বুধবার ● ২৮ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » ২ বিদেশীকে হত্যা নিয়ে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র রুখতেই হবে
২ বিদেশীকে হত্যা নিয়ে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র রুখতেই হবে
মোঃ লোকমান খান :: বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আলোচিত দেশ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এনেছে এদেশের সূর্যসন্তানরা। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে এদেশের ছেলেরা। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৩ বৎসর। এরই মধ্যে বহু রাজনৈতিক চড়াই উৎরাই পার হয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে নিজেদের মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেশ বন্যার দেশ, ঝড়-তুফান নিত্য সঙ্গী। ১৬ কোটি মানুষের এই চোট্ট দেশে এখন আর খাদ্যের অভাব নেই। আমরা খাদ্য রপ্তানী করছি। গার্মেন্টস শিল্প পৃথীবি খ্যাত। বাংলাদেশ হতে আমেরিকা সহ বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রে ঔষধ রপ্তানী হচ্ছে। বাংলাদেশের সিরামিক পন্য লন্ডন সহ বহু রাষ্ট্রে সমাদৃত। চিংড়ী, মিঠা পানির মাছ, লোনা পানির মাছ পৃথিবীর বহু দেশে রপ্তানী হচ্ছে তো হচ্ছেই। বাংলাদেশে জাহাজ নির্মান করার জন্য পশ্চিমা দেশ অর্ডার দিচ্ছে। খুলনা শিপ ইয়ার্ডে নিজস্ব যুদ্ধ জাহাজ তৈরী হচ্ছে। দেশে অসংখ্য কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সম পরিমান আরেকটি স্থান অর্থাৎ সমুদ্র বিজয় করে এনেছি। সমুদ্র এলাকায় তেল, গ্যাস, মৎস সহ আরো বিপুল সম্পদ আমাদের অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে। চট্টগ্রামের বর্হিনোংগর পোর্ট হচ্ছে। অর্থাৎ বিশ্বের সকল দেশের জাহাজ আমাদের ঘাটে ভিড়বে। ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে বাংলাদেশকে চীন সহ বিভিন্ন দেশের সংগে যুক্ত করে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজ করায় সেখানে উন্নয়নের বিভিন্ন কার্য্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতি সংঘ কর্তৃক “চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ” পদকে ভূষিত হয়েছেন। তথ্য ও টেলি কমুনিকেশনের জন্য “আইসিটি সাসটেইবেল ডেভেলপমেন্ট এওয়ার্ড” বাংলাদেশের জন্য বিরাট প্রাপ্তী। ইহা ব্যতিত বাংলাদেশের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথভুক্ত দেশ সমূহের পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্ব পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এশিয়ার মধ্যে “সেরা গভর্নর” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত মানের হওয়ায় হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের ২ জন বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষ যখন উন্নয়নের জন্য আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ষ্টিয়ারিং সঠিকভাবে ধরে যখন দেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে নিবার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন ঠিক তখুনি ২ জন বিদেশী নাগরিকের হত্যা নিয়ে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য হৈচৈ শুরু করে দিয়েছেন। অথচ এই ৭ দিনের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়ার প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমেরিকায় কয়েক দফায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলে ঢুকে এলো পাতাড়ী গুলি করে বহু ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। কই তখনতো কোন হৈচৈ শুনা যায়নি। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং হত্যাকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তখনতো মানবাধিকারের কোন কথাও কেউ তোলেনি। বাংলাদেশে বর্তমানে যখন ২ জন যুদ্ধপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তখন তাদের দোসররা এদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য হয়ত এ হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। এমনও হতে পারে বিএনপি যখন দেখছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্রুত দেশ এগিয়ে চলছে এবং মানুষ তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে তার হাতকে শক্তিশালী করছে এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ঠেকানো যাবে না। তখন বিএনপি শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রাকে ঠেকানোর জন্য বিদেশীকে হত্যা করে হাসিনা সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করছে। যাতে বিদেশীরা বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ পায়।
এমনিতে বিএনপি বহু বৎসর ধরে বিদেশীদের নিকট ধর্না দিয়ে আসছে। বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করেও সুবিধা করতে পারছে না। এমনকি শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংককে তোয়াক্কা না করে দেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে, বিদেশীদের হুমকী ধমকিকে হিসেবে না এনে নিজস্ব গতিতে দেশ চালাচ্ছে। তখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যও হয়তবা ২ বিদেশীকে হত্যা করা হতে পারে। ২ বিদেশীকে হত্যার ব্যাপারে সরকার তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তে অগ্রগতি আছে বলে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রদূতগণ বাংলাদেশ সরকারের সহিত একত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। চীন, রাশিয়া বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছে। অথচ ৪টি পশ্চিমা রাষ্ট্র বাংলাদেশে আই এস জংগীর কথা বলে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। আমরা পূর্বে দেখেছি আমেরিকা পারমানবিক অস্ত্র খোজার নামে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করেছে। ইরাক আজ ধংশাস্তুপ। লিবিয়াতে গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে গাদ্দাফীকে হত্যা করেছে। লিবিয়া বর্তমানে উদ্বাস্তুতে পরিনত হয়েছে। মিশরে হোসনীমোবারক ফাঁসীতে ঝুলবে ঝুলবে অবস্থা। সিরিয়ার আসাদকে হটানোর জন্য মরণপন বোমা বর্ষন করে চলছে। রাশিয়া এবং চীন সিরিয়ার পক্ষে থাকায় এখনও আসাদ টিকে আছে। ইরানকে নিয়ে কত তেলেসমতি কান্ড হয়েছে। ইরানীরা ঐক্যবদ্ধ থাকায় সেখান থেকে লেজ গুটিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকার। আফগানিস্তান আর পাকিস্তান ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির চালে আজ ধরাশায়ী। এদেশগুলোতে প্রতিদিন বোমা ফুটছেতো ফুটছেই। তুরস্কের রাজধানী আস্কারায় বোমার আঘাতে শতাধিক লোক নিহত এবং অসংখ্য লোক আহত অবস্থায় মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে।
পশ্চিমা ৪টি দেশ বাংলাদেশে আই.এস জংগীর কথা বলে অজুহাত সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ যেখানে ঘোষনা করেছে বাংলাদেশে আই.এস জংগী নেই এবং সন্ত্রাস নির্মূলে জিরো টলারেন্স হবে। সেক্ষেত্রে ৪টি দেশের অতি উৎসাহী মনোভাব কি তাহা বুঝতে হবে এদেশের জনগনকে। ক্ষমতার রাজনীতির জন্য খাল কেটে কুমির আনবেন না। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর প্রতি নজর দিন। যারা সোনার চামুচে খেয়েছে আজ তারা একটুকরা রুটীর জন্য বিশ্বের দ্বারে দ্বারে উদ্বাস্ত হয়ে ফিরছে। আমার সোনার বাংলাদেশের মানুষের বুদ্ধিবিবেক জাগ্রত আছে। তারা বিশ্ব মোড়লদেরকে চিনে। বাংগালীরা জাতীর ক্রান্তিলগ্নে এক এবং ঐক্য বজায় রেখেছে। সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে লাল সবুজের পতাকা তলে থাকবেই থাকবে। শেখ হাসিনা দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে চলো, জনগন তোমার সাথে আছে এবং থাকবে। লেখক- কলামিষ্ট এবং রাজনীতি বিশ্লেষক
আপলোড : ২৮ অক্টোবর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : সকাল ১১.৩২ মিঃ