শুক্রবার ● ২৮ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » বগুড়া’য় জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ
বগুড়া’য় জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ
বগুড়া প্রতিনিধি :: (১৩ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.১৫মি.) বাংলাদেশের নতুন ঔষধী-পুষ্টিগুন সম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল ফল হিসাবে ড্রাগন ফল চাষ এখন দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে৷ বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বেড়েই চলেছে ড্রাগন ফলের চাষ৷ অনূকুল আবহাওয়া ও উত্পাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা ড্রাগন ফল চাষে ঝুকে পড়ছে৷ ফলে ড্রাগন ফলের দাম ও চাহিদা বেশী হওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষক পরিবার৷ শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়া, চীন, শ্রীলংকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এখন ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাষ করা হচ্ছে৷ ফলে গাবতলীতে ড্রাগন চাষ ভাল হওয়ায় এখন বানিজ্যিক ভাবে সম্প্রসারণের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে৷ উচ্চ ফলনশীল প্রচুর পুষ্টিগুন ও বাজারে দাম ভাল থাকায় কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ড্রাগন চাষ করছে৷ উচু জমিতে ড্রাগন চাষ করতে হয়৷ লাল রংঙ্গের ড্রাগন ফল সাদা শাঁস ও রঙ্গিন শাঁস হয়ে থাকে৷ গাবতলী রামেশ্বরপুরের জাইগুলি গ্রামে এএইচ আজম খানের কৃষি খামারে পরীক্ষামূলক ভাবে ১২শতক জমিতে চাষ করা হয়েছে ড্রাগন৷ একইভাবে মহিষাবানের নিশ্চিন্তপুরে আলমগীর হোসেন ১৫শতক জমিতে চাষ করেছে ড্রাগন৷ এভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ৷ বগুড়া হটিকালচার ও গাবতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় জাইগুলি গ্রামে এএইচ আজম খানের জমিতে লাগানো হয় ড্রাগন ফলের গাছ৷ এখন ১বছরের মাথায় ফলন পাওয়া শুরু হয়েছে৷ যা প্রতিকেজী ৫শ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ এবছরে ব্যাপক ফল হয়েছে৷ আশা করা হচ্ছে ২৫মন ফল উত্পাদন হবে৷ উত্পাদন খরচ বাদ দিয়ে ১লক্ষ টাকা লাভ হবে৷ ড্রাগন ফল চাষী এএইচ আজম খান জানান, ১২শতক জমিতে ১শ চারা গাছ লাগিয়েছি৷ নিবিড় পরিচর্যার ফলে প্রতিটি গাছে ভাল ফল হয়েছে৷ পরিক্ষামূলক ভাবে ড্রাগন ফল চাষে ফলন আরো ভাল হলে আগামীদিনে বানিজ্যিকভাবে বেশী জমিতে ড্রাগন চাষের পরিকল্পনা রয়েছে৷ এ ড্রাগন ফল বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা ছুটে আসছেন৷ ড্রাগন বাগানে সার্বিক পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করে আসছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান আরিফ৷ এছাড়াও বাগান পরিচযার্য় সবসময় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন স্বাধীন, শরিফ, বাদশা, কালাম ও ফুকু৷ তারা আরো জানান, ড্রাগন চাষের পাশাপাশি কৃষি খামারে দেশী-বিদেশী অনেক ফল-ফুল ও ঔষধী গাছ রয়েছে৷ রোপন করা হয়েছে আম, জাম, লিচু, সরিফা, বেল, কাঁঠাল, পিয়ারা, কারেঙ্গা, জলপায়, আমলকি, করচা, সরপুরী, পেঁপে, কদবেল, জামরম্নল, দেও, বাদাম, কাট বাদাম৷ এএইচ আজম খান একটি সফল কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন৷ গাবতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহীদ সরকার জানান, ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের বিনামূল্যে উপকরন ও প্রাথমিক খরচ এবং পরামর্শ’সহ সহায়তা করা হচ্ছে৷ বর্তমানে গাবতলীতে ড্রাগন ফল চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে৷ এ ফল ঔষধী পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ও সৌখিন ফল৷ বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় ও ভবনের ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করা সম্ভব৷ উপজেলা কৃষি সমপ্রসারন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সোহরাব হোসেন জানান, ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের উত্সাহিত করা হচ্ছে৷ আশাকরছি গাবতলী উপজেলায় ড্রাগন চাষ বাংলাদেশের মধ্যে জনপ্রিয় ও মডেল উপজেলা হবে৷ গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাঃ আহসান হাবিব জানান, ড্রাগন একটি পুষ্টিগুন ও নতুন ফল৷ এ ফলের চাষ সম্প্রসারন হলে কৃষকরা বানিজ্যিভাবে আরো বেশী জমিতে চাষ করবে এবং গাবতলীতে ড্রাগন চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে৷ ফলে বহু শিক্ষিত কৃষক স্বাবলম্বী হতে পারবে৷
কৃষক পরিবারের মুখে ফুটবে হাসি৷ উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরৰণ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী হায়দার জানান, জমিতে চারা রোপনের ১বছর পর ফল আসে৷ প্রতিবছরে একটি পূর্নবয়স্ক গাছে ৪০থেকে ৫০টি ফল পাওয়া যায়৷ ১বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষে ৯০হাজার টাকা খরচ হয়৷ ৯ফুট পরপর ২টি করে গর্তখুড়ে চারা লাগানো যায়৷ জৈব ও রাসায়নিক সার নিয়মিত দিতে হয়৷ ১বিঘা জমিতে ৩শ চারা রোপন করা সম্ভাব৷ উত্পাদন ব্যয় বাদ দিয়ে ১বছরে ১বিঘা জমি থেকে ৩লক্ষ টাকা লাভ করা সম্ভব৷ বর্তমানে বাজারে ৫০থেকে ১শ টাকা ১টি চারা গাছ বিক্রি করা হচ্ছে৷ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান আরিফ জানান, ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী করতে কৃষকদের প্রশিক্ষণনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ড্রাগন ফল লাল টুকটুকে৷ ঔষধীগুন থাকায় উচ্চ রক্ত চাপ হ্রাস ও ডাইবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী৷ ডাঃ নীল রতন দেব এমবিবিএস-বিসিএস (স্বাস্থ্য) জানান, বর্তমানে ড্রাগন ফল ঔষধী কাজে ব্যবহার হচ্ছে৷ ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি, আয়রন, মিনারেল, ফাইবার ছাড়াও অ্যান্টি এক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ্য ও সবল রাখতে সহায়তা করে৷