সোমবার ● ৭ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » এইচআইভি পজিটিভ মহিলাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হচ্ছে পাকিস্তানী জঙ্গিদের
এইচআইভি পজিটিভ মহিলাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হচ্ছে পাকিস্তানী জঙ্গিদের
অনলাইন ডেস্ক :: আত্মঘাতী জঙ্গির জোগানে ঘাটতি। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রবল গোলাগুলি এবং ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের জেরে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জঙ্গি পরিকাঠামোর। লোকক্ষয়ও হয়েছে প্রচুর। ফিদায়েঁ বাহিনীতে লোক বাড়াতে তাই নতুন পথ খুঁজেছে পাকিস্তান। জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত দাগী অপরাধীদের। তার পর ভারতে ঢুকে নাশকতা চালানোর জন্য তাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি এমনই তথ্য সামনে এনেছে।
৮০-র দশকের শেষ দিক থেকে আত্মঘাতী নাশকতার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। কখনও হিজবুল মুজাহিদিন, কখনও লস্কর-ই-তৈবা, কখনও জইশ-ই-মহম্মদ তাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে সেনার গুলিতে হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর উপত্যকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে আরও মরিয়া হয়ে জম্মু-কাশ্মীরে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে পাকিস্তান। পাক সেনা এবং আইএসআই লস্কর, হিজবুল, জইশকে এক সূত্রে গেঁথে নিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ানোর চেষ্টায় মেতে উঠেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সামরিক প্রস্তুতি বিপুল বাড়িয়েছে ভারতও। অনুপ্রবেশ রুখতে নিয়ন্ত্রণরেখায় রোজ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে সেনা-বিএসএফ। উপত্যকা জুড়েও চলছে জঙ্গিদমন অভিযান। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত সেনা অভিযানে অন্তত ৭২ জন জঙ্গি খতম হয়েছে বলে সেনা সূত্রের খবর। তার পরে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকও করেছে ভারতীয় বাহিনী। তাতেও জঙ্গি সংগঠনগুলির বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছরে ১০০ জনেরও বেশি জঙ্গি নিকেশ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংখ্যা নিয়ে কিছু মতান্তর থাকলেও জঙ্গি পরিকাঠামোর বিপুল ক্ষতি যে হয়েছে, তা নিয়ে কোনও মহলেই সংশয় নেই। ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে পাকিস্তান এখন দাগী অপরাধীদের কাজে লাগাতে শুরু করেছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান সংস্থা ম্যাক সূত্রে জানা গিয়েছে।
ম্যাক বা মাল্টি-এজেন্সি সেন্টার হল ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের একটি নোডাল সংস্থা। ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হানার পর এই সংস্থা তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে যে আলাদা আলাদা গোপন তথ্য এসে পৌঁছয়, সেই সব তথ্য সংস্থাগুলি যাতে পরস্পরের মধ্যে আদানপ্রদান করতে পারে, তার জন্যই ম্যাক তৈরি করা হয়েছে। শ্রীনগরে কর্মরত এক ম্যাক কর্তা একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দাগী এবং সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দিচ্ছে পাকিস্তান। তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন জঙ্গি শিবিরে। সেখানে প্রথমে তাদের মগজ ধোলাই হচ্ছে, ভারত-বিদ্বেষ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। তার পর ফিদায়েঁ প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতে নাশকতা চালানোর জন্য লঞ্চ প্যাডে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই নব্য জঙ্গিদের বলা হচ্ছে, ইসলামের স্বার্থেই কাশ্মীরে নাশকতা চালানো জরুরি। ভারতে নাশকতা চালিয়ে শহিদ হলে স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা খুলে যাবে বলেও এদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রণরেখার ও পারে এই মুহূর্তে অন্তত ৩০০ জঙ্গি ভারতে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে। ম্যাক সূত্রের খবর, এদের সকলকেই যে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে জঙ্গি বানানো হয়েছে, তেমন নয়। এদের ৭০ শতাংশই লস্কর, জইশ, হিজবুলের সদস্য। কিন্তু বাকি ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জেল থেকে ছাড়া পাওয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামী।
নাশকতা চালানোর জন্য এই আসামিদের পাকিস্তান ভারতে ঢোকানোর চেষ্টা করছে ঠিকই। কিন্তু তারা ভারতে ঢুকে আদৌ নাশকতা চালাবে নাকি এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে মুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করবে, সে বিষয়ে পাক সেনা ও আইএসআই নিশ্চিত হতে পারছে না। তাই নিয়ন্ত্রণরেখা পেরনোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাশকতা চালিয়ে মৃত্যুবরণ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এদের।
আরও পড়ুন: গোটা শহরের তলায় সুড়ঙ্গ-জাল, মসুল যেন এখন ভয়ঙ্কর চক্রব্যূহ!
জেল থেকে ছাড়া পাওয়া আসামিদের মধ্যে নতুন জীবন শুরু করার কোনও ইচ্ছাই যাতে না থাকে, তার জন্য একটি জঘন্য উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এইচআইভি পজিটিভ মহিলাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে এদের নাকি বাধ্য করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সুস্থ জীবন কাটানোর আর যে কোনও আশা নেই, এই ভাবে তা নিশ্চিত করার পর এই নব্য জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমটিই শ্রীনগরের ম্যাক কর্তাকে উদ্ধৃত করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে।
ছবি:নিয়ন্ত্রণরেখায় অতন্দ্র প্রহরা, সূত্র : আনন্দবাজার ।