বুধবার ● ২ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » বেতাগী হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা রশীদ-উজ-জামানের বিরুদ্ধে ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
বেতাগী হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা রশীদ-উজ-জামানের বিরুদ্ধে ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
বরগুনা প্রতিনিধি :: বরগুনার বেতাগী উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা রশীদ-উজ-জামান ও অডিটর মো. মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষক ও পেনশন ভোগিদের হয়রানি করে ২৮ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি ও সাধারণের তেমন কিছু বলার সুযোগ না থাকলেও মানুষের মুখে মুখেই আলোচিত হচ্ছে। হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা রশীদ-উজ-জামান ও অডিটর মো. মোজাম্মেল হোসেনের যোগসাজশে এ টাকা আত্মসাত করায় অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারির মধ্যেও বিরোধের জন্ম দিয়েছে।
এদিকে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার দপ্তরে সাটানো নাম ফলকে আগ বাড়িয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাম লিখে ও পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন একাধিক ভুক্তভোগি এমনই অভিযোগ করেন ।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন এভাবে উৎকোচ আদায় করে আসলে এসব দেখার দায়িত্ব কাদের তা কারো জানা নেই।
এ উপজেলার শত শত শিক্ষক, সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারি বেতন ভাতা উত্তোলনের জন্য স্মরনাপন্ন হলে সুযোগসন্ধানী এই কর্মকর্তা অডিটরের সহায়তায় নানা অজুহাত তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে মাসের পর মাস হয়রানির চেয়ে উৎকোচ দিয়ে হলেও তাৎক্ষনিক টাকা পাওয়াটাই মুখ্য হয়ে উঠে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্ভিস বহিতে টাইম স্কেল ও উন্নীত স্কেলে বেতন নির্ধারনে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে ১৬০ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা, জাতীয় স্কেলে বেতন নির্ধারনে ১৬০ জনের নিকট থেকে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৬০ হাজার, সরকারি, নব সরকারি ২০০ শত শিক্ষকদের নিকট থেকে টাইম
স্কেল, উন্নীত স্কেল ও জাতীয় স্কেল সহ যাবতীয় বকেয়া বিল প্রদানে শতকরা ৫ টাকা
করে ৫ লাখ টাকা, চান্দখালী স: প্রা: বি: অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার
হাওলাদার, স: প্রা: বি: প্রধান শিক্ষক লুৎফুননেছা বেগম ও মধ্য বকুলতলী নব স: প্রা: বি: সহকারি শিক্ষক মো: রুহুল আমিনের নিকট থেকে জনপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা করে ১ লাখ ১০ হাজার,পূর্ব বেতাগী সরকারি প্রা:বি: অবসর প্রস্ততি মুলক ছুটি
(পিআরএল) নেয়া প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ হাওলাদার, দেশান্তরকাঠী স: প্রা: বি: সহকারি শিক্ষক মো: মুনসুর আলী, উত্তর বিবিচিনি প্রা: বি: সহকারি শিক্ষক কঙ্কন বালা,উত্তর জোয়ার করুনা স: প্রা: বি: সহাকারি শিক্ষক আব্দুস সোবাহান
মৃধা, মডেল স: প্রা: বি: সহাকারি শিক্ষক মোসা: হোসনে আরা বেগম, ফুলতলা সরকারি প্রা: বি: সহকারি শিক্ষক যায়েদা বেগম, নব পঞ্চায়েতের হাঁট সরকারি প্রা: বি: সহাকারি শিক্ষক মো: সাহাবুদ্দিন, নব কবি নজরুল সরকারি প্রা: বি: সহাকারি শিক্ষক হাবীবুর রহমান, নব সরকারি প্রা: বি: সহাকারি শিক্ষক আব্দুল আজিজ, স: প্রা: বি: প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান এদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২৫ হাজার
টাকা করে ২ লাখ ৫০ হাজার,জাতীয় স্কেলে বেতন নির্ধারন অনলাইন বাতিল করনে ২০০‘শ শিক্ষকের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫‘শ টাকা করে ১ লাখ, পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের ৫ জন প্রধান শিক্ষকের তৃতীয় টাইম স্কেলে বেতন নির্ধারনে জন প্রতি ৮ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
নিকট থেকে ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার কল্যান সহকারী (এফডব্লুএ) আলেয়া বেগম, চারু বালা বিশ্বাস, আলেয়া খানমের অবসর ভাতা গ্রহনে তাদের নিকট থেকে জন প্রতি ৩৫ হাজার টাকা
করে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা উৎকোচ আদায় করেন।
মিনারা বেগম, হাসিনা আক্তার জাহান, মমতাজ বেগম, হাসিনা বেগম, অরুন দ্রুতি হাওলাদার ও অফিস পিওন রুস্তম আলী ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের পরিসংখ্যান বিদ আব্দুল আজিজ অবসর কালীন ছুটি ভাতা নিতেও তাকে উৎকোচ দিতে হয়।
পূর্ব ফুলতলা নব সরকারি প্রা: বি: প্রধান শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান সিদ্দিকীর উন্নীত স্কেল বেতন পুন: নির্ধারনে ১২ হাজার টাকা দাবি করে টাকা না দেওয়ায় ফাইল আটকে রাখা হয়েছে। গড়িয়া বুনিয়া নব স:প্রা: বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামের টাইম স্কেল ও উন্নীত স্কেলে বেতন নির্ধারনের পর চাহিদা অনুয়ায়ী উৎকোচ না দেওয়ায় সার্ভিস বই সহ তাকে তলব করে।
এসময় বইয়ের অনুমোদিত দ্বিতীয় টাইম স্কেলের স্থানে লাল কালি ব্যবহারের মাধ্যমে কেটে বাতিলের পর চাহিদা পূরন করায় তা আবার পেছনের তারিখে অনুমোদন করেন। যার স্বাক্ষ্য সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
এ বিষয় ওই বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা একে অপরকে দায়ী করলেও উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা রশীদ-উজ-জামান ও অডিটর মো. মোজাম্মেল হোসেন হয়রানি ও উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা রশীদ-উজ- জামানের দপ্তরে সাটানো নাম ফলকে
বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিচয় জানান দিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন। তার বাড়ি ঝালকাঠীর কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া গ্রামে। পিতা: আজাহার আলী। বিএনপি জামাত জোট
সরকারের সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রকাশিত অতিরিক্ত গেজেট অনুযায়ী তার ক্রমিক নং-৬৭৯,তারিখ: ১৭ এপ্রিল ‘২০০৫ ।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক সরকারি এক কর্মকর্তা জানান, খ্যাতিমান ব্যক্তি হলেও চাকরির পদমর্যাদা ব্যতীত নাম ফলকে স্বাভাবিকভাবে অন্য উপাধি ব্যবহার না করাই উৎকৃস্টতা। কারন মানুষ অন্য চোখে দেখলে সংশ্লিস্ট ক্ষেত্রের সেবা ব্যহত হতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক শিক্ষক,কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা এমনই অভিযোগ করেন, তিনি নিজের অপরাধ আড়াল করার জন্য আগ বাড়িয়ে অফিসের নাম ফলকে বীর মুক্তিযোদ্ধা লিখেছেন ও পরিচয় দিচ্ছেন। যাতে কেউ কিছু বলতে ভয় পায় ও শঙ্কা বোধ করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী তার এ ধরনের কর্মকান্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারের পরে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারেন না।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম পিন্টু অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিয়ে ঘুষ নেন ডাক দিয়ে।
জানাগেছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকার তার পদোন্নতি ও চাকুরি বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করায় গত ২৬ জুন‘২০১৬ তিনি এ উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহন করে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম,এম মাহমুদুর রহমান বলেন, অর্থ নেওয়ার এ ধরনের কোন অভিযোগ আমি এখনো পাইনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিস্টের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান কবির জানান, বলতে কোন দ্বিধা নেই। কর্মজীবীদের জিম্মী করে নি:সন্দেহে তারা ভুক্তভোগিদের পকেট কাটছেন।