বুধবার ● ২ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » ঢাকা » সাইবার অপরাধ শনাক্ত, উদ্ঘাটন সহায়ক হিসাবে ৩১টি মোবাইল ট্র্যাকার বসানো হচ্ছে
সাইবার অপরাধ শনাক্ত, উদ্ঘাটন সহায়ক হিসাবে ৩১টি মোবাইল ট্র্যাকার বসানো হচ্ছে
দেশের ২৬ জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বসছে ফোনে আড়িপাতা যন্ত্র। ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবসক্রাইভার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) বা মোবাইল ট্র্যাকার নামের এ যন্ত্রটি জেলাগুলো ছাড়াও খুলনা মেট্রোপলিটন, সিলেট মেট্রোপলিটন, বরিশাল মেট্রোপলিটন, পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন শাখা ও গোপনীয় শাখায় বসানো হবে। সব মিলিয়ে জেলা ও মহানগরগুলো মিলিয়ে ৩১টি মোবাইল ট্র্যাকার বসানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর মনে করছে, আড়িপাতা যন্ত্রগুলো কেনা হলে সাইবার স্ট্যাকিং, সাইবার হুমকিসহ অন্যান্য সাইবার অপরাধ শনাক্ত, উদ্ঘাটন, তদন্ত ও তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারি মামলার তদন্ত, অপরাধী শনাক্ত করা, গ্রেপ্তার ও অপরাধ উদ্ঘাটনের সহায়ক হবে যন্ত্রটি।
একই সঙ্গে ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গোয়েন্দা কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে এ মোবাইল ট্র্যাকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশ বিভাগে সাতটি মোবাইল ট্র্যাকার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে একটি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে একটি, রাজশাহী মেট্রোপলিটনে একটি, সিআইডিতে একটি, পিবিআইতে একটি ও র্যাবে দুইটি আইএমএসআই বা মোবাইল ট্র্যাকার রয়েছে।
এদিকে নতুন করে ৩১টি মোবাইল ট্র্যাকার কেনার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ। গত ৩১শে আগস্ট পুলিশ বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে ট্র্যাকারগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টারস। টিওএন্ডইভুক্ত হলেই দামি এ যন্ত্রটি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ই ডিসেম্বর এক চিঠিতে মোবাইল ট্র্র্যাকার কেনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পুলিশ সদর দপ্তরের ওই চিঠিতে বলা হয়, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় দ্রুত, কার্যকর ও নিরাপদ অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বিভাগের অভিযান কার্যক্রমে সক্ষমতা বাড়াতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ৩৩টি ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবসক্রাইভার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) বা মোবাইল ট্র্যাকার কেনা প্রয়োজন।
পুলিশ বিভাগের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে (টিওএন্ডই) মোবাইল ট্র্যাকার অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এর ভিত্তিতে এ বছরের ১০ই জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৭ই ফেব্রুয়ারি ফিরতি এক চিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৩টি ট্র্যাকার কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ গত ৭ই এপ্রিল চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেট্রোপলিটনের জন্য একটি করে দুইটি মোবাইল ট্র্র্যাকার পুলিশ অধিদপ্তরের টিওএন্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করার সম্মতি দেয়।
গত ৩১ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ইকুইপমেন্ট) মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতার কৌশল ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় রূপ নিচ্ছে। প্রতিনিয়তই জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন কৌশলে তাদের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর উপরও অপরাধী/জঙ্গিরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে আক্রমণ পরিচালনা করছে। বিশেষ করে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীসহ বিদেশি নাগরিকদের উপর জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আক্রমণের বিষয়টি স্পষ্ট। পুলিশের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতির অভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের এসব অপতৎপরতা নির্বিঘ্নে চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর জানমাল, সরকারি সম্পদ, নিরীহ জনগণ এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
এসব জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতার দ্রুত, কার্যকর ও নিরাপদ অপারেশন পরিচালনার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ৩১টি ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবসক্রাইভার আইডেনটিটি (আইএমএসআই) বা মোবাইল ট্র্যাকার জরুরিভিত্তিতে কেনার জন্য পুলিশ বিভাগের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। চিঠিতে বলা হয়, মোবাইল ট্র্যাকার যন্ত্রটি পুলিশ বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে ব্যবহার অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতি। এ কারণে জেলাগুলো ও এর আশেপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যদের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য এ যন্ত্রটি প্রয়োজন। টিওএন্ডইতে মোবাইল ট্র্যাকার অন্তর্ভুক্তির পেছনে যুক্তি তুলে পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর উপরও অপরাধী/জঙ্গিবাদীরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে আক্রমণ করতে পিছপা হচ্ছে না। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীও অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী চক্র বিভিন্ন ধরনের আইসিটি ডিভাইস যেমন- মোবাইল ফোন, ফেসবুক, টুইটার, ই- মেইল, ভাইভার, হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালিয়ে থাকে। সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তি বিশেষত টুজি, থ্রিজি এবং সর্বাধুনিক ফোর জি প্রযুক্তির মোবাইল ফোন অপরাধ ও অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বেশি ব্যবহৃত। তাই অপরাধের কারণ অনুসন্ধান, অপরাধী শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন কাজে দ্রত ও অতি অল্প সময়ে নিখুঁতভাবে আসামি বা অপরাধীকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজনে মোবাইল ট্র্যাকার অত্যন্ত কার্যকরী যন্ত্র।
এ যন্ত্রের সাহায্যে পাঠানো তথ্য দিয়ে মোবাইল ফোনসহ অপরাধীর অবস্থানকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টিওএন্ডইভুক্ত হয়ে গেলে আড়িপাতার লটটি কেনা হবে। সহসাই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। সূত্র : মানবজমিন