বুধবার ● ২৩ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » পাবনা » চাটমোহরে পলো উৎসব
চাটমোহরে পলো উৎসব
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :: (৯ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪২মি.) ২৩ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাবনার চাটমোহরের খলিশা গাড়ি বিলে পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পলো দিয়ে যারা বিলে মাছ ধরেন তাদেরকে বাউত বলা হয়।
প্রতিবছর এসময় এ এলাকার মানুষেরা পলো দিয়ে বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ ধরেন বলে এ উৎসবকে স্থানীয় ভাষায় বাউত উৎসব বলা হয়। বুধবার পাবনার চাটমোহর, আটঘরিয়া, পাবনা সদর, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর এলাকার শত শত বাউত এ উৎসবে যোগ দেন।
ভোর বেলা থেকে শুরু করে নয়টা পর্যন্ত দুর-দুরান্ত থেকে নছিমন, করিমন, অটোভ্যান, মোটর সাইকেল, বাই সাইকেলে আবার কেউবা পায়ে হেঁটে রওনা হন বিলের উদ্দেশ্যে। তাদের হাতে ছিল পলো, চাক পলো, নেট পলো, ঠেলা জাল, বাদাই জাল, লাঠি জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম। বিলপাড়ে সমবেত হওয়ার পর একসাথে বিলে নেমে মাছ ধরার আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সহ নানা বয়স শ্রেণী পেশার মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, বিল থেকে বর্ষার পানি প্রায় নিঃশেষ হবার পথে। মূল বিল, খালে কিছু অবশিষ্ট পানি রয়েছে। উজানের বিলগুলো থেকে কিছু পানি এ খাল বেয়ে পরছে গুমানী নদীতে। এমন সময় এ এলাকার উৎসব প্রিয় মানুষেরা যোগ দিয়েছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে। মাছ পাওয়া না পাওয়া তাদের কাছে বড় কথা নয়, ব্যতিক্রমী এ উৎসবে যোগ দিয়ে আনন্দ উপভোগই যেন তাদের কাছে মুখ্য। তবে অনেকেই বোয়াল রুই কাতলা ষোল মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরেছেন আনন্দের সাথে।
বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি এক একটি পলোর উচ্চতা প্রায় তিন ফিটের মতো। শখের বশে অনেকে পলোতে শৈল্পিক কারুকার্য করিয়ে নিয়েছেন।
এ উৎসবে যোগ দিতে আসা পাবনার মামুদপুর গ্রামের মোজাহার আলী, চাটমোহরের দাথিয়া গ্রামের এনামুল হক, বোয়ালমারী গ্রামের আনিসুর রহমান ও বেলাল হোসেনসহ অন্যান্য বাউতরা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, হাজার হাজার মানুষ একসাথে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। মাছ সবাই পায় না। একজন পেলে আনন্দ ভাগাভাগি করেন সবাই। কে মাছ পেলো আর কে পেলো না তা নিয়ে দু:খ নেই কারো। প্রতি বছর আনন্দের জন্য, মাছ ধরার জন্য এই সময়টার অপেক্ষায় থাকেন তারা।
অনেকে এ এলাকার জলাশয় গুলো খনন করে মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে চাটমোহরে কর্মরত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, বাউত উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। দেশের অন্যান্য এলাকায় এ উৎসব প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে এ এলাকায় ঐতিহ্যটি এখনো টিকে আছে। বড় বিল, ডেঙ্গার বিল, খলিশাগাড়ি বিল, রহুল বিল, ডিকশীবিলসহ অন্যান্য বিলে বাউতরা মাছ ধরছে। তবে বাউত উৎসবের ফলে জীব বৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে। দেশী প্রজাতির ছোট মাছ, শ্যাওলা জাতীয় প্রাকৃতিক মৎস খাদ্য, পানির উপকারী অনুজীব নষ্ট হয়ে যায়।