সোমবার ● ২১ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পার্বত্যঞ্চলের নৃত্য অঙ্গনে জীবন্ত কিংবদন্তি হুুমায়ন কবির
পার্বত্যঞ্চলের নৃত্য অঙ্গনে জীবন্ত কিংবদন্তি হুুমায়ন কবির
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (৭ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.০৩মি.) পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রাঙামাটির রয়েছে এক বিশেষ তাৎপর্যময় বৈশিষ্ট্য। জাতীয় সংস্কৃতির পাশাপশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র রয়েছে সৃষ্টির অবয়বে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এ সংস্কৃতির চর্চায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট। আর সেই প্রতিষ্ঠানেরই এক প্রাণপ্রিয় পুরুষ হলেন নৃত্য প্রশিক্ষক হুমায়ূন কবীর।
রাঙামাটির সংস্কৃতি তথা নৃত্য অঙ্গনে হুুমায়ন কবির এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম। কেবল রাঙামাটিতে নয় খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায়ও নৃত্য জগতে অনন্য এক পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। বাঙ্গালী নৃত্যর পাশাপাশি এ জেলার পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশেও তার অবদান অনস্বীকার্য।
চাকমা সম্প্রদায়ের পুষ্প নৃত্য, বিজু নৃত্য, এইচ্চ্যা বিজু , ওপরানি মোর, কইচ্চ্যা গাবুরী গাণের নৃত্য, মারমাদের ছাতা নৃত্য, রুমাল নৃত্য, থালা নৃত্য, ত্রিপুরাদের বোতল নৃত্য, জুম নৃত্য’সহ বিভিন্ন পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীদের নৃত্য নিজে ও তার হাতে গড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৈপূর্ণের সাথে পরিবেশন করে দর্শকদের কাছে আরো আকর্ষিত ও প্রানবন্ত করেছে।
এই প্রথিতযথা নৃত্যশিল্পী চাঁদপুরের সাহারাস্থী উপজেলায় সভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬৩ সালের ২ফেব্রয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম বশির উল্লাহ ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবি ও সমাজসেবক। মাতা মরহুম হুজুরা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। তিনি স্ত্রী রওশন কবির, দুই কণ্যা সন্তান ও এক নাতীর জনক। বর্তমানে রাঙামাটির ওয়াপদা কলোনীতে নীজ বাসায় এখন তাঁর বসবাস।
নৃত্য শিক্ষক হুমায়ন কবিরের বয়স যখন চার তখন থেকেই বড়বোন খালেদ আক্তার নাজমার নৃত্য দেখে দেখে নৃত্য আগ্রহী হয়ে উঠে। পরে নৃত্য শিক্ষকের কাছে নৃত্য শিখে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিজয়ী স্থান অধিকার করে। বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি নৃত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঢাকা শিল্পকলায় ২বৎসর, কুমিল্লা নজরুল একাডেমী, নাচের গুরু জি এ মান্নান, জিন্নাত বরকতুলাহ, রেখা চৌধুরী, শিপ্রা চৌধুরীসহ বিভিন্ন গুনী শিল্পীদের কাছ থেকে নৃত্য প্রশিক্ষণ ও তালিম নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করে।
১৯৮২ সালে বড় বোনের স্বামী মাহাবুব মোঃ আলী রাঙামাটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করার পর কলেজের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। এরপর রাঙামাটির কবি, লেখক ও সঙ্গীত শিক্ষক মনোজ বাহাদুরের সাংস্কৃতিক সংগঠন “সূর্য শিখা শিল্পী গোষ্ঠী” সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করে। পরবর্তিতে নাচের ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধে ১৯৮৩ সালে রাঙামাটির তবলছড়িতে বর্তমানে (অস্থায়ী পাবলিক কলেজ) প্রাঙ্গণে “রুমঝুম” নামে একটি নাচের স্কুল প্রতিষ্ঠা করে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের নৃত্য প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। নৃত্য ও শিল্পকলায় তাঁর সৃষ্টি অনুপ্রেরণা যোগায় অসংখ্য ছেলে-মেয়েদের।
তার বড় মেয়ে সিনথিয়া বাবার পথ অনুস্মরণ করে বাবার কাছ থেকেই নৃত্য প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ শিল্প একাডেমীতে ভরতনাট্যম প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে ৩য় স্থান অর্জন করে।
এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নৃত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
তিনি বাংলাদেশ সাফ গেমস্, আইসিসি, ঢাকায় স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে রাঙামাটির নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ নতুন কুড়ি, এনটিভি চ্যানেলের নুপূর অনুষ্ঠানেও বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮৩ সালে তার হাতে গড়া রাঙামাটি জেলার নৃত্যশিল্পী বন্দনা দে, দ্বিপা ত্রিপুরা, দিশা ত্রিপুরা, কনিকা ত্রিপুরা, মুক্তা আইচ, শিখা ত্রিপুরা, মিনা ত্রিপুরা, ডাইনা, সুপর্ণা রায়, রবিন, এ্যামিলি দেওয়ান, সোমা, সিগ্ধা, অঞ্জনা চাকমাসহ আরো অনেক নৃত্যশিল্পী নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করে। এই শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় শিশু ও বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে সুনামের সাথে পুরস্কার অর্জন করেছে।
তার সুযোগ্য ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিশাল মজুমদার লন্ডন, লায়লানূর, সোমা চাকমা ভারত, সঞ্চনা চাকমা রাঙামাটি শিল্পকলা, ফিফা চাকমা খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইন্সটিটিউট, এ্যামিলি দেওয়ান খাগড়াছড়ি জেলা শিল্পকলা একাডেমী, কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলায় সঙ্গীতা দাশ’সহ আরো অনেকেই দেশে ও বিদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুনামের সাথে কর্মরত রয়েছেন।
বর্তমানে তার হাতে গড়া তরুন-তরুনী নৃত্যশিল্পীদের মধ্যে নিপুন, মনিষা মিত্র, ন¤্রতা খীসা, অংগীরা চৌধুরী, ত্রিপনা, সাগরিকা, ইতি চাকমা, এ্যানি চাকমা, প্রিয়াংকা, স্বজল ত্রিপুরা, ইয়েন ত্রিপুরা, রিনি দে, অনুপম ত্রিপুরা, সাদিয়া সেলিম বর্ণা, সিনথিয়া’সহ আরো অনেককে নিয়ে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তিনি নৃত্য অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্তমানে তিনি রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট, জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমীতে নৃত্য শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এই প্রথিতযথা নৃত্যশিল্পী বর্তমানে নৃত্যকেই ধ্যন ধারনা করে ছোট বড় ছেলে মেয়েদের নৃত্য প্রশিক্ষন দিয়ে চলেছেন।