রবিবার ● ১৩ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » কথিত দানবীর রাগীব আলী এখনও ধরাছোয়ার বাইরে
কথিত দানবীর রাগীব আলী এখনও ধরাছোয়ার বাইরে
সিলেট প্রতিনিধি :: (২৯ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বেলা ৩.১৫মি.) স্বঘোষিত দানবীর রাগিব আলী এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘দানবীর’ হিসেবে। সিলেটের তারাপুর চা বাগানের জালিয়াতি মামলায় সিলেটসহ সারাদেশে আলোচিত তিনি। তার ধন-দৌলত আর শান শাওকাতের কথা মুখেমুখে। ১২ নভেম্বর শনিবার দুপুরে দেশের সীমান্তবর্তী জনপদ জকিগঞ্জ থেকে তার ছেলে আবদুল হাই গ্রেফতার হলেও মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ফেরারী রাগীব আলী এখনো রয়ে গেলেন অধরা।
জকিগঞ্জ উপজেলা থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেফতার করেছে রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইকে। ভারত থেকে দেশে ফেরার পথেই গ্রেফতার হন আবদুল হাই। ওইদিনই সন্ধ্যায়ই আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারলেও এখনো পলাতক আছেন শিল্পপতি রাগীব আলী।
তারাপুর চা বাগানের জালিয়াতি মামলাসহ পৃথক আরোও মামলায় রাগীব আলী ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেফতারী পরোয়ানা। কথিত ‘দানবীর’ তার ছেলে, মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। ১২ নভেম্বর শনিবার সেখান থেকে তার ছেলে দেশে ফেরার পথে গ্রেফতার হলেন।
দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও ভূমি আত্মসাতের দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরই ওইদিন বিকালে ভারত চলে যান রাগীব আলীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। তারা জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারত যান; নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ করেছিল সিলেটের বিভিন্ন গনমাধ্যম। এরপর বিষয়টি অনুসন্ধান করে পুলিশ। অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলে রাগীব আলী ও পরিবারের সদস্যরা ভারতেই পালিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা স্বশরীরে জকিগঞ্জে গিয়ে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তিনিও নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন- ‘জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে গ্রেফতারি পরেয়ানা জারির দিন বিকালেই পালিয়েছেন রাগীব আলী ও তার স্বজনরা। যার প্রমান জকিগঞ্জ সিমান্তেই গ্রেফতার হন রাগিব পুত্র আব্দুল হাই।
এদিকে জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে গ্রেফতার হওয়া শিল্পপতি রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট মূখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরু তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
পুলিশের সহকারি কমিশনার আবদুল আহাদ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আবদুল হাইয়ের পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মঈনুল ইসলাম। তবে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আবদুল হাইকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
রাগীব আলীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন ১৭ নভেম্বর। এদিকে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় শিল্পপতি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়নি গত ৯ নভেম্বরের কার্যদিবসে। ওইদিন মামলার আসামি তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তের অব্যাহতি আবেদনের প্রেক্ষিতে চার্জ গঠন পিছিয়ে দেন সিলেট মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা।
আগামী ১৭ নভেম্বর চার্জ গঠনের শুনানি নির্ধারণ করেছেন আদালত। তবে ওইদিন তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আদালতে দুইজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ ও মামলার পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তা (বর্তমানে সিআইডিতে কর্মরত) পুলিশ পরিদর্শক আবু জাহের সরকার। মামলার বাদী এস এম আবদুল কাদের আগামী ১৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে। আদালতের এপিপি জসিম উদ্দিন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, স্মারক জালিয়াতি মামলায় আজ আরো দুইজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ১৩ নভেম্বর।
তিনি জানান, তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় শিল্পপতি রাগীব আলী, তার ছেলে আবদুল হাই, বাগানের বৈধ সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তসহ ছয়জন আসামি রয়েছেন।
মঙ্গলবার এ মামলায় চার্জ গঠনের কথা ছিল। তবে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বর্তমানে জামিনে থাকা পঙ্কজ কুমার গুপ্তের আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম তার (পঙ্কজ) অব্যাহতির আবেদন জানানোর কারণে চার্জ গঠনের শুনানি ১৭ নভেম্বর ধার্য করেছেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার ভূমি আত্মসাৎ এবং প্রতারণার আলোচিত দুটি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে-মেয়েসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গত ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
অন্যদিকে প্রতারণার মামলায় রাগীব আলী, তার ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির, মেয়ে রুজিনা কাদির, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের দেওয়ান মোস্তাক মজিদ ও তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরপরই ছেলেকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান রাগীব আলী।
এছাড়া মামলার আসামি রাগীব আলীর আত্মীয় দেওয়ান মোস্তাক মজিদ গত ১০ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার উপর তারাপুর চা বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। আশির দশকে জালিয়াতির মাধ্যমে এটি দখলে নেন রাগীব আলী। এ নিয়ে চলা মামলার প্রেক্ষিতে আদালতে একটি রিট পিটিশনের ভিত্তিতে গত ১৯ জানুয়ারি তারাপুরে রাগীব আলীর দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।