শুক্রবার ● ৪ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষকের বাসায় ডিজিটাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা
স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষকের বাসায় ডিজিটাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২০ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.১০মি.) শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর থাকলেও ব্লাকবোর্ডে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক৷ টেবিলে সাজানো কম্পিউটারগুলো অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে ব্যবহার না করার কারণে৷ যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও অফিসের কাগজপত্র টাইপের কাজে৷ কোনো কোনো স্কুলের শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে কম্পিউটার বাসায় নিয়ে গেছেন !
এতে ডিজিটাল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা৷ সব মিলিয়ে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের কাজে লাগছে না৷
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কম্পিটারে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে ল্যাব, কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর৷
এসব কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানে ব্যবহার হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে৷ বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিসের কাগজপত্র টাইপের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ল্যাপটপগুলো কোনো কোনো শিক্ষক বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন৷ সরকারের নির্দেশ আছে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা দান করানোর৷ কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের সেই নির্দেশ মানছে না৷
ঝিনাইদহ সরকারি বয়েজ স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের স্কুলে যে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে৷ যেগুলো সচল আছে৷ সেগুলো শিক্ষকরা অধিকাংশ সময় ব্যবহার করেন৷ আমাদের কোনো কাজে লাগে না৷ কম্পিউটার না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যা হয়, অধিককাংশ শিক্ষার্থী ভালো মতো কম্পিউটার শিখতেও পারে না৷
ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক ছাত্রীরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে যে ল্যাব ছিল তা অচল৷ আইসিটি ক্লাস করি শুধুমাত্র বই পড়ে৷ কম্পিউটার না থাকায় সেগুলো মুখসত্ম করতে হচ্ছে৷
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রজেক্টর চুরি হয়ে গেছে৷ যেকারণে সেখানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া বন্ধ রয়েছে৷ এছাড়া সদর উপজেলার হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে৷
ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে কয়েকটি নষ্ট হয়ে গেছে৷ কয়েকটি সচল আছে, তা অফিসের কাজ আর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷
এদিকে ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার বিশ্বাস সাংবাদিককে বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে যে ল্যাব দেওয়া হয়েছিল, তা ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে৷
কম্পিউটারগুলো যা মেরামতের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি৷ সদর উপজেলার মাওলানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা ব্লাকবোর্ডে ক্লাস নিচ্ছেন৷ বন্ধ রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ল্যাপটপটি রয়েছে প্রধান শিক্ষকের টেবিলে৷
মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক আমানত হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে যে কক্ষগুলো রয়েছে তা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার উপযোগী না৷ মাঝে মধ্যে দু’একটি ক্লাস নেওয়া হয়৷
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মফিজুর রহমান আকাশ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে বুঝতে পেরেছি, প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া কম হচ্ছে৷ এর কারণ শিক্ষকদের অজ্ঞতা আর প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো সমস্যা বলে মনে হচ্ছে৷
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকছেদুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষ করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জেলা শিক্ষা অফিস৷ কেউ যদি কম্পিউটারগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগুলোতে সরকার থেকে ৪ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ, কম্পিটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেওয়া হয়েছে৷
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৭ জন৷