বুধবার ● ২ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রথম ক্যাঙ্গারু শাবক
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রথম ক্যাঙ্গারু শাবক
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথম জন্ম নিয়েছে ক্যাঙ্গারু শাবক৷ রেড (হলদে লাল) পুরুষ আর ধূসর বর্ণের নারী দম্পতি প্রায় দুই বছর পর একটি ধূসর বণের্র মেয়ে ক্যাঙ্গারু শাবকের জন্ম দিয়েছে৷ এটাই দেশের প্রথম ক্যাঙ্গারু শাবক৷
২০১৪ সালের আগস্টে ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে সুদূর আফ্রিকা থেকে কিনে আনা হয় একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু৷ পরে এদের বিচরণের জন্য সাফারি পার্কে বেষ্টনীর ভেতর ছেড়ে দেয়া হয়৷ প্রায় দুই বছর পর এবার বেষ্টনী আলোকিত করে এলো ক্যাঙ্গারু শাবকটি৷ ক্যাঙ্গারু ছানাটি গত মে মাসে জন্ম নিলেও রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয় বলে জানিয়েছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ৷
সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী তত্ত্বাবধায়ক আনিসুর রহমান বলেন, জন্মের পর থেকে মায়ের থলেতেই ছিল ছানাটি৷ দুই মাস আগে থলে থেকে বের হলে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়৷
তিনি জানান, ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রেড ক্যাঙ্গারু প্রজাতির দুটি নারী ও একটি পুরুষ আনা হয়৷ দুটি মেয়ের মধ্যে একটি গত ৪ মে বাচ্চা প্রসব করে৷ গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে বাচ্চাটি থলে থেকে বের হয় বলেও জানান তিনি৷
সাফারি পার্কের আরেক বন্যপ্রাণী তত্ত্বাবধায়ক সরোয়ার হোসেন খান জানান, প্রাপ্তবয়স্ক ক্যাঙ্গারুগুলোকে এখানে বরবটি, পালংশাক, গাজর, পাকা কলা, আপেল, শসা, কচি ঘাস খেতে দেয়া হলেও বাচ্চাটিকে আলাদা কোনো খাবার দেয়া হচ্ছে না৷ সে মায়ের দুধই খাচ্ছে৷ ক্যাঙ্গারু ছানা সাধারণত ২৩০-২৩৫ দিনের মতো মাতৃদুগ্ধ পান করে বলেও জানান তিনি৷
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী ক্যাঙ্গারুর মূল আবাসস্থল অস্ট্রেলিয়ায়৷ এছাড়া পাপুয়া নিউ গিনি, তাসমানিয়ার আশপাশের দ্বীপগুলোতে এদের দেখা যায়৷ প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্যাঙ্গারু ১২ থেকে ১৬ বছর এবং আবদ্ধ অবস্থায় ২০ বছর পর্যন্ত বাঁচে৷ পৃথিবীতে ৫০ প্রজাতির ক্যাঙ্গারু আছে বলে এ পার্ক কর্মকর্তা জানান৷
সরোয়ার হোসেন বলেন, সুস্থ-সবল ক্যাঙ্গারু দুই বছরে তিনবার বাচ্চা প্রসব করে৷ এরা প্রজননের জন্য মিলিত হওয়ার মাত্র ৩৩ দিনের মধ্যে বাচ্চা দেয়৷ প্রসবের সময় ক্যাঙ্গারু ছানার আকার থাকে তিন-চার সেন্টিমিটার৷ লোমহীন ও গোলাপি রঙের শাবক মায়ের থলের ভেতরেই আড়াই/তিন মাস অবস্থান করে দুধ পান করে৷ চার মাস বয়স হলে গায়ে লোম ও হাত-পা দৃশ্যমান হয় এবং চলাফেরা করতে পারে৷ তখনই সে থলে থেকে বাইরে বের হয়ে আসে৷
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, পার্কের ক্যাঙ্গারু দম্পতির ঘরে বাচ্চা এসেছে৷ এর আগে গত বছর সিংহীরাও ১৪টি বাচ্চা প্রসব করে৷ কিছুদিন আগে সাদা ময়ূর পাঁচটি বাচ্চা দিয়েছে৷ সব কিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই জিরাফ ও সিংহ দম্পতির সংসারে নতুন অতিথি আসবে৷
পার্ক-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বহু প্রতীক্ষার পর এ ক্যাঙ্গারু দম্পতি একটি ফুটফুটে শাবক জন্ম দিয়েছে৷ এ শাবক দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন কৌতূহলী দর্শনার্থীরা৷ ২ নভেম্বর মঙ্গলবার পার্কেও ক্যাঙ্গারু বেষ্টনিতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাঙ্গারু ছানাটি সারাক্ষণই বেষ্টনীর ভেতরে ছোটাছুটি করছে৷ কখনো মায়ের পেটের নিচের থলির ভেতর স্থির থাকছে, আবার কখনো থলি থেকে বের হয়ে মা-বাবার সঙ্গে খেলা করছে৷ সে মায়ের পিছু কিছুতেই ছাড়ছে না৷ মা যে দিকে যাচ্ছে শাবকটিও সেদিকে যাচ্ছে৷