রবিবার ● ১৩ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » সন্ত্রাসী হামলায় আহত সেই মুক্তিযোদ্ধাকে মেরে ফেলার হুমকি
সন্ত্রাসী হামলায় আহত সেই মুক্তিযোদ্ধাকে মেরে ফেলার হুমকি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২৯ কার্তিক ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.২৩মি.) সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত ঝিনাইদহের সেই মুক্তিযোদ্ধাকে এবার প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ হুমকি-ধমকির কারণে তিনি এখন নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত ৷ ই-টেন্ডারে শিডিউল জমা দেওয়ার জেরে স্থানীয় এমপির লোকজন বেধড়ক পিটিয়ে ৬৫ বছরের এই মুক্তিযোদ্ধার হাত পা ভেঙে দিয়েছে ৷ তিনি বর্তমান ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন৷
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন মৃধাকে নির্মমভাবে মারধরের এই ঘটনাটি ধরা পড়ে সিসিটিভিতে ৷ ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেলে তা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়৷
ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড, লাঠিসোটা, হাতুড়ি দিয়ে একদল যুবক মোক্তার হোসেনকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে৷ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র সদস্য৷ আর হামলাকারীরাও একই দলের নেতা-কর্মী৷ পুলিশ এজাহারভুক্তদের মধ্যে মাত্র দুজনকে গ্রেফতার করলেও দুদিন পরই তারা জামিনে মুক্তি পান৷ বাকিরা এখনো গ্রেফতার হননি৷
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর সকালে স্থানীয় এমপি আব্দুল হাইয়ের এপিএস আবদুল হাকিম মোবাইল ফোনে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি দল এসে তার ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন৷ হামলায় মোক্তার ও তার বড় ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন গুরুতর আহত হন৷ তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ সেখানকার চিকিত্সকরা পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন৷
পঙ্গু হাসপাতাল থেকে তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ সেখানেই তার চিকিত্সা চলছে৷ ইতিমধ্যে তার হাত ও পায়ে তিনটি অপারেশন করা হয়েছে৷ এ ঘটনায় গত ১৯ অক্টোবর স্থানীয় এমপির এপিএস হাকিমকে প্রধান করে ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়৷ মামলার পরে পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করলে তিন দিন পরই তারা জামিনে ছাড়া পান৷ বাকিরা জামিন নেন ১৫ দিন পর৷ এরপর থেকে মোক্তারের পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন আসামিরা৷
মোক্তারের ছোট ছেলে সাজন মৃধা অভিযোগ করেন, স্থানীয় রাস্তা মেরামতের জন্য এলজিইডির দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকার চারটি কাজের দরপত্র অনলাইনে আহ্বান করা হয়৷ অনলাইনেই তার সিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত ১৭ অক্টোবর৷
এ দিনেই তার বাবা সর্বনিম্ন দর ধরে শিডিউল জমা দেন৷ পরের দিন সেই টেন্ডার ওপেন করা হয়৷ এ সময় তার বাবা কাজগুলো পান বলে ঘোষণা আসে৷ বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় এমপির এপিএস হাকিম তার বাবার মোবাইলে ফোন দেন৷ ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শৈলকূপা উপজেলা কমপ্লে পুরনো গেটের পাশে জাকের মেডিকেল নামে একটি দোকানে বসে ছিলেন তিনি৷ এ সময় হাকিম তার বাবার মোবাইল ফোনে কল দেন৷
হাকিম তার বাবাকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে সব কাজ আমরা পাই৷ কিন্তু আপনি টেন্ডার জমা করলেন কেন ? এর মজা কিছুক্ষণ পরই পাবেন’৷ এ কথা বলার ১০ মিনিট পরই এমপি ও তার এপিএসের নির্দেশে শামীম মোল্লার নেতৃত্বে প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি দল হাতুড়ি, লাঠি ও রড নিয়ে হামলা চালায়৷ হামলাকারীদের মধ্যে আশরাফুল, সুমন, সিহাব মোলস্না, রিপন মোল্লা, রিপন, সাওন শিকদার, কর্নেল ও শামীম জোয়ার্দ্দারসহ আরও অনেকে ছিলেন৷ তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী৷
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তারা মামলা করলে পুলিশ দুজন আসামিকে গ্রেফতার করে৷ পরে এমপি কোর্টে নিজে বসে থেকে তাদের জামিন করে নিয়ে আসে৷ আর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকা তার বাবার এ পর্যন্ত তিনটি অপারেশন করা হয়েছে৷ চিকিত্সাধীন থাকা অবস্থায় বাড়িতে-মোবাইল ফোনে আসামিরা তাদের মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন৷ না হলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন৷
অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় আবদুল হাকিমের সঙ্গে৷ তিনি জানান, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ৷ হামলার সময় আমি ছিলাম না এবং জড়িতও না৷ যারা জড়িত তারা চিহ্নিত ভিডিও ফুটেজে তাদের দেখা গেছে আমি তাদের প্রত্যেকের শাস্তি দাবি করছি৷ আর তথ্য বিভ্রাটের কারণে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে৷
হামলায় নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি জানতে ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি আবদুল হাইয়ের কাছে মোবাইলে ফোন দেওয়া হয়৷ মোবাইলে ফোন ধরেন তার ব্যক্তিগত সহকারী ইমদাদুল হক৷
ইমদাদুল বলেন, আমি এমপি সাহেবের সঙ্গে ২৪ ঘন্টা থাকি৷ একসঙ্গে থাকি, খাই, ঘুমাই৷ কখনই তিনি এই হামলার নির্দেশ দেননি৷ এটা আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত৷
এ বিষয়ে শৈলকূপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, মামলার দুই ঘন্টা পরই আমরা দুজনকে গ্রেফতার করেছিলাম৷ এ সময় অন্যরা পালিয়ে যায়৷ তারা সবাই ১৫ দিন পর আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন৷ আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই৷