বৃহস্পতিবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » আসামীদের শারীরিক নির্যাতন করায় অভিযুক্ত ঝিনাইদহ কারাগারের জেলার আদালতে স্বশরীরে হাজির
আসামীদের শারীরিক নির্যাতন করায় অভিযুক্ত ঝিনাইদহ কারাগারের জেলার আদালতে স্বশরীরে হাজির
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২৬ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪৫মি.) ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের জেলার দিদারুল আলম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে কারন দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব দিয়েছেন৷
শুনানী গ্রহন করা হলেও আদেশ হয়নি ৷ শুনানী মুলতবি করেছেন আদালত ৷ আরো অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী নির্দেশ দেয়া হবে মর্মে আদেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন ৷ ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে এ আদেশ দেন তিনি ৷
আদালত সুত্র সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানায়, ১০টা ৩৫ মিনিটে ঝিনাইদহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির হন জেলা কারাগারের জেলার মো. দিদারুল আলম ৷ আইনজীবি সমির কুমার কুন্ডুর মাধ্যমে কারন দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব দাখিল করেন তিনি ৷ এরপর প্রায় ১৫ মিনিট শুনানী শেষে আদালত মুলতবী করা হয় ৷ শুনানী কালে তার কাছে জামিন প্রাপ্ত বন্দিদের কিভাবে কারাগার থেকে মুক্ত করা হয় তা জানতে চান আদালত ৷
দিদারুল (জেলার) আরো বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেন এবং সব অভিযোগ অস্বীকার করেন ৷ শুনানীর এক পর্যায়ে আদালত কারাগার সংশ্লিষ্ট “প্যারালিগাল” নামের একটি সংস্থার নারী আইনজীবি ফারহানা আক্তারের কাছেও বিষয়টি জানতে চান ৷ এক পর্যায়ে শুনানী মুলতবী করা হয় এবং আরো অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে বলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. জাকির হোসেন নতুন করে আদেশ দেন ৷ এরপর জেলার দিদারুল আলম তার আইনজীবির সঙ্গে আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন৷
তার পক্ষে আইনজীবি এ্যাড সমির কুমার কুন্ডু সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, গত ৬ নভেম্বর রবিবার ঝিনাইদহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক এক আদেশ বলে জেলা কারাগারে বন্দিদের সাথে খারাপ ব্যবহার এবং মারপিট করার অভিযোগে জেলা কারাগারের জেলার মো. দিদারুল আলমকে মঙ্গলবার ৮ নভেম্বর সকাল ১০ টার মধ্যে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে কারন দর্শানোর নির্দেশ জারি করা হয় ৷ সেই মোতাবেক আইনজীবির মাধ্যমে জেলার স্বশরীরে আদালতে হাজির হন ৷
দিদারুলের আইনজীবি আরো বলেন, আদালতের নির্দেশ মতে কারন দর্শানোর নোটিশের লিখিত ভাবে জবাব দেয়া হয়েছে ৷ লিখিত জবাবে জেলার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি ৷ আদালত মামলাটির শুনানী মুলতবি করে আরো অধিকতর তদন্ত করে এ সংক্রান্তে পরবর্তী আদেশ দেবেন বলেও নিশ্চিত করেন জেলারের নিয়োগ করা এই আইনজীবি ৷
এদিকে ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ৫ নভেম্বর বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ এর সভাকক্ষে আয়োজিত জুডিসিয়াল কনফারেন্সে জেলারের বিরুদ্ধে বন্দিদের সাথে খারাপ ব্যবহার এবং মারপিট করা, যে দিন আদালত থেকে রিলিজ অর্ডার দেয়া হয় সেদিন আসামী কারাগার থেকে মুক্তি না দেয়াসহ নানা অভিযোগ বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন তিনি ৷
ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞ জেলা জজ মো. নবাবুর রহমান ৷ তিনি আরো বলেছেন সভার আলোচনার প্রেক্ষিতে গত রোববার ৬ নভেম্বর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্ব- প্রণোদিত হয়ে জেলারের বিরুদ্ধে একটি মিস মামলা দায়ের করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে স্বশরীরে হাজির হয়ে আইনের পরিপন্থি এসব কর্মকান্ডের কারনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ কেন দেয়া হবেনা, সেই মর্মে কারন দর্শানোর নির্দেশ জারি করেন ৷
এদিকে ১০ নভেম্বর জেলা আইনজীবি সমিতির একাধিক আইনজীবি জেলারের বিরুদ্ধে জারি করা কারন দর্শানোর নোটিশ জারির পক্ষে সরাসরি মত প্রকাশ করেছেন ৷ সিনিয়নর আইনজীবি এ্যাড. জাহাঙ্গীর কবীর ও এ্যড. রাকিবুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, কারাগারের জেলার দিদারুল আলম র্দীঘদিন ধরে আসামীদের ওপর নিপিড়ন নির্যাতন করে আসছেন ৷ এই দুই আইনজীবির দাবী জেলার আদালতে যে জবাব দাখিল করেছেন এটা সঠিক নয় ৷
সদর উপজেলার গড়িয়ালা গ্রামের মোমিন ও কালীগঞ্জের মন্টু শেখ সদ্য কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷ জেলারের নিপিড়নের চিত্র তারা নিজ নিজ আইন জীবির কাছে তুলে ধরেছেন ৷ নামাজ না পড়ার জন্য মন্টু শেখকে নিপিড়ন করেছেন জেলার ৷ গত মাসের ২৫ তারিখে আদালতের রিলিজ আদেশ পাওয়ার পরে ২৬ তারিখে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে মোমিনকে এমন তথ্য দিয়েছেন সংশিস্ন্লষ্টরা ৷
বিশেষ একটি সুত্র জানায় জেলারকে কেন্দ্র করে কারাগারে গুমট পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ দীর্ঘ ৩ বছর একই স্টেশনে চাকরি করার কারনে জেলা শহরের নানা মহলের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে৷ যে কারনে সে কারারক্ষিদের সাথে সর্বদা অসত্ আচরণ করে থাকে৷ নিজে বছরে দুই মাসের বেশী ছুটি ভোগ করলেও রক্ষিদের প্রয়োজনীয় ছুটি দেননা ৷
বন্দিদের চড়থাপ্পড় দেয়া এবং রক্ষিদের সাথে অসদাচরণ করা তার জন্য নিত্য দিনের ঘটনা ৷ ক্যান্টিনের আয়ের বড় অংশ তার পকেটে চলে যায়৷ সামপ্রতিক সময়ে কারাগারের অভ্যনত্মরে সংঘটিত এক সংঘর্ষে রেজাউল ইসলাম (৫০) নামের এক দন্ডপ্রাপ্ত কয়েদী নিহত হয়েছেন৷ এ নিয়ে অপর এক বন্দির বিরম্নদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন জেল সুপার গোলাম হোসেন৷
জেলার দিদারম্নলের বিরম্নদ্ধে করারক্ষি নং ৪২৬৮১ সহিদুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করেছেন৷ এ নিয়ে দায়সারা তদনত্ম হয়েছে৷ কাজের কাজ কিছুই হয়নি ৷ নাম প্রকাশ না করার সর্তে জনৈক কারারক্ষি বলেছেন বিভাগীয় তদনত্ম করে লাভ হবে না, বিচার বিভাগীয় তদনত্ম করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে ৷