রবিবার ● ৩০ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » ঢাকা » অটিস্টিক শিশুদের যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে বাংলাদেশে স্যামসাং নিয়ে এলো লুক এট মি অ্যাপ
অটিস্টিক শিশুদের যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে বাংলাদেশে স্যামসাং নিয়ে এলো লুক এট মি অ্যাপ
ঢাকা প্রতিনিধি :: (১৫ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.১০মি.) ৩০ অক্টোবর রবিবার ঢাকায় অটিস্টিক শিশুদের জীবনমান উন্নত করতে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশ নিয়ে এলো একটি নতুন অ্যাপ। স্যামসাং ও সূচনা ফাউন্ডেশন এক অনুষ্ঠানে এই অ্যাপ উদ্বোধন করেছে।
এতে উপস্থিত ছিলেন সূচনা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইসারি কমিটি অন অটিজম এন্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসর্ডারস (এনএসিএএনডি)-এর চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার মাননীয় রাষ্ট্রদূত আন সিয়ং-ডু, স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেংওয়ান ইউন, স্যামসাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওয়ানমো কু সহ স্যামসাং ও সূচনা ফাউন্ডেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রযুক্তির সহায়তায় অটিস্টিক শিশুদের যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে যৌথভাবে কাজ করছে স্যামসাং ও সূচনা ফাউন্ডেশন।
লুক এট মি’ অ্যাপ- এর মূল লক্ষ্য অটিস্টিক শিশুদের যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করা, যার ফলে তাদের চারপাশের মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়। এই অ্যাপ শিশুদের সাহায্য করবে অন্যের সাথে দৃষ্টি সংযোগ করা এবং নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে। এটি প্রযুক্তি ও মানবতার এক অসাধারণ সমন্বয়। ‘লুক এট মি’ অ্যাপ কোরিয়া এবং কানাডায় সফলতা পাওয়ার পর বাংলাদেশ উন্মোচন করা হলো।
অ্যাপটি যেভাবে কাজ করে
এই মোবাইল অ্যাপটি অটিস্টিক শিশুদের অন্যের সাথে দৃষ্টি সংযোগ ও নিজের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। সাধারণত শিশুদের মাঝে ক্যামেরার প্রতি যে আগ্রহ দেখা যায় তা কাজে লাগিয়ে এই অ্যাপ শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। এটা ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুরা অন্য ব্যক্তির মনোভাব বুঝতে পারবে, বিভিন্ন চেহারা মনে রাখতে পারবে এবং বিভিন্ন মনোভাব ও ভঙ্গি অনুকরণ করে নিজেদের ছবি তুলতে পারবে। সাতটি আনন্দময় ও ইন্টারেক্টিভ মিশন শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখবে, উপরন্তু পয়েন্ট সিস্টেম, বিভিন্ন পুরস্কার এবং অডিও/ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তাদের আগ্রহ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এই অ্যাপ-এর মিশনগুলোতে শিশুর পাশাপাশি মা-বাবা অথবা ট্রেইনারের অংশগ্রহণও থাকতে হবে।
অ্যাপ-এর শুরু যেভাবে
প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীকে আরো সুন্দরভাবে গড়ার জন্য আইডিয়া চাওয়া হয় একটি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে, সেখান থেকেই ‘লুক এট মি’র অনুপ্রেরণা পায় স্যামসাং। অন্যের সাথে দৃষ্টি সংযোগ করা এবং যোগাযোগ করা অটিস্টিক শিশুদের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা, যেটা তাদের সামাজিকভাবে মেলামেশা থেকে বিরত রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে অটিস্টিক শিশুরা স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে স্যামসাং সিওল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনসেই ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় ‘লুক এট মি’ অ্যাপ তৈরী করে এবং বিশজন শিশুকে নিয়ে আট সপ্তাহব্যাপী এক যৌথ ক্লিনিকাল ট্রায়াল করে। দৃষ্টি সংযোগ ও অনুভূতি সনাক্ত করার ক্ষেত্রে শিশুদের মাঝে লক্ষণীয় উন্নতি দেখা যায় এই ট্রায়াল-এ। এই অ্যাপ অটিস্টিক শিশুদের সাহায্য করে বিভিন্ন অনুভূতি সনাক্ত করা ও নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে।
‘লুক এট মি’ অ্যাপকে নিয়ে করা ক্যাম্পেইন পাঁচটি ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড জিতেছে কানস লায়নস ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভাল অফ ক্রিয়েটিভিটিতে, যার মধ্যে আছে সাইবার ক্যাটাগরিতে গোল্ড এবং মোবাইল ক্যাটাগরিতে সিলভার অ্যাওয়ার্ড। ২০১৫ সালে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কানাডা, অটিজম স্পিক্স কানাডা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়, এই অ্যাপ দুইশত অটিস্টিক শিশুর পরিবারকে প্রদান করে। অটিজমে আক্রান্ত অসংখ্য শিশুর মাঝে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায় আন্তঃ পারস্পারিক সম্পর্ক ও চেহারা শনাক্তকরণ এই দুই ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে ‘লুক এট মি’
প্রযুক্তি ব্যবহার করে অটিস্টিক শিশুদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এটাই প্রথম অ্যাপ। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই অ্যাপ -এর কারিকুলাম বা কার্যক্রম তৈরী করেছে স্যামসাং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ। ‘লুক এট মি’-র আন্তর্জাতিক সংস্করণ ইংরেজিতে, যা গুগল প্লে-স্টোর থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। এই অ্যাপ -এর বাংলা সংস্করণ ‘আমার দিকে তাকাও’ অতি শীঘ্রই গুগল প্লে-স্টোরে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে এই অ্যাপ-এর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে স্যামসাং বাংলাদেশ সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের কাছে ‘লুক এট মি’ অ্যাপ ইনস্টল করা ১০০টি স্যামসাং গালাক্সী ট্যাব ই হস্তান্তর করে।
স্যামসাং- এর লক্ষ্য উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা। এর আগে, কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তর এর সাথে স্যামসাং বাংলাদেশ এক যৌথ প্রকল্প পরিচালনা করে। এই প্রকল্পের অধীনে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এ ‘স্যামসাং টেকনিকাল স্কুল’ তৈরী করে দেয় স্যামসাং, যার আওতায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট- এর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যাতে তারা উন্নতমানের এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল দক্ষতা-সম্পন্ন প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। পূর্বের প্রকল্পগুলোর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় স্যামসাং বিশ্বাস করে ‘লুক এট মি’ অ্যাপ বাংলাদেশের অটিস্টিক বাচ্চাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সূচনা ফাউন্ডেশন
সূচনা ফাউন্ডেশন মূলত নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার (এনডিডিএস) ও মানসিকভাবে অসুস্থ শিশু এবং ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে থাকে। ফাউন্ডেশনটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহা অটিস্টিক বা অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মান উন্নয়নে গবেষণায় নিয়োজিত। এটা মূলত অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। ফাউন্ডেশনটি অটিস্টিক শিশু এবং ব্যক্তিদের উৎপাদনশীল খাতে যুক্ত করে সমাজে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনে সহায়তা করে থাকে। ফাউন্ডেশনের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারপারসন হলেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন একজন স্বীকৃত মনোবিজ্ঞানী। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইসারি কমিটি অন অটিজম এন্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসর্ডারস (এনএসিএএনডি)-এর চেয়ারপারসন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য এবং প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ।
স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কোম্পানী লিমিটেড সম্পর্কে
অভিনব এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কোঃ লিঃ বিশ্ব পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে টিভি, স্মার্টফোন, পরিধানযোগ্য ডিভাইস, ট্যাবলেট, ক্যামেরা, ডিজিটাল অ্যাপ্লায়েন্স, প্রিন্টার, মেডিকেল সরঞ্জাম, নেটওয়ার্ক সিস্টেম, সেমিকন্ডাকটর এবং এলইডি সলিউশনে যুগান্তকারী সমাধান প্রদান করছে। স্মার্ট হোম এবং ডিজিটাল হেলথ ইনিশিয়েটিভ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি “ইন্টারনেট অফ থিংস” এ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিশ্বজুড়ে ৮৪টি দেশে ৪৯০,০০০ জন কর্মী কাজ করে এবং বাৎসরিক আয় ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
স্যামসাং কোরিয়ার ‘লুক অ্যাট মি’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
www.youtube.com