শনিবার ● ১২ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » স্মৃতিতে অম্লান রাউজানের কদলপুর লস্কর উজির দিঘী
স্মৃতিতে অম্লান রাউজানের কদলপুর লস্কর উজির দিঘী
আমির হামজা, রাউজান প্রতিনিধি :: (২৮ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বেলা ১.৫১মি.) ইতিহাসের পাতা থেকে একে একে খসে পড়ছে প্রাচীণ সভ্যতার অনেক নির্দশন।
সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক বহু স্থান আর স্থাপনা। সেকালের লোক সাহিত্যের আলোচিত দম্পতি মলকাবানু-মনুমিয়ার স্মৃতি বিজরিত জমিদার বাড়ির স্মৃতিচিহ্ন যুগের ঘুর্ণিমান চাকায় পিষ্ট হয়ে হারিয়ে গেছে। এরকম আরো অনেক খ্যতিমান জমিদারের রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্নী এখান থেকে যুগে যুগে মুছে গেছে। হারিয়ে যাওয়ার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না মোগল বাদশাহি আমলের ঐতিহাসিক পুকুর দিঘিও। অবৈধদখলদারদের উৎপাতে দিন দিন সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে প্রাচীণ প্রায় সব পুকুর দিঘির আয়তন।
প্রবীণদের কাছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুনে আসছে আদি সমাজ সভ্যতার অনেক কাহিনী। এসব কাহিনীর মধ্যে রয়েছে প্রচীণ পুকুর দিঘি নিয়েও। সপ্তদশ শতাব্দীর আরকান রাজা শ্রী থিরী থু-ধর্মা সমর সচিব আশরাফ খানের স্মৃতি বিজরিত কদলপুর লস্কর উজির দিঘির নিয়ে রয়েছে অনেক রূপকথা।
কাপ্তাই সড়ক পথের পাহাড়তলী চৌমুহনী থেকে উত্তরমূখি হাফেজ বজলুর রহমান সড়ক পথে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দুরুত্বে এই দিঘির অবস্থান।
এখন যেসব প্রবীনদের বয়স আশি নব্বইয়ের কোটায়, সেসব প্রবীণরা বলেন তারা বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছেন লস্কর উজির দিঘি নিয়ে হরেক রকম রূপকথা। প্রাচীণ কালে এই দিঘি থেকে অলৌকিক ভাবে পাওয়া যেতো বিয়ে শাদির জন্য ব্যবহৃত সকল প্রকার হাণ্ডি পালিতসহ খানাপিনার সব উপকরণ। সেই সময়কালে কোনো বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠান হলে সন্ধ্যায় দিঘির পাড়ে চাহিদা পত্র দিয়ে পত্র লিখে রেখে আসলে পরদিন সকালে দিঘিতে অলৌকিক ভাবে ওসব জিনিষপত্র নিয়ে ভাসতো নৌকা। এলাকার সমাজপতিরা দিঘিতে ভাসমান মানববিহীন নৌকা থেকে সবকিছু বুঝে নিয়ে অনুষ্ঠান শেষে আবারও সেই নৌকায় দিয়ে আসতো। কোনো এক সময় জিনিষপত্র নিয়ে পানির তলদেশে অদৃশ্য হতো সেই নৌকা। এই দিঘি নিয়ে রুপকথার কাহিনীর ইতিঘটে যখন একটি অনুষ্ঠান শেষে দিঘি থেকে পাওয়া জিনিষপত্র সঠিক ভাবে ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়।
কথিত আছে স্থানীয় এক লোভী গৃহবধু দিঘির সম্পদের মধ্যে একটি ছোট্ট লবন বাটির সৌন্দর্য্যমেুগ্ধ হয়ে ফেরত না দিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল নিজের চুলের খোপায়। এরপর থেকে এলাকার মানুষ দিঘি থেকে এসব জিনিষপত্র পেতে বঞ্চিত হয়।
জানা যায়, চুরির সাথে জড়িত এই পরিবারটিও ধ্বংস হয়ে যায়। রূপকথা এই দিঘিটি সম্পর্কে জানা যায়, বর্তমানে এটি সরকারের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। বার্ষিক খাজনায় স্থানীয় প্রশাসন এটি মাছ চাষের জন্য ইজারা প্রদান করেন। এই দিঘির দক্ষিণ পশ্চিম কোণায় রয়েছে হযরত মিয়া শাহ নামের এক বুজুর্গ ব্যক্তির মাজার। দিঘির পাড়ে স্থাপিত হয়েছে একটি মসজিদ ও কবরস্থান।
স্থানীয় প্রবীণদের মতে দিঘিটি মাছ চাষের আওতায় থাকলেও কোনো সময় এটি পূর্ণাঙ্গভাবে সেচ দেয়া যায় না। চাষিরা কিছু পানি কমিয়ে মাছ ধরে থাকে মাত্র। তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দিঘির পাড় দখলে রেখে বিভিন্ন ভাবে ভোগ দখল করছে।
এলাকার সচেতন মহলের আশংকা এসব দখলদারগণ সুযোগ পেলে দিঘিটি ঘিলে খেতে চেষ্টা করবে।
সকলের প্রত্যাশা আশরাফ খানের স্মৃতি বিজরিত প্রাচীন এই দিঘিটি যাতে ক্ষয় না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেবেন।