বৃহস্পতিবার ● ২৪ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মুক্তিযোদ্ধা মতলেব ফকিরের কন্ঠের কাছে অভাব অনটন আর বয়সও হার মেনেছে
মুক্তিযোদ্ধা মতলেব ফকিরের কন্ঠের কাছে অভাব অনটন আর বয়সও হার মেনেছে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (১০ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩৭মি.) যে দিন গান গায় সেদিন পেটে দুমুঠো ভাত জোটে। গান না গাইলে কামলা খাটতে যেতে হয়। ষাট বছর ধরে মঞ্চে মঞ্চে গান গেয়ে জীবন ধারণ করেন মতলেব ফকির। এ পর্যন্ত দুই হাজার মঞ্চে উঠে গেয়েছেন, ভাবগান, লালন গীতি, ধোয়াজারী ও কবি গান। বলা যায় কবি গানই তার সঙ্গী।
১৯৭২ সালে কুষ্টিয়ার উদিবাড়ি গ্রামে তার গুরু মুনছুর মওলানার বাড়িতে কবিগান গেয়ে সবাইকে চমকে দেন। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে প্রথম মঞ্চে গান করতে ওঠেন। এরপর দ্বিতীয় গান করেন শৈলকুপার নিত্যানন্দপুর গ্রামে। সেখানে তিনি এক নাগাড়ে ৭ দিন ধরে কবি গান করেন। মতলেব ফকির ১৯৭৪ সালে বিটিভিতে গান করেন।
এখন তিনি খুলনা বেতারের শিল্পী। তার কণ্ঠে বিকশিত হয়েছে মরমী কবি পাগলাকানাই এর মর্মবানী। তিনি সবচে বেশি গেয়েছেন পাগলাকানাইয়ের গান। পাগলাকানাইসহ ঝিনাইদহের ৫৯ জন সাধকের তাত্বিক গান রয়েছে মতলেব ফকিরের ভন্ডারে। তিনি পড়া লেখা জানেন না বলে গানগুলো সংরক্ষন করতে পারেন না। গানগুলো সরল এবং সুফিবাদ ও আধ্যাত্ববাদের সাক্ষি। মতলেব ফকিরের দাবী মতে তার বয়স এখন ৮০ বছর।
এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সমানতালে গান গেয়ে চলেছেন। বয়স আর অভাবের কাছে হার মেনেছে কন্ঠ। মতলেব ফকির সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, তিনি যশোর জেলার খাজুরা এলাকার লেবুতলা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম আব্দুর রশিদ বিশ্বাস ও মায়ের নাম আনোয়ারা খাতুন। তিনি বড় হয়েছেন নানা বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পানামি গ্রামে। ১৯৫৬ সাল থেকে তিনি গান করছেন বলে জানান।
মতলেব ফকির লালন শাহ, পাগলাকানাই, কবি গোলাম মোস্তফা, দুদ্দু শাহ, পাঞ্জু শাহ, বেহাল শাহ, বাহাদুর বিশ্বাস, তমিজ উদ্দীন, জয়নাল বয়াতি, বিজয় সরকার, কেপি বসু, লংকেশ্বর, নিতাই, বড় গৌউর, আদিলুদ্দিন, আয়নাল, ইসারত ফকির, বজনাথ গোসাই, শাকের শাহ, শীতল শাহ, জহর উদ্দীন, মিয়াজান শাহ, কালো কোকিল, কালাচাঁদ, ফুলবাঁশ, নছের শাহ, হাওড়িয়া গোসাই, অক্ষয়, বলরাম, যোগেশ্বরী, শরৎ, মফিজ উদ্দীন, শামসদ্দিন, রবজ আলী, ক্ষেপাকান্ত, রাজলক্ষি, বলরাম শর্মা, যাদু বিন্দু, গুরুচান, হাতেম শাহ, খোদা বক্স শাহ, শুকচান ও অমুল্য শাহসহ বহু সাধকের গান গেয়েছেন মঞ্চে।
এই শেষ বয়সে তার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তিনি জানান, ১৮ বছর ঢোল সমুদ্র নদীর পাড়ে ছিন্নমুল পরিবারের মতো জীবন কাটিয়েছেন। এরপর ঝিনাইদহ শহরের বশির মাজমাদারের বাড়ির পেছনে জঙ্গল পরিস্কার করে ৪০ বছর ধরে বসবাস করেছেন। তার জীবন যাযাবরের মতো। জীবন সয়াহ্নে তিনি সরকারের কাছে চান রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি।
দুস্থ ভাতা হিসেবে সরকার থেকে বছরে যতসামান্য শিল্পী সম্মানী পান। তাতে তার সংসার চলে না। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ঘরে আগুন লেগে সব কিছু পুড়ে গেছে। প্রমান দেখাতে পরেনি বলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পান নি। যে মানুষটি গান গেয়ে শ্রোতাদের মনের খোরাক যুগিয়েছেন, সেই মানুষটি এখন নিজের পেটের খোরাক জোগাড় করতে পারছেন না।
স্ত্রী সন্তাান নিয়ে কষ্টের সংসার মতলেব ফকিরের। এই দুস্থ গায়ক এখন ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পেছনে গয়াসপুর গ্রামে বসবাস করেন। মতলেব ফকিরের সাথে যোগাযোগ ০১৭০৩২৯৩৪৩৫।