বুধবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » বয়স ১শত বছর পেরিয়ে অবশেষে ভাতার কাগজ পেলেন অসহায় বৃদ্ধা রসমতি
বয়স ১শত বছর পেরিয়ে অবশেষে ভাতার কাগজ পেলেন অসহায় বৃদ্ধা রসমতি
মুতাসিম বিল্লাহ, বরগুনা :: (২ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.২২মি.) বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে অবশেষে বয়স্কভাতার কাগজপত্র হাতে পেলেন বরগুনার অসহায় বৃদ্ধা রসমতি সমদ্দার!
মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর সন্ধার দিকে বরগুনার সদর উপজেলার বুড়িরচর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের
উপ-পরিচালক প্রণব কুমার মুখার্জী তার হাতে এ কাগজ তুলে দেন।
তবে কবে নাগান এই ভাতার টাকা হাতে পাবেন তা তিনি জানেন না। তার মত জানেন না ভাতার কাগজ পৌছে দেওয়া সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্তারাও।
এ বিষয়ে উপ-পরিচালক প্রণব কুমার মুখার্জী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, এ বছরের বরাদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে বরাদ্দ আসার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বামী মনীন্দ্র চন্দ্র হাওলাদারের মৃত্যুর পর একে একে মৃত্যু হয় রসমতির ছয় ছেলেমেয়ের পাঁচজনের। এক মেয়ে মায়ালক্ষ্মী বেঁচে থাকলেও দারিদ্র্য আর দূরত্বের কারণে কখনোই মায়ের খোঁজ নেননি। থাকেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপ জেলার কোনো এক দরিদ্র পল্লীতে। বুড়িরচর ইউনিয়নের মৃত জগবন্ধু সমাদ্দারের ছেলে আদিত্য সমাদ্দার। আদিত্যের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ রসমতি। বেশ জমি জমা ছিল তাঁদের। অল্প বয়সে একমাত্র ছেলের মৃত্যু হলে শালা বিজিন্দ্র চন্দ্রকে বাড়ি আনেন আদিত্য।
এরপর শুরু হয় যত বিপত্তি। কখনো ভুল বুঝিয়ে, কখনো গোপনে সহজ-সরল, উদার মনের আদিত্যের সব জমি লিখে নেন
বিজিন্দ্র। বাবার মৃত্যুর পর একা হয়ে যান মেয়ে রসমতি। সেই একাকিত্ব স্বামীর মৃত্যুর পর স্থায়ী হয়েছে। আশপাশের শিশুরা তাঁকে ‘একলা বুড়ি’ বলে ডাকে।
আরো জানা গেছে, রসমতির ভাগের সব জমি কৌশলে আত্মসাৎ করেছে স্থানীয় কয়েকটি পরিবার। তার মধ্যে বছর বিষেক আগে রসমতির দেড় একর সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন।
যে বয়সে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে হাসি- আনন্দে কাটানোর কথা, সেই বয়সে একা প্রতিটি দিন পার করছেন বৃদ্ধ রসমতি। তাঁর
খোঁজ রাখে না কেউ। সকালে সামান্য পান্তা খেয়ে তিন-চারটে বড়শি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আশপাশের খাল-বিল ডোবা-নালায় তা পেতে রাখেন। এক ফাঁকে কচুর লতি অথবা কলমি শাক তোলেন। দুপুরের আগে আগে দুই-একটি টাকি কিংবা পুঁটি মেলে। মাছ না
পেলে যা পান তাই নিয়ে ঘরে ফেরেন।
এ খেয়েই তাঁর দিন পার হয়। এভাবে গত ২০ বছর ধরে বেঁচে আছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রসমতি সমাদ্দার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ‘কাইল (রবিবার) হারাদিনে রানতে পারি নায়, খাওয়াও অয় নায়। সন্ধ্যার পরে হাকপাতা (শাক) যেডু টোহাইয়া (টুকিয়ে) আনছি হেইয়া রাইন্দা খাইছি। একটা ইলিশ মাছ খাইতে বড় ইচ্ছা করে। একটু নাহইল-মিডা (নারিকেল-গুড়) যদি খাইতে পারতাম!
শরীরডা খুব খারাপ, প্রেশার বাড়ছে। একটা ট্যাবলেট যদি কেউ আইনা দিত ! তয় ভালো অইয়া যাইতাম। কেডা দেবে আমারে একটা ট্যাবলেট আইন্না ?’
এব্যাপারে বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. ফোরকান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সবে নির্বাচিত হয়েছি। এখনো সব বুঝে উঠতে পারিনি।
সাবেক ইউপি সদস্য মো. আব্দুস সালাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমার মেয়াদের পুরো পাঁচ বছরে বয়স্ক ভাতার জন্য মাত্র চার-পাঁচটি নাম দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে রসমতির নাম দিতে পারিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, রসমতির বিষয়টি আমার জানা নেই। বুড়িরচর এম এ জি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সোহেলী পারভিন ছবি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার পথে রসমতির সঙ্গে প্রায় দেখা হয়। কখনো বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন, কখনো বা সড়কের পাশে রোদ পোহাতে দেখা যায় তাঁকে। এই বয়সে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। অনেক কিছু তাঁর খেতে ইচ্ছে করে। আশপাশের নিকট স্বজনদের কাছ থেকেও তাঁর আদর ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু অসহায় রসমতির চারপাশে কেউ নেই।’
তিনি আরো বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারের উদ্যোগে একটি করে বৃদ্ধাশ্রম থাকা জরুরি।
বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা.বশিরুল আলম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। স্থানীয় প্রশাসনকে তাঁর সরকারি সাহায্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলবো।