবধি যাদের নিয়ে পিসিজেএসএস নেতৃবৃন্দ বৈঠক করেছেন এসব পাহাড়ি - বাঙ্গালীরা তাদের পকেটের লোকজন)৷
পার্বত্য চুক্তির পর ১৯ বছরে ডাকঢোল পিটিয়ে,কিছু সংখ্যাক সভা - সেমিনার করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের রাজনৈতিক ধোঁয়া তোলা হয়েছে৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়নি৷
এমন কি চুক্তি স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তার নিজস্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত করার মতো উল্লেখযোগ্য নজিরও নাই, বরং তাদের বিরুদ্ধে নিজ জনগোষ্ঠীর লোকজনদের উপর প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্গন,অপহরন, হত্যা, কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে৷
পিসিজেএসএস এর কেন্দ্রীয় নেতা এখন রাঙামাটি পার্বত্য জেলার একজন তথাকথিত নির্বাচিত জন প্রতিনিধি স্থানীয় সংসদ সদস্য, অদ্যাবধি তার মুখ থেকে জেলার উন্নয়ন মূলক কোন কর্মকান্ডের বুলি বের হয়নি৷ এ সংসদ সদস্য যখন জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় প্রশাসনে অথবা কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, উনার কথা শোনে মনে তার পরামর্শক এবং তারা আমাদের দেশের বাইরের অন্য কোন দেশের মানুষ!
আমি বা আমার বক্তব্য সরকার, কোন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল বা পার্বত্য চুক্তির বিরুদ্ধে নয়, সাম্য- মৈত্রী ও স্বাধীনতার ধারনা পার্বত্য অঞ্চলে বর্তমানে কতটা প্রাসঙ্গিক তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী এসময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য চরম আকার ধারন করেছে৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন -২০০১ (সংশোধনী) ২০১৬ জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর সরকার গেজেটের মাধ্যমে আইন আকারে প্রকাশ করেছে৷
এ আইন অনুসারে ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে৷ যেমন; আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সদস্য সংখ্যা ছিলো কমিশনের চেয়ারম্যান (অবসর প্রাপ্ত ১ জন বিচারপতি) সহ ৭ জন, সংশোধন করে এ কমিশনের সদস্য সংখ্যা করা হয়েছে ৯ জন৷
কমিশনের চেয়ারম্যান ১ জন (অবসর প্রাপ্ত ১ জন বিচারপতি),পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি কমিশনের সদস্য ১ জন, রাঙামাটি (চাকমা),খাগড়াছড়ি (ত্রিপুরা) ও বান্দরবান (মারমা) পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি সদস্য ৩ জন, রাঙামাটি (চাকমা সার্কেল চীফ),খাগড়াছড়ি (মং সার্কেল চীফ) ও বান্দরবান (বোমাং সার্কেল চীফ) সার্কেল চীফ/প্রতিনিধি সদস্য ৩ জন ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার সদস্য ১ জন৷
উলেস্নখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে রাখা হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি৷
বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে বলা হয়েছে,যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে৷
এছাড়া ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা৷ ২০১৬ সালের সংশোধীত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনে ৩টি জনগোষ্ঠীকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে, লঙ্গিত করা হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান এবং ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ৷
আগের আইনে ছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে চেয়ারম্যান যে কোন সিদ্ধান্ত একক ভাবে নিতে পারবেন, এখন সংশোধীত আইনে কমিশনের সে ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে ৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রস্তাবে নতুন আইনে বলা হয়েছে, কমিশনের সকল সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন -২০০১ (সংশোধনী) ২০১৬ এবং ২০০১ সানের ৫৩ নং আইন এর ধারা ৩ এর ৬ নং উপ ধারায় বলা হয়েছে, ” কমিশনের কার্যাবলী ও ক্ষমতা : (১) কমিশনের কার্যাবলী নিন্মরূপ হইবে, যথা :-
(ক) পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রানত্ম বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা;
(খ) আবেদনে উল্লিখিত ভূমিতে আবেদনকারী বা ক্ষেত্রমত সংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষের স্বত্ব বা অন্যবিধ অধিকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নির্ধারণ এবং প্রয়োজনবোধে দখল পুনর্বহাল;
(গ) পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন বহির্ভূতভাবে কোন ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হইয়া থাকিলে উহা বাতিলকরণ এবং উক্ত বন্দোবস্তীজনিত কারণে কোন বৈধ মালিক ভূমি হইতে বেদখল হইয়া থাকিলে তাহার দখল পুনর্বহাল:
তবে শর্ত থাকে যে, প্রযোজ্য আইনের অধীনে অধিগ্রহণকৃত ভূমি এবং রক্ষিত (Reserved) বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুত্ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন শিল্প কারখানা ও সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এই উপ-ধারা প্রযোজ্য হইবে না”৷
এছাড়া “(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কার্যাবলী পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমিত থাকিবে৷
(৩) উক্ত কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে কমিশন যে কোন সরকারী বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত বা কাগজপত্র সরবরাহের এবং প্রয়োজনীয় উক্ত কর্তৃপক্ষের যে কোন কর্মকর্তাকে স্থানীয় তদন্ত, পরিদর্শন বা জরীপের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারিবে এবং উক্ত কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা উহা পালনে বাধ্য থাকিবেন”৷
এ আইনের উপধারার ব্যাখা অস্পষ্ট এতে করে যুগ যুগ ধারে পার্বত্য অঞ্চলে যে সব সরকারী ও স্বাত্বসাশিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিশেষ করে রক্ষিত বনাঞ্চল (রিজার্ভ ফরেষ্ট) তারা তাদের ভুমির মালিকানা হারাবে এতে কোন ধরনের সন্দেহ নাই৷
এতে সমস্যার সমুখিন হবে, সরকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও ভুমি জরিপ বিভাগ ইত্যাদি ৷
সরকার চাইলেই আগের মতো করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যে কারো ভুমি/ জায়গা অধিগ্রহন করতে পারবেনা ৷
খোদ সরকারকে অনুমতি নিতে হবে বা পূর্বেই অনুমোদ নিতে হবে অনির্বাচিত প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কাছ থেকে ৷
পার্বত্য অঞ্চলের জনসাধারনকে এ আইনের সারমর্ম কি এবং কাদের স্বার্থে এই আইন বা প্রবিধানের সংযোজন করা হয়েছে এটা পরিস্কার করে জানিয়ে দেয়া এখন সময়ে দাবি৷
আমাদের দেশের সরকার প্রধান, পিসিজেএসএস প্রধান এবং পার্বত্য অঞ্চলের নীতি নির্ধারকদের মনে রাখা প্রয়োজন পার্শের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজের বাড়িও তছনছ হয় ৷
৩ নং ধারার নং উপধারা দেশের প্রচলিত আইনের পরিপস্থি বলা হয়েছে,”২০৷ সরল বিশ্বাসে কৃত কাজ-কর্ম সংরক্ষণ : এই আইন বা প্রবিধানের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোন কাজের ফলে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হইলে বা কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা বা অন্য কোন আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে না”৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন -২০০১ (সংশোধন) ২০১৬ করা হয়েছে, পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা জন্য৷
কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন -২০০১ (সংশোধন) ২০১৬ বাস্তবায়ন করে কৌশলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯০০ সালের রেগুলেসন আইন পুর্ণ বলবত্ করা হয়েছে ৷
আইনে বলা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (উপজাতীয়) রীতি ও প্রথায় ভুমি বন্দোবস্তী দেয়া হবে, আসলে সেই রীতি ও প্রথা কি ?
সহজ ও সরল ভাবে বলতে গেলে; প্রথমত ১জন ভুমির মালিক তার খাস জায়গা বা ভুমি নিজের নামে বন্দোবস্তী করতে চাইলে বা আবেদন করলে প্রথম যেতে হবে তার এলাকার/গ্রামের কার্বারীর কাছে, সে কার্বারীর সুপারিশ নিয়ে ভুমির মালিক যাবে ২য় পর্য়ায়ে মৌজা হেডম্যানের কাছে, কিন্তু (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি)’র পক্ষ থেকে গ্রাম প্রধান কার্বারীকে আগে থেকে বলা আছে, কোন বাঙ্গালী (মুসলিম, হিন্দু ও বড়ুয়া পার্বত্য অঞ্চলে এরা হচ্ছে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী) যদি ভুমি/ জায়গার সুপারিশ নিতে আসে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে৷
ভুমির মালিক যদি কয়েক মাস দৌড়-ঝাপ করে হয়তো মিলেও যেতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে অনুমতি৷
ভুমির মালিক ২য় পর্য়ায়ে মৌজা হেডম্যানের কাছে গেলে সবার আগে হেডম্যান চাইবে সার্কেল চীফের স্থানীয় নাগরিকের সনদপত্র,(পার্বত্য চুক্তিতে এ ক্ষমতা জেলা প্রশাসক ও সার্কেল চীফদের প্রদান করা হয়েছে, কিন্তু সার্কেল চীফ, হেডম্যান ও কারর্বারীদের কাছে জেলা প্রশাসক প্রদত্ত স্থানীয় নাগরিকত্ব সনদপত্র গ্রহন যোগ্য নয়) যদি থাকে তো ভালো, না হলে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে সেই সার্কেল চীফের সনদপত্রের জন্য৷
সার্কেল চীফদের কার্যালয়ে গিয়ে দেখবেন তাদের কার্যালয়ে পাহাড়িরদের জন্য ১টি ফাইল আর বাঙ্গালীদের জন্য ১টি ফাইল৷ পাহাড়িদের ফাইলে দেখবেন ৩০টি সনদপত্রের জন্য আবেদন আর বাঙ্গালীদের ফাইলে দেখবেন ১-২টি সনদপত্রের জন্য আবেদন,এ সনদের জন্য পাহাড়িদের কাছ থেকে নেয় ১শত টাকা ফি আর বাঙ্গালীদের কাছ থেকে নেয়া হয় হাজার টাকা ফি, যাহা চরম বৈষম্য ও সুস্পষ্ট মানবাধীকার লঙ্গন৷
যাক ধরে নিন, ভুমির মালিক সার্কেল চীফের কাছ থেকে স্থানীয় নাগরিকের সনদপত্র নিতে পেরেছেন, এবার মৌজা হেডম্যানের কাছে সুপারিশ নিয়ে ৩য় পর্যায়ে ভুমির মালিক যাবে সার্কেল চীফের সুপারিশ নিতে,ভাগ্য ভাল হলে সার্কেল চীফের সুপারিশ পেয়ে যাবে, না হলে দিনের পর দিন ঘুরেও ভুমি/ জায়গার মালিক সার্কেল চীফের কাছ থেকে সুপারিশ পাবেনা৷
ভুমি/ জায়গার মালিককে কেন সার্কেল চীফ সুপারিশ করছে না অথবা সমস্যা কি জানতে ভুমি/জায়গার মালিক সেই সার্কেল চীফের সাথে দেখা করতে চাইলে সার্কেল চীফ দেখা করবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন বর্তমানেও৷ সার্কেল চীফের কার্যালয় থেকে সে ভুমির মালিককে বলা হয় আপনার সমস্যা জানিয়ে সার্কেল চীফের কাছে আবেদন করতে৷ একবার, দুইবার ও তিনবার আবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায় না৷ একদিকে ভুমির মালিকের দখলে থাকা ভুমি/জায়গা বন্দোবস্তীর জন্য সুপারিশ করবেনা অন্য দিকে সার্কেল চীফ সেই ভুমি/জায়গার মালিকের সাথে দেখাও করেন না৷(এই কাজটি বেশী করেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়)৷
ধরা যাক ভুমির মালিক সার্কেল চীফের সুপারিশ পেয়ে গেছেন, ৪র্থ পর্যায়ে যেতে হবে উপজেলা ভুমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড)’র কাছে৷ উপজেলা ভুমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) অফিসে সেই কয়েক মাস পড়ে থাকার পর যাচাই - বাচাই করে, ৫ম পর্যায়ে উপজেলা ভুমি কর্মকর্তা সুপারিশ করে সেই ভুমি বন্দোবস্তীর ফাইল পাঠাবেন জেলা প্রশাসকের কাছে, সেই ফাইল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যাচাই - বাচাই করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ পর্যায়ে সেই ভুমি বন্দেবস্তীর ফাইল পাঠাবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অনুমোদনের জন্য৷
জেলা পরিষদে সেই ভুমি বন্দোবস্তীর ফাইল কয়েক মাস পড়ে থাকার পর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদন পেলে সেই ভুমি/ জায়গা বন্দোবস্তীর ফাইল চলে যাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে, সেখানে কয়েক মাস শুনানী করার পর খাস ভুমি/জায়গার মালিককে অফিসিয়াল পত্র দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে ভুমি বন্দোবস্তীর সেলামীর টাকা (রাজস্ব) জমা দেয়ার জন্য৷
এখানে কেবলমাত্র মৌজার জায়গা/ভুমি বন্দোবস্তীর বিষয়ে বলা হয়েছে৷
পার্বত্য তিন জেলায় রয়েছে বাজার ফান্ড নামক আরো একটি গোদের উপর বিষ পোড়া৷
এছাড়াও বিএনপি সরকারের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শে তত্কালিন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান তিন পার্বত্য জেলায় এক পরিপত্র জারি করিয়েছেন, এতে বলা হয়েছে, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য তিন জেলার জেলা শহরের মৌজা বা পৌরসভা এলাকার মধ্যে একজন ব্যাক্তিকে ৩০ শতকের বেশী ভুমি/ জায়গা বন্দোবস্তীর জন্য জেলা প্রশাসক ও সার্কেল চীফের কার্যালয় থেকে সুপারিশ দেয়া বা গ্রহন করা যাবে না৷
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, উপজেলা ভুমি কর্মকর্তার কার্যালয়, সার্কেল চীফ কার্যালয়, হেডম্যান কার্যালয় ও কার্বারীদের ভিতর বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর অবস্থান ক্ষীণ৷
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে, পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ১০০% কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা গড়ে ২-৩ %৷
এছাড়া পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী (এনজিও) প্রতিষ্ঠানে ১০০% কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বাঙ্গালীর সংখ্যা গড়ে ১ % নয়৷
সার্বিক ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর ভবিষত্ কি ?
কবি মাইকেল মধুসুধন দত্ত লিখেছেন, “জগবার দিন আজ দুরদিন চুপি চুপি আসছে”৷
নোট : আমার এই লিখাটি ইতোপূর্বে ১০ এর অধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, পার্বত্য এলাকার জনসাধারনের অনুরোধে লিখাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ (সংশোধন) ২০১৬ এর কিছু আইনসহ (সংক্ষিপ্ত) পূর্ণরায় প্রকাশ করা হল৷