মঙ্গলবার ● ১ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ক্রমেই অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়ছে পর্যটন শহর রাঙামাটি
ক্রমেই অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়ছে পর্যটন শহর রাঙামাটি
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (১৭ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫০মি.) রাঙামাটি জেলায় ও শহরে কিছু কিছু অপরাধ কমে গেছে আর কিছু অপরাধ ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে ৷ তারপরেও থেমে নেই অপরাধ কার্যক্রম৷
মাদক ক্রয় বিক্রয়, মাদক সেবন, অপহরণ, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, সরকারী জায়গা দখল করে বিক্রয়, জুয়ার ক্লাব পরিচালনা, পতিতাবৃত্তি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও কাঠ পাচার ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷
ক্রমেই অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়ছে পর্যটন শহর রাঙামাটি৷
রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত আগষ্ট ২০১৬ মাসে রাঙামাটি জেলায় এধরনের ৫০টি মামলা হয়েছে, তারমধ্যে চুরি ৮টি, অস্ত্র আইনে ১টি, মাদকদ্রব্য আইনে ২৫টি, নারী ও শিশু আইনে ৩টি ও অন্যান্য ১৩টি মামলা৷
এছাড়া রাঙামাটি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আজিজুল হক এর আদালতে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রদত্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, বিচারাধীন নিয়মিত মামলার সংখ্যা ৩৪১, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা ১৮৭টি মোট ৫২৮টি মামলা, তম্মধ্যে নিষ্পত্তি ৩টি, বেকুসুর খালাস ৩টি, স্বাক্ষীর জন্য রয়েছে ৬টি, বিচারাধীন রয়েছে ৩৩৯টি, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৮৬টি মোট ৫২৫টি মামলা৷
রাঙামাটি জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. জয়নুল আবেদিন জানান, রাঙামাটি শহরে মাদকের ১৫টির বেশী চিহ্নিত স্থান রয়েছে তারমধ্যে শহরের বনরুপা বাজারের কাটা পাহাড় এলাকা, দেবাশীষ নগর, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল এলাকা, ভেদভেদী পাড়া ও ভেদভেদী মুসলিম পাড়া, আসামবস্তী নারিকেল বাগান, রিজার্ভ বাজার পৌর পার্কের নীচে ও নাপ্পি পট্টি, পৌরসভার সামনে, তবলছড়ি এডিসি হিল এর পার্শে, ট্রাইবেল আদাম ও ফরেষ্ট কলোনী, মাঝেরবস্তী শাহ স্কুল এলাকা, পাবলিক হেলথ এলাকা, কাঠালতলী এলাকা, নিউ মার্কেট, চম্পক নগর, বাস টার্মিনাল,শিমুলতলী, শিল্পকলা একাডেমীর পাশে, কল্যাণপুরের মূখ, এ কে দেওয়ানের বাগান (তান্যাবী ফিলিং ষ্টেশন এর সামনে), প্রবীন পার্ক এলাকার কেরানী পাহাড়, ফুল বাড়েং শপিং কমপ্লেক্সে নীচে কেবাং রেষ্টুরেন্ট প্রধান ডাকঘর ইত্যাদি এলাকা উল্লেখযোগ্য ভাবে মাদক প্রবন৷
মাদকদ্রব্যর মধ্যে রাঙামাটিতে দেশী মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাজা, হিরোইন ও আফিম এর সেবন ও ক্রয় বিক্রয় হয়৷
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিসের পরিদর্শক মো. জয়নুল আবেদিন সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে আরো জানান, একজন পরিচালক, একজন পরিদর্শক, একজন সিপাহী ও একজন অফিস সহকারী দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে রাঙামাটি জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন কার্যালয়৷ তাদের নেই পর্যাপ্ত জনবল নেই কোন যাতায়াতের জন্য গাড়ি৷
অপরাধ বিষয়ে রাঙামাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্বিক ও অপরাধ) মো. শহীদ উল্ল্যা সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, মুলত বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাগুলো মাদক ও অপরাদ প্রবনতা তুলনা মুলকভাবে বেশী৷
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্যর মধ্যে ইয়াবা, দেশী মদ এবং কাপ্তাই এলাকায় গাঁজা পাওয়া যায়৷ এসব মাদকদ্রব্য চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই হয়ে রাঙামাটি শহরে প্রবেশ করে৷ মাদক ব্যবসায়ীরা পর্যটক সেজে রাঙামাটিতে মাদক সহজে বহন যোগ্য ইয়াবা নিয়ে আসছে, ফেনসিডিল বোতলজাত হওয়ায় বহনের ক্ষেত্রে একটু কষ্টসাধ্য কিন্তু বহনে সহজ হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা ইয়াবার সেবন ও ক্রয় বিক্রয় বেছে নিয়েছে৷ রাঙামাটি শহরে মাদক যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন চেকপোষ্টে তল্লাশী জোরদার থাকা সত্ত্বেও শহরে মাদক ঢুকছে৷
তিনি বলেন, আমরা মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স, রাঙামাটি শহর মাদকমুক্ত রাখার জন্য আমরা নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি, মাদক সেবনকারী, ক্রেতা বিক্রেতাদের আটক করছি, কিন্তু আটকের পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পরছে, অনেক সময় জেলা জজ আদালতকে পাশ কাটিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে৷
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এছাড়া শহরের হোটেল মোটেল গুলোতেও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, ব্যাপক হারে চলছে পতিতাবৃত্তি ৷ (দন্ডবিধি ২৯০ ধারায় আটক করা হচ্ছে) পতিতাদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে হত্যাকান্ডের মত মারাত্মক অপরাধও ঘটছে৷
এ পর্যন্ত রাঙামাটি শহরের হোটেলে ৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে, রিজার্ভ বাজারে ২টি ও কলেজ গেইট মোটেল জর্জ এ ১টি৷
শহরে ব্যাপক হারে বেড়েছে জুয়ার আসর৷ এক শ্রেণীর লোক তাদের পেশা ও নেশা হিসাবে জুয়া খেলা বেছে নিয়েছে৷ ভেদভেদী বাজার এলাকা, কলেজ গেইট আইডিয়াল স্কুলের পাশে, টিএন্ডটি ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রাম কার্যালয়ের পেছনে, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পাশে, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সনাক) এর জেলা কার্যালয়ের পেছনে, কাটা পাহাড় এলাকা, জেলা বিএনপি কার্যালয়ের পিছনে, রাঙামাটি বরফ কলের সামনে, পৌরসভার সামনে, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সামনে, স্কুল হেলথ ও খাদ্য গুদামের মাঝখানের স্থাপনায়, তবলছড়ি এডিসি হিল ইত্যাদি এলাকায় জুয়ার আসরে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার লেনদেন হয়৷
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্বিক ও অপরাধ) মো. শহীদ উল্ল্যা সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে এবিষয়ে বলেন, জুয়ার ক্ষেত্রে আইনের দুর্বল ভিত্তি হওয়ায় জুয়াড়ীরা সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে, জুয়া খেলায় ধরা পরলে মাত্র ৫০ টাকা জরিমানা আর ২দিনের জেল খাটার বিধান রয়েছে আইনে৷ তবে মাদক, জুয়া ও অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে তাত্ক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে৷ রাঙামাটি জেলার লংগদু, কাউখালী, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি ও বরকল উপজেলা অধিক অপরাধ প্রবন৷ লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ নিয়োজিত থাকে, তাছাড়া, কর্নফুলী লেকের পাড়ে বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে৷ তাবুও নৌপথে যাতায়াতের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে চোরাচালান হয়৷ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) টহলের সময় এসব চোরাচালানকারীদের আটক করে মামলাসহ পুলিশের কাছে সোপর্দ করে৷
মো. শহীদ উল্ল্যা আরো বলেন, রাঙামাটি জেলায় ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে শোনা যায়, কিন্তু আমাদের কাছে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না দেওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছিনা৷ জেলা শহরে অপরাধ প্রবনতা কমানোর জন্য অপরাধীদের সনাক্ত করার জন্য রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার জন্য ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করেছে, ইতিমধ্যে এর সুফল পাওয়া গেছে৷ হ্রাস পাচ্ছে রাঙামাটি জেলার অপরাধ৷
রাঙামাটি জেলায় ৩ হাজারের অধিক পুলিশ বাহিনীর জনবলের জন্য রয়েছে মাত্র ২৪টি গাড়ি৷ যেকোন অপরাধ সংঘটিত হলে তাত্ক্ষনিক গাড়ির অভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনা৷ কাপ্তাই হ্রদে ও শহরে পুলিশের টহলের জন্য কোন যানবাহন নেই৷
তারপরেও পুলিশ প্রশাসন জেলাবাসীর নিরাপত্তা ও আইন শৃংখলা বজায় রাখার কাজ করছে নিরলসভাবে জানান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদ উল্ল্যা ৷