মঙ্গলবার ● ২৭ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » বিবিধ » বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা যুগিয়েছে
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা যুগিয়েছে
এস.এম জহিরুল ইসলাম :: বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম হাওলাদার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক৷ দেশ স্বাধীন করতে, পাকিস্তানীদের দুঃশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ সমপ্রতি তার ঢাকাস্থ বাসভবনে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা যুগিয়েছিল৷ পরবর্তী সময়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে পেয়ে আরও পুরো উদ্যমে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বাঙালিরা৷ আবুল হাসেম হাওলাদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেছি৷ যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন৷ যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে ক্যাপ্টেন ভুঁইয়া ও আ.স.ম আব্দুর রব তাকে বঙ্গবন্ধুর ৩২নং বাড়ীতে নিয়ে যান৷ সেখানে মুক্তিযুদ্ধ কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ বঙ্গবন্ধু বলেন, এই মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জন্য একটা চ্যালেঞ্জ৷ তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর এ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে৷ বঙ্গবন্ধু সেদিন তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশকিছু পরামর্শ প্রদান করেন বলে আবুল হাসেম হাওলাদার তার স্মৃতিতে উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ২৩ মার্চ সেনাবাহিনী পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ২৪ মার্চ থেকে সেনানিবাসগুলোতে উত্তেজনা শুরু হয়৷ ২৮ মার্চ এই বিদ্রোহ যুদ্ধ আকারে রূপ নেয়৷ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার পর মেজর জলিলের নেতৃত্বে বরিশাল জেলার হিজলা-মুলাদী-মেহেন্দিগঞ্জ এলাকায় যুদ্ধ করি৷ যুদ্ধের আলোচিত ঘটনা হিসাবে আবুল হাসেম হাওলাদার বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ছবিপুর নদীর উপর দিয়ে ৩টি বোর্ড নিয়ে পাকিস্তানী আর্মিরা যাচ্ছিল৷ আমরা সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা মাত্র ৩টি অস্ত্র দিয়ে ঐ বোর্ডের উপর গুলি চালাই৷ ২টি বোর্ড ফেলে রেখে ১টি বোর্ড নিয়ে পাকিস্তানী যোদ্ধারা পালিয়ে যায়৷ ফেলে যাওয়া ১টি বোর্ড আবুল হাশেম হাওলাদার গুলি করে ডুবিয়ে ফেলে৷ সেই বোর্ডটি এখনও ছবিপুর নদীতে মুক্তিযুদ্ধের স্বাক্ষী হয়ে আছে৷ মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ স্মৃতি হিসাবে আবুল হাশেম হাওলাদার বলেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় পাক আর্মিদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করতে গিয়ে আমরা ৮জন বাঙালি যোদ্ধাকে হারাই৷ তখন সবাই মনে করেছিল ঐ যুদ্ধে আমিও শহীদ হয়েছি৷ কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেঁচে যাই৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আবুল হাশেম হাওলাদার বলেন, তারা যেহেতু সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, সেহেতু সব অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ তাদের ছিল৷ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত থেকে প্রচুর পরিমান অস্ত্র তখন আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে৷ আমরা তখন শাহাজাহান ওমর বীর উত্তমের নেতৃত্বে বাবুগঞ্জের একটি বিলের মধ্য ক্যাম্প তৈরী করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি৷ নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আবুল হাসেম হাওলাদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ কেউ বিকৃত করে উপস্থাপন করছে৷ এর থেকে সজাগ থাকতে হবে৷ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে৷ আবুল হাসেম হাওলাদারের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার সফিপুর গ্রামে৷ বর্তমানে ঢাকার গেন্ডারিয়া থানাধীন হরিচরন রায় রোডের স্থায়ী বাসিন্দা৷ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সমাজসেবক৷ এলাকার এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা নেই যেখানে আবুল হাসেম হাওলাদারের দেয়া অনুদান নেই৷ ব্যক্তিগত জীবনে তার ৪ ছেলে ১ মেয়ে৷ বাবা মরহুম আব্দুল কাদের হাওলাদার মাতা শামসুন্নেহা৷ তার ৩ ছেলে বর্তমানে জাপানে কর্মরত আছে৷ তিনি ইতিপূর্বে একবার সফিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং একটি রাজনৈতিক দলের উপজেলার শীর্ষ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷