বৃহস্পতিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » রাঙামাটি শহরে রাত হলে জম জমাট হয় উঠে মাদকের রাজা ইয়াবার ব্যবসা
রাঙামাটি শহরে রাত হলে জম জমাট হয় উঠে মাদকের রাজা ইয়াবার ব্যবসা
মো. আব্দুল নাঈম মোহন :: রাঙামাটি শহরে রাত বাড়তেই জম জমাট হয়ে ওঠে মাদকের বাজার! চলে গভীর রাত অবধি৷ তবে এই বাজারের কোন নির্ধারীত স্থান না থাকলেও শহর যেন রাতে একটি মাদকের বাজারে পরিনত হয়৷ মাদকসেবী ও মাদক ব্যাবসায়ীদের আনা-গোনা চলে সারারাত বিভিন্ন অন্ধকারের অলি-গলিতে৷ মাঝে মধ্যে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে যা পর্যাপ্ত নয়৷
তবে যে সব মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে তাতেই অবশ্য বিভিন্ন মাদকসহ মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেপতার হচ্ছে৷ কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে কিছু দিনের মধ্যেই তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার পুরোদমে শুরু করে মাদকের বানিজ্য৷ এই সব মাদকসেবীরা অধিকাংশ মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেটে আশক্ত হওয়ায় এদের দিনের বেলা সাধারনত দেখা মিলবেনা রাত বাড়তেই তারা বেড়িয়ে পড়ে মাদকের সন্ধানে৷ নতুন প্রজন্ম রীতিমতো এখন ইয়াবা ক্রেতা !
মাদক বাজারে কেনাবেচার এখন শীর্ষে রয়েছে ইয়াবা৷ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার সেবন ও বিপণনের আসত্মানা গজিয়ে উঠছে৷ এই মাদকটি আকারে ছোট হওয়ায় সহজে বহন করা যায়৷ যার কারণে অন্য মাদকের তুলনায় ইয়াবা সেবনকারী ও বিক্রেতারা খুব সহজে নিরাপদে সেবন ও বিক্রয় করতে পারে৷ যারা ইয়াবা সেবন করে তারাই আস্তে আস্তে বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে৷
আইনের চোখে ফাঁকি দেয়ার জন্য সাংকেতিক ভাবে নাম দেয়া হয়েছে বাবা৷ এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রকম নামে ডাকা হয়৷ ১৬ থেকে ৫০ বছর বয়সী মাদকসেবীর সংখ্যাই বেশি৷ ভয়ঙ্কর এই মাদক ইয়াবার থাবায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবারের সন্তানের জীবন৷ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া তরুন-যুবকদের বাবা-মার কান্নাও থামছে না কোন রকম৷
একটি সূত্রে জানা যায় শহরের বিভিন্ন স্থানে রাত বাড়লে চলে জমজমাট ব্যবসা৷
রিজার্ভ বাজার- লঞ্চঘাট থেকে পুরান বস্তি নতুন ব্রিজের নিচে রাতে আধারে বোটের পর্দা নামিয়ে সেবন ও বিক্রয় করা হয় এই মাদক, শহীদ আবদুল আলী স্কুলের সামনে, শিশু পার্ক, শহীদ আবদুস শুক্কুর ষ্টেডিয়ামের গ্যালারির নিচে ও এসপি অফিসের পিছনের রাস্তা৷ তবলছড়ি- নিচ বাজার, ৬০ সিড়ি, পর্যটন তিন রাস্তা মোড়, কেরানী পাহাড়, আমিনা পাহাড়, স্বর্ণটিলা স্কুল পিছনে, স্বর্ণটিলা তিন রাস্তার মোড়, হিন্দু পাড়া, নারকেল বাগান ও শান্তি নগর (মালি পাড়া)৷
বনরূপা- কাঠালতলী সড়ক, লের্কাস স্কুল রোড,কাটা পাহাড় সড়ক, কাঠালতলী স্কুলের পিছনে, ফরেষ্ট রোড, লিচু বাগান, চম্পক নগর ও হ্যাপির মোড়৷
রাজবাড়ী- কে.কে.রায় সড়ক, ষ্টেডিয়ামের গ্যালারির নিচে, জিমনিসিয়াম পিছনে, সদর হাসপাতাল বাধ ও দেবাশিষ নগর৷
কলেজ গেইট- টিটিসি সড়ক, রাঙামাটি সরকারি কলেজ এর লাইব্রেরী, সিএমবি সিড়ি, সদর উপজেলা শেষ মাথা ও পানির ফোয়ারা৷
ভেদভেদী- টিএন্ডটি মাঠ, টেনিস কোর্ট মাঠ, পোষ্ট অফিস কলোনি, কালী মন্দিরের নিচে, সিএমবি গোডাউন, শিমুলতলী ও বিডিআর পাহাড় (রুপনগর)৷
এই ছাড়াও স্কুল কলেজের ছাত্ররা ব্যাচেলার বাসায় ভাড়া নিয়ে, কয়েক মাস কাটার পর স্থানীয় যুবকদের সাথে গড়ে উঠে মধুর বন্ধুর সম্পক, তার পর ধিরে ধিওে এলাকায় যুবকদের সাহায্য নিয়ে রাতে বসে মাদকের রাজা ইয়াবার আসর৷
আজ যে ব্যক্তি ইয়াবার ক্রেতা কাল সে হয়ে যায় বিক্রেতা, হঠ্যত্ রাতা-রাতি কোটি-পতি হচ্ছে ইয়াবার বিক্রোরা৷ বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে পারলে নিজের নেশার খরচ মেটানোর পাশা-পাশি বাড়তি টাকা আসে নিজের পকেটে৷
ইয়াবা বাণিজ্যের কাছে হেরোইন, ফেনসিডিল, চোলাই মদ ও গাঁজার ব্যবসায়ীয়েরা হার মেনেছে৷ বিভিন্ন ক্যাটাগড়ির ইয়াবা এখন বাজারে অহরহ মিলছে৷
এসব কারণেই আজ সব স্থানেই এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে এই ‘ক্রেজি ড্রাগ’ ইয়াবা৷ মানব-দেহের সবচেয়ে ক্ষতিকর নেশাদ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা অন্যতম৷ ইয়াবা হচ্ছে থাই শব্দ৷ যার অর্থ হচ্ছে ‘ক্রেজি ট্যাবলেট’ বা পাগলা ওষুধ৷ ‘ইয়া’ অর্থ ক্রেজি, আর ‘বা’ মানে হচ্ছে ট্যাবলেট৷ ইয়াবা হচ্ছে ব্র্যান্ড নাম৷ ইয়াবা হলো- ‘মেথাফেটামিন’ ও ‘ক্যাফেইন’-এর মিশ্রণ৷ মেথাফেটামিন উত্তেজক পদার্থ ক্যাফেইনের সঙ্গে হেরোইন মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই ইয়াবা৷
এ নেশাদ্রব্য হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ৷ মোবাইল ফোনে অর্ডার দিলেই মুহূর্তেই মধ্যে হাতে চলে আসছে ছোট আকারের এই ট্যাবলেট৷ বড়- ২০ পিস নিচে নিলে ২৮০-৩০০ টাকা আর ২০ পিস এর উপরে নিলে প্রতি পিস ২৩০-২৫০ টাকা
৷ ঠিক একি ভাবে ছোট্ট- অল্প নিলে পরে ৯০-১০০ টাকা প্রতি পিস,আর বেশি নিলে পরে ৬৫-৭৫ টাকা প্রতি পিস, এছাড়া এখন পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু পানের দোকান, চায়ের দোকান, কুলিং কর্নার, বাজে মালের দোকনও৷
তবে পরিচিত লোক ছাড়া বিক্রি করে না তারা৷ বেশ কিছু মহলের ছত্র-ছায়া প্রভাবে চলছে এই মাদকের ব্যবসা৷ এই ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহলের লোকজন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের সকলের প্রাণ প্রিয় শহর রাঙামাটি ! প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ দেশ-বিদেশ পর্যটক আসে রাঙামাটি দেখার জন৷
কিন্তুু অল্প বয়সের থেকে শুরু করে মধ্যে বয়সের লোকরা এখন ইয়াবা সেবন ও ব্যবসা করে আসছে সবার প্রাণ প্রিয় শহরে৷
এতে তাদের কোন জমা টাকা লাগে না , কারন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী অসাধু ব্যক্তি তাদের হাতে তুলে দেয় এই মাদকের রাজা ইয়াবা৷ পুলিশের বিশেষ অভিযানে পরিচালনা কালিন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে ! কিন্তু তাদের আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না৷ যার কারণ গণতান্ত্রিক আইনের ফাঁক-ফোকর গলে দিব্যি তারা বেরিয়ে আসছে জেল হাজত থেকে৷ আবার ফিরছে ইয়াবা ব্যবসায়৷ রাঙামাটি কোতয়ালী থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক লিমন বোস সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় মাদক ও অপরাধ জগতকে জিহাদ ঘোষনা করেছেন৷ স্থানীয় সচেতন মহল পুলিশকে তথ্য দিয়ে যে ভাবে বিগত দিনে সহযোগিতা করেছে পুুুলিশ বিভাগ মনে করি আগামী দিনগুলোও তারা পুলিশ বিভাগকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে যাবেন৷
তিনি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে আরো জানান, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে এবং থানার সকল অফিসার অংশ গ্রহনে চলতি বছরের গত সেপ্টেমবর মাসে- মাদক মামলায় ৮জন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ১জন, জি আর মামলায় ৬ জন, সি আর মামলায় ৪জন, আরো বিভিন্ন মামলার ১১ জন গ্রেফতার করা হয়৷
অক্টোবর মাসে সিধেল চুরি মামলায় ১জন, চুরি মামলায় ২জন, মাদক মামলায় ১০ জন, জি আর মামলায় ৫জন, সি আর মামলায় ১জন, আরো বিভিন্ন মামলার ১৬ জন গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়৷
উপ-পুলিশ পরিদর্শক লিমন বোস সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে আরা জানান, পুলিশ সুপার মহোদয়ের নিদেশে আমরা এখনো আমাদের বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা প্রতিদিন ২-৩ টি মাদক সেবীদের আস্তানা নিমূল করা সম্ভব হচ্ছে৷