শুক্রবার ● ১৮ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিলেটে আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে ছিনতাই
সিলেটে আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে ছিনতাই
সিলেট প্রতিনিধি :: (৪ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বেলা ১.৪০মি.) সাম্প্রতি সিলেটে আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে ছিনতাই । প্রায় প্রতি দিনই শহরের কোথাও না কোথাও গড়ে অন্তত ৩ টি ছিনতাই হচ্ছে। এখন আর রাতের অন্ধকারে নয় , এখন বেশীর ভাগ ছিনতাই হচ্ছে প্রকাশ্যে দিনের আলোয়। ভোর থেকে সন্ধ্যা মুলত এই সময়েই বেশি তৎপর ছিনতাইকারীরা। বিশেষত ব্যাংকিং আওয়ার অর্থ্যাৎ অর্থ লেনদেনের উপযুক্ত সময়েই সংঘঠিত হচ্ছে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অবৈধ এই পন্থা । বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারী দের ছবি দেখে বুঝা যায় এরা বয়সে নবীন ,অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এদের বয়স ১৬-১৭ কিংবা এর একটু উপরে। হাইজ্যাকিং করে বখে যাও্য়া টীনএজার তরুন দের পোষাকেও আছে বাহারী চমক । ভদ্র পোশাকে সুসজ্জিত থেকেই পরিকল্পনা মাফিক কিংবা খুব হঠাৎ করেই টার্গেটের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তারা। সাথে থাকে মোটর বাইক । ছিনতাই করার আগ পর্যন্ত ভিকটীম কল্পনাও করতে পারেন না এদের দ্বারা লুট হতে পারেন তিনি। ঝটিকা ছিনতাই এর পাশাপাশি বিভিন্ন হাউস থেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করেও ঘটছে ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা। প্রতিষ্টানে কর্মরত অসাধু ,কর্মকতা কর্মাচারী রা তথ্য দিয়েও অনেক সময় সাহায্য করছেন ছিনতাই কর্মে। টাকার নেশায় উন্মুখ ছিনতাইকারী দের দল মানছে না সিসিটিভিতে চেহারা প্রকাশের ভয় ও। গোপন ক্যামেরার সামনে অবলীলায় নিজেদের চেহারা দেখিয়ে প্রায়ই ছিনতাই করছে তারা। ফেঞ্চুগঞ্জ ভাটেরা থানার সিংহ নাথ এলাকার আব্দুল করিম গত ১৬নভেম্বর বুধবার পিন নাম্বারে টাকা তোলার জন্য এসে ছিলেন সিলেটে। ইসলামি ব্যাংক হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বর থেকে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা তুলে নিজের বাইকে করে তিনি রওয়ানা দেন উপ শহরস্ত তার ভাগনীর বাসায়। কিন্তু নতুন পুলে উঠতেই তার গতিরোধ করে দাড়ায় দুটি মোটর সাইকেল যোগে চার তরুন। জনস্মমুখে পঞ্চাষোর্ধ আব্দুল করিমের গলায় দা ঠেকিয়ে ছিনিয়ে নেয় টাকা । এরপর তার মোটর বাইক লাথি দিয়ে ফেলে নির্বিঘ্নেই পালিয়ে যায় তারা। অথচ ওই সময় নতুন পুল এলাকায় ছিলোনা পুলিশের কোন টিম,কিন্তু ঘটনার কিছুক্ষণ পর হাজির হয় তারা । ছিনতাই হওয়া আব্দুল করিম বলেন ‘আমার কাছে যে এত টাকা আছে তা লন্ডন প্রবাসি আমার আত্নীয় আর আমি ছাড়া এক মাত্র জানার কথা ব্যাংক কর্মকর্তাদের , ব্যাংক থেকে তাই তথ্য পাচারের আশংকা ঊড়িয়ে দেওয়া যায়না।‘
জনবহুল জিন্দাবাজার এলাকাতেও হয়েছে ছিনতাইয়ের চেষ্টা । কিছু দিন আগে ছিনতাই করতে ব্যার্থ হয়ে শেষমেশ মোটর সাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় হাইজ্যাকার গন । এ ব্যাপারে জিন্দাবাজারের লন্ডন ম্যানশনের ব্যবসায়ী আবু জাফর ফুয়াদ বলেন ,বিয়ের শপিং সহ অনেক বড় ইভেন্ট আয়োজনের জন্য অনেক সময় মানুষ বিপুল পরিমান নগদ টাকা নিয়ে জিন্দাবাজার আসেন । এদের অনেক কেই ছিনতাই কারীরা টার্গেট করে ছিনতাই চেষ্টা চালায় । তবে জন বহুল জিন্দাবাজারে ছিনতাই করার মরিয়া প্রচেষ্টা দেখে বুঝা যায় এই মুহুর্তে শহরের ছিনতাই কারীরা কত টা বেপরোয়া। তার মতে জিন্দাবাজারে ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। সেটা জেনে ও টাকার নেশায় ঝুকি নিয়ে হলেও অনেক সময় কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে নিচ্ছে হাইজ্যাকাররা! টাকার জন্য এমন উন্মুক্ত হয়ে যাও্য়া গভীর ভাবে বিবেচনা করলে আমাদের সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত বলেই প্রতিয়মান হবে ।
এক সপ্তাহ আগে কাহের মিয়ার গলি থেকে ইউনিলিভার কোম্পাণীর ৭০ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল টক অব দি টাউন। দুপুর বেলা ৭০ লাখ টাকা ছিনতাই হওয়ার পর অনেকেই ধারনা করেন এটা বড় ধরনের কোন সু সংঘঠিত ডাকাত দলের কাজ । কিন্তু পাচ ঘন্টা পরে এসএমপির অভিযানে ছিনতাই কৃত টাকা উদ্ধার করার পর দেখা যায় ছিনতাই কারী সবার ই বয়স অল্প ! এত অল্প বয়সে যে ঝোকের মাথায় টাকা লূট করে ফেললেও টাকার অংক দেখেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে তারা। ফল স্বরুপ পুলিশের হাতে পাকড়াও হতে হয় তাদের। বড় রকমের ছিনতাই ইয়ের পাশাপাশি শহরের অলি গলিতে প্রায়ই ঘটছে ছোট খাট হাইজ্যাকিং এর ঘটনা । এ ক্ষেত্রে ঝুকিপুর্ন এলাকার মধ্যে অন্যতম ব্লুবার্ড স্কুল সংলগ্ন সুবিদ বাজার এলাকা থেকে হাউজি এস্টেট এর আবাসিক এলাকা । সুবিদ বাজারে মোটর সাইকেল বা সিএনজি যোগে রিকশা থেকে মহিলাদের ব্যাগ ছিনতাই করার ঘটনা ঘটছে প্রায় নিয়মিতই। তাই সন্ধ্যা বেলায় এই এলাকা দিয়ে মহিলারা রিকশা চলাচল এক কথায় বাদই দিয়ে দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহেই হাউজিং এস্টেট এলাকায় ভোর ছয় টায় স্কুলগামী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কে ছুরি ঠেকিয়ে মোবাইল ভ্যানিটী ব্যাগ নিয়ে যায় ছিনতাই কারীরা। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মোটর সাইকেল যোগে আধুনিক পোষাকে সজ্জিত দুই কিশোর করছে ছিনতাই কর্ম । এতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন এত কম বয়সী ছেলে দের ছিনতাই করতে দেখে। ছিনতাই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ রহমত উল্ল্যাহ বলেন ‘ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করছে, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ধরতে ও চলছে বিশেষ অভিযান। আমরা সিলেটে গত বিশ বছরের সংঘঠিত হওয়া সকল ছিনতাই এর ডাটা পুনরায় ঘাটাচ্ছি। আশা করি কয়েক দিনের ভেতরেই নতুন পুরাতন ছিনতাইকারী দের একটা তালিকা করতে পারবো।‘ তিনি বলেন পুলিশ তার কাজ করছে,নগরবাসীর ও উচিত একটু সাবধান হয়ে চলা এবং সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাই কারিদের প্রতিরোধ করা।