সোমবার ● ৭ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভোগান্তিতে রোগীরা
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভোগান্তিতে রোগীরা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে লোকবল সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে চিকিত্সা সেবা কার্যক্রম ৷ ফলে ঠিকমত সেবা দিতে পারছে না চিকিত্সকরা ৷ বিভিন্ন কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্বে বাইরে থেকে ঔষধ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে ৷ ফলে সঠিক সেবা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা ৷ ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি চলছে ১০০ শয্যার জনবল নিয়ে ৷
এদিকে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে প্রতিদিনই লেগে থাকে ইজি বাইকের দীর্ঘ লাইন৷ কখনও কখনও পরিস্থিতি এমন হয়ে দাড়ায় রোগীও প্রবেশ করতে পারে না হাসপাতালে৷ শুধু রোগী নয়, এ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিস কোন গাড়িই ঠিকমত হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারেনা ৷
ঝিনাইদহ জেলার মানুষের চিকিত্সা সেবার জন্য ১৯৬৮ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়৷ হাসপাতালটি এখন শয্যা, জনবল, চিকিত্সক সংকট সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জোরিত৷
বর্তমানে এটি চলছে ১০০ শয্যা দিয়ে, যদিও ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উনি্নত করণের ঘোষণা দেন৷ এরপর কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি কার্যক্রম ৷ কবে শুরু হবে তাও বলতে পারেন না কেউ ৷
বহিঃর্বিভাগের ডাক্তারদের সিরিয়ালের জন্য টিকিট কাউন্টারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইনবহিঃ র্বিভাগের ডাক্তারদের সিরিয়ালের জন্য টিকিট কাউন্টারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ লাইন প্রতিদিন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আসেন চিকিত্সা সেবা নিতে৷ বহিঃ বিভাগ, জরূরী বিভাগ ও ভর্তি হয়ে চিকিত্সা সেবা নিচ্ছে রোগীরা ৷ কিন্তু মিলছে না কাঙ্খিত সেবা ৷
বহিঃ বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য সিরিয়াল করতে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় রুগীদের ৷ এখানেই শেষ নয় ভোগান্তি৷ বহিঃ বিভাগে বিপুল সংখ্যক রোগীকে গাদাগাদি করে দেখাতে হয় ডাক্তার ৷ বেড না পাওয়ায় ভর্তি রোগীদের স্থান হচ্ছে মেঝেতে৷
ডাক্তাররা সরকারী ঔষধ না লিখে বাইরে থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষধ লেখেন বলে অভিযোগ রোগীদের ৷ রোগীদের সাথে কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুঃব্যবহার তো রয়েছেই ৷ বিদ্যুত্ চলে গেলে ১ ঘন্টা চলার পর আর চলেনা একমাত্র জেনারেটর ৷ এসময় থেমে থাকে সব ধরনের অপারেশন কার্যক্রম ৷
হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের স্থলে আছে ১১ জন, ১৭ জন মেডিকেল অফিসারের স্থলে আছে ১০ জন৷ হৃদরোগ ও মেডিসিনে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের স্থলে আছে মাত্র ১জন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ৷
প্রতিটি বিভাগে ১ জন করে নার্স দায়িত্ব্ব পালন করছেন৷হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তাররা ঠিকমত রোগী দেখেন না ৷ নার্সদের কাছে কোন প্রয়োজনের গেলে তারা খুব খারাপ ব্যবহার করে৷
ডাক্তাররা হাসপাতালে অপারেশন না করে আমাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে বাইরের ক্লিনিকে ৷ পরে হাসপাতালের ডাক্তাররাই সেখানে গিয়ে আবার অপারেশন করছেন ৷ সিট না পাওয়ায় আমাদের স্থান হচ্ছে মেঝেতে, ফলে রোগী সুস্থতার বদলে অস্বুস্থ হয়ে পড়ছে ৷
রোগীরা আরো জানান, সরকারী হাসপাতালে ফ্রি ঔষধ দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ডাক্তারই যে ঔষধ লেখেন তা আমাদের বাইরে থেকে কিনে খেতে হয় ৷ সদর হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য আনিছুর রহমান খোকা জানান, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রিফ্রিজেন্টেটিভদের দৌরাত্ব মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে ৷
এই দৌরাত্ব এখনই থামানো না গেলে ভবিষ্যতে দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে জানান তিনি ৷ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোকাররম হোসেন জানান, চিকিত্সক কম থাকায় আমরা ঠিকমত সেবা দিতে পারি না ৷ কেননা যে পরিমান চিকিত্সক আমাদের দরকার সেই পরিমাণ চিকিত্সক নেই ৷
ফলে একজন চিকিত্সকের দারা তো ভাল করে এত রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব নয় ৷ তবে ব্যাপক সমস্যার কথা স্বীকার করে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম জানান, হাসপাতালে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে ৷ সমস্যা গুলো একদিনে তো সমাধান করা সম্ভব নয় ৷ তাই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যা গুলো আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি ৷
২০১৬ সালের জানুয়ারী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার রোগী ভর্তি হয়ে এবং বহিঃ বিভাগ ও জরুরী বিভাগ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ রোগী চিকিত্সা সেবা নিয়েছেন৷ প্রতিদিন ২ শতাধীক রোগী ভর্তি হয়ে এবং জরুরী ও বহিঃ বিভাগের মাধ্যমে অন্তত ১৩ থেকে ১৪ শ’ রোগী চিকিত্সা সেবা নিচ্ছে৷
তবে অচিরেই সকল সমস্যা মুক্ত হয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল আবারো মানুষের সেবার ক্ষেত্রে সব থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এমনটিই প্রত্যাশা ঝিনাইদহ জেলাবাসীর ৷