শনিবার ● ১২ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » ৬৯ বছর পরও ১টি আঞ্চলিক সংগঠন ১৭ আগস্টকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবসরূপে পালন
৬৯ বছর পরও ১টি আঞ্চলিক সংগঠন ১৭ আগস্টকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবসরূপে পালন
মেহেদী হাসান পলাশ :: ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তার আগের দিন জন্ম হয়েছে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের। ভারত বিভাগে স্যার সিরিল র্যাড ক্লিফের বিভাজন রেখা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে। কিন্তু সেই ভাগ মেনে নিতে পারেনি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী চাকমা সম্প্রদায়ের একটি গ্রুপ। স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে এদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকে বাংলাদেশের রাঙামাটিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পাকিস্তান রেজিমেন্টের বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা এ ঘটনার ২ দিন পর রাঙামাটি থেকে ভারতের পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে। সেই থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তানের ভূখ- নিয়ে। সে হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি পাকিস্তানভুক্ত না হতো তাহলে তা বাংলাদেশেও অন্তর্ভুক্ত হতে ব্যর্থ হতো। ভারত ভাগের ৬৯ বছর পর হলেও বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক সংগঠন ও তাদের শাখা সংগঠনগুলো পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের রাঙামাটি থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভারতীয় পতাকা নামিয়ে দেয়ার দিন ১৭ আগস্টকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবসরূপে পালন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর থেকে ভারতে অবস্থিত চাকমা উপজাতিরা এদিনকে ব্লাক ডে বা কালো দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ ও এর বিভিন্ন শাখা সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, যুব ফ্রন্ট, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এর নেতৃবৃন্দ প্রতিবছর ১৭ আগস্টকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবস পালন করে থাকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এই কর্মসূচী পালিত হয়। ইউপিডিএফ সমর্থিত বলে পরিচিত স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিএইচটিনিউজ.কমে (chtnews.com) প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে এর সত্যতা পাওয়া যায়। ২০ আগস্ট ২০১৬ তারিখে সিএইচটিনিউজ.কমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়: “পাকিস্তান কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসনের ৬৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), ঢাকা শাখার উদ্যোগে ১৯ আগস্ট শুক্রবার বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কার্জন হল মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে’’। উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি ঢাকা শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা। সভায় মূল আলোচক ছিলেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা। এছাড়াও আলোচনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক বরুণ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী নিরূপা চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিনয়ন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পিসিপি ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়েল ত্রিপুরা। সভায় ইউপিডিএফ নেতা নতুন কুমার চাকমা তাঁর বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবসের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন’ (১৮ জুলাই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গৃহীত) মোতাবেক দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ নিয়ে পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অমুসলিমদের নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হয়। সে সময়ে শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান রাষ্ট্রে যোগ দিতে চাইনি। দেশ ভাগের সময় তৎকালীন জনসমিতির সাধারণ সম্পাদক স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজধানী রাঙামাটিতে ব্রিটেনের ইউনিয়ন জ্যাক-এর পরিবর্তে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তৎকালীন ইংরেজ জেলা প্রশাসক কর্ণেল জি. এল. হাইড নিজেও উক্ত পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পতাকায় স্যালুট করেন। পরে কর্ণেল হাইড নিজের দপ্তরেও আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। অন্যদিকে বন্দরবান সদরে বোমাং রাজ পরিবারের উদ্যোগে উত্তোলিত হয় বার্মার পতাকা। ভারত-পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হওয়ার পর ১৭ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম অংশটি পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে দিয়ে ম্যাপে প্রদর্শিত হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরবর্তীতে ২০ আগস্ট পাকিস্তানের বালুচ রেজিমেন্ট এক সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকে নামিয়ে দেয় স্থানীয় অধিবাসীদের উত্তোলিত পতাকা। সূচনা হয় আগ্রাসী অপশক্তির দখলদারিত্বের নতুন ইতিহাস। এই দখলদারিত্বের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের পর পাকিস্তানি শাসকরা যে শোষণ-নির্যাতনের জোয়াল পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল তা আজ ৬৯ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও জারি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পতাকা উত্তোলন যে কোন সাধারণ নিছক একটি ঘটনা ছিল না তা ১৯ আগস্ট ডিসি বাংলোতে ডিসি কর্ণেল হাইড-এর উপস্থিতিতে চাকমা রাজাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকটিই তার প্রমাণ। উক্ত বৈঠক থেকে বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনের প্রধান সিরিল র্যাডক্লিফ-এর পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত না মানার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এসময় তিনি তৎকালীন জনসমিতির নেতৃত্ব পাকিস্তানের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন। ইউপিডিএফ নেতা ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্বের বুকে সম্মান-মর্যাদার সহিত মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অবশ্যই সকলকে সংগ্রামী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। আলোচনা সভায় ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। শুধু ঢাকা নয়, খাগড়াছড়ি সদরেও একই দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান করে সংগঠনটি। সিএইচটিনিউজের ২০ আগস্ট ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, ‘নব্য বেলুচ রেজিমেন্ট সম্পর্কে সজাগ হোন! ধর্মের লেবাসধারী পাকিস্তানি চরদের প্রতিরোধ করুন’ এই শ্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তান আগ্রাসনের ৬৯ বছর উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন জেলা কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০ আগস্ট সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে অনুষ্ঠিত সভায় পিসিপি’র জেলা সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ডিওয়াইএফ জেলা সভাপতি লালন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র সংগঠক রিকো চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন জেলা দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয়া চাকমা। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন পিসিপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অলকেশ চাকমা। বক্তারা বলেন, ২০ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের জন্য একটি অভিশপ্ত দিন বা ‘কাল দিবস’। ১৯৪৭ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী ‘বেলুচ রেজিমেন্ট’ সশস্ত্র আগ্রাসনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা গুঁড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। একই অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, ২০ আগস্ট, ২০১২ সালে খাগড়াছড়িতে, রামগড়ে, ২০ আগস্ট, ২০১৩ সালে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে, ২০ আগস্ট ২০১৪ সালে ঢাকায়, ১৯ আগস্ট ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে এ দিবস পালন করে। তবে বাংলাদেশে পিসিপি দিনটিকে আগ্রাসন দিবস হিসেবে পালন করে আসলেও এ বছর থেকে সারা ভারতে দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। ২০১৬ সালের ২৪-২৫ মার্চ আসামের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার প্রথম জাতীয় অধিবেশনে এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে সমগ্র ভারতের চাকমা জনগোষ্ঠী প্রতি বছর ১৭ আগস্টকে ব্লাক ডে পালনের আহ্বান ঘোষণা দেন। সে মোতাবেক ১৭ আগস্ট ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো বিশেষ করে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল এবং দিল্লী, বেঙ্গালুরুসহ যেসব রাজ্যে চাকমা জনগোষ্ঠী বসবাস করে তারা একসাথে ব্লাক ডে বা কালো দিবস পালন করে। সেভেন সিস্টার্স থেকে প্রকাশিত গণমাধ্যমসহ ভারতের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ফলাও করে চাকমাদের এই ব্লাক ডে পালনের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের যুগশঙ্খ পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সংস্থার ত্রিপুরা কমিটির পক্ষ থেকে গত ১৭ আগস্ট) আগরতলায় প্রেস ক্লাবের সামনে কালো দিবস পালনের অঙ্গ হিসেবে একটি ধর্ণা কর্মসূচী নেওয়া হয়। এখানে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ উপলক্ষে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে চাকমারা। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়,‘বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলকে নিজেদের মূল ভূখ- বলেই মনে করে থাকে চাকমা জনগোষ্ঠীর মানুষজন। কিন্তু তাদের জোর করে সেই ভূখ- থেকে উৎখাত করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধেই তীব্র প্রতিবাদ কর্মসূচী গ্রহণ করে ‘চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ আহ্বান জানায় ‘ব্লাক ডে’ পালনের। সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দিবস পালনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, এবছর থেকে প্রতি বছর উত্তর-পূর্ব ভারতে বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকেদের দ্বারা ১৭ আগস্ট দিনটি কালো দিবস হিসেবে প্রতিপালিত হবে। এই সিদ্ধান্তটি ঘোষিত হয়েছে গত ২৪-২৫ মার্চ আসামের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার প্রথম জাতীয় অধিবেশনে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী কালো দিবসটি একযোগে পালিত হয় আসাম, মিজোরাম, অরুণাচল ও ত্রিপুরায়। এছাড়া এই দিনটি কলকাতা, নয়া দিল্লী, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালুরু ইত্যাদি শহরেও প্রবাসী ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মসূত্রে বসবাসকারী সেখানকার চাকমাদের উদ্যোগে পালিত হয়েছে। কালো দিবস পালনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংগঠনের নেতৃত্বরা জানিয়েছেন, ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্টের রাতটি ছিল সমগ্র চাকমা জনসমাজের পক্ষে চরম দুঃস্বপ্নময় রাত এবং আরও একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা। সেদিন থেকে আজ অবধি ৭০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও চাকমা সমাজ যে প্রশ্নটির সদুত্তর খুঁজে ফেরে, সেই প্রশ্নটি হচ্ছে, কোন্ নীতি অনুসরণ করে বেঙ্গল বাউন্ডারী কমিশন ৯৮.৫ শতাংশ অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল। ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে শান্তি বিকাশ চাকমা বলেন,«The Chakmas, living in other parts across the country, like Bangalore, Mumbai and Delhi, will also observe the day in a similar manner,” দিবসটি পালনের প্রেক্ষাপট হিসেবে তিনি বলেন, on August 17, in 1947, when the rest of India had been celebrating the new-found independence, the Baloch regiment of the Pakistani army had invaded Chittagong Hill Tracts and pulled down the Indian flag raised atop the Chakma king’s royal palace in Rangamati. “ “According to the Partition formula, the Chittagong Hill Tracts, which had 97.5 percent population of the indigenous communities, should have been included in India and this is what the Buddhist tribals had been hoping for. Even the late king Tridib Roy had raised the Indian flag atop the royal palace but it was pulled down by the officers of the Baloch regiment on August 17,” said Chakma. নর্থ ইস্ট টুডে পত্রিকায় এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ““The Chakma community of the Northeast earlier asked Prime Minister Narendra Modi to raise the issue of alleged human rights violation against the Chakma community in the Chittagong Hill Tract. “ “ প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত ভাগের ৬৯ বছর পরও কেন বাংলাদেশ-ভারতের চাকমারা একত্রে ১৭ আগস্টকে কালো দিবস ও পাকিস্তান আগ্রাসন দিবস পালন করছে কেন? কি এর তাৎপর্য? এর মধ্য দিয়ে তারা জাতিকে এবং বাংলাদেশ ও ভারতে জনগণ, সরকার ও বিশ্ববাসীকে কি বার্তা দিতে চাইছে? খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, ১৯৩০-এর দশকের শেষ দিকে একটি পরিকল্পনা ছিল, আসামের লে. গভর্ণর রেন্যাল্ড কুপল্যান্ডের নেতৃত্বে একটি ক্রাউন কলোনী করা হবে, যেখানে বর্তমান ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের উত্তর-পূর্ব অংশ এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম জড়িত থাকবে। যেখানে মিয়ানমারের বর্তমান রাখাইন প্রদেশ জড়িত থাকবে। তথা বঙ্গোপসাগরের নীল পানি ও হিমালয়ের পাদদেশ হয়ে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে এই রাষ্ট্রের সীমানা। এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয় নাই। কিন্তু বাস্তবায়নের সকল উপাত্ত তখন যেমন বিদ্যমান ছিলো, এখনো বিদ্যমান আছে। সেখানে ক্রিশ্চিয়ানাইজেশনের কারণে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়া জনগোষ্ঠীর হার ৭০%- ৯০% পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যক্তিগণ সেই অংশের প্রতি হাঁ বা না জানালেও ’৪৭ সালে তারা ভারতে থাকতে চেয়েছিলেন। স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে রাঙামাটিতে ভারতের পতাকা উড়িয়েছিলেন। এখন আমার নিকট আশ্চর্য ঠেকছে যে বর্তমান প্রজন্মের একটি অংশ সেই সাতচল্লিশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। এর উত্তর আমার কাছে হুবহু জানা নেই যে তারা কি চায়? বিচ্ছিন্নতা, না বাংলাদেশের অংশ? এর উত্তর তাদেরকে দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াদুদ ভুইয়া ইনকিলাবকে এ প্রসঙ্গে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তু রয়েই গেছে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। সাতচল্লিশে ভারত ভাগের সময় পাকিস্তানকেও মেনে নিতে পারেনি, বাংলাদেশকেও মেনে নিতে পারেনি। একই গোষ্ঠী বর্তমান প্রজন্মকে ১৯৭১ সালের পাকিস্তান প্রেমকে ভুলিয়ে দিয়ে সাতচল্লিশের চেতনায় ফিরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চলছে। ১৯৭১ সালে তাদের গুরুজনেরা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তান আর্মিকে সহায়তা করেছিল। আজকের প্রজন্মের একটি অংশ ১৯৪৭ ফেরত যেতে চাইছে। ১৯৪৭ সালে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ ভারতের সাথে থাকতে চেয়ে ভারতের পতাকা উড়িয়েছিল। এতে কি বোঝা যায়, দেশের জনগণ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তারা কি বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতে যেতে চায়? এটার মানে কি তারা ভারত বা বাংলাদেশের সাথে না মিশে গিয়ে আলাদা কোনো রাষ্ট্র করতে চায়? এটা বোঝা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে যখন কৌশলগত বাঙালী খেদাও আন্দোলন যুক্ত হয়েছে তখন দেশের সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিকগণ শঙ্কিত হয়ে পারে না। পার্বত্য বাঙালী নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া ইনকিলাবকে বলেন, এর মাধ্যমে তারা যে বাংলাদেশ আজো মেনে নিতে পারেনি বরং অন্য একটি দেশে মিশে যেতে চায় তা পরিষ্কার বোঝা যায়। এ ব্যাপারে ইউপিডিএফ’র বক্তব্য জানতে তাদের প্রচার ও প্রকাশনা শাখার প্রধান নিরন চাকমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের কেউ এ ধরনের কর্মসূচীর সাথে জড়িত নয়। তখন সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত সংবাদ ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত তাদের নেতৃবৃন্দের নাম পড়ে শোনালে ‘এ বিষয়ে আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন। লেখা : দৈনিক ইনকিলাব, ছবি : সংগৃহিত ।