বৃহস্পতিবার ● ১ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » বিশ্বনাথে পুলিশকে দেখে পালাতে গিয়ে যুবকের নদীতে ঝাঁপ : লাশ উদ্ধার
বিশ্বনাথে পুলিশকে দেখে পালাতে গিয়ে যুবকের নদীতে ঝাঁপ : লাশ উদ্ধার
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: (১৭ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.২২মি.) সিলেটের বিশ্বনাথে ভারতীয় ‘তীর খেলার আস্তানায় হানা দিতে যাওয়া পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ‘শাহিনুল ইসলাম শাহীন’ নামক যুবক সুরমা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি (শাহীন) নিখোঁজ হয়ে গেলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উপজেলার লামাকাজী বাজার এলাকায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৫টায় ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ আসামী শাহীন হলেন লামাকাজি ইউনিয়নের সৎপুর গ্রামের মৃত রইছ আলীর পুত্র। এসময় স্থানীয় জনতার ধাওয়া খেয়ে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি -তদন্ত) মাসুদুর রহমান মাসুদ’সহ এক দল পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এরপর ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় ও ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতায় অবরুদ্ধ থাকা পুলিশ সদস্যদেরকে উদ্ধার করা হয়। এরআগে জুয়ার আসর থেকে থানা পুলিশ সিলেটের জালালাবাদ থানার খালপাড় গ্রামের গোলাম রেজার পুত্র আবদুল লতিফ (৩২) ও একই গ্রামের আসদ আলীর পুত্র জুনেদ আহমদ (২৫)’কে আটক করে। আর কয়েকজন আটক করলে স্থানীয় লোকজন তাদের ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে পুলিশ দাবি করে। শাহিনুল ইসলামকে প্রায় সাড়ে ৪ঘন্টা পর নদী থেকে রাত সাড়ে ৮টায় মৃতদেহ উদ্ধার করে ডুবুরী দল।
নদীতে ঝাঁপ দেওয়া শাহীন নিখোঁজ থাকায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসময় বিক্ষোদ্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে লামাকাজী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এনামুল হক এনাম মেম্বার, মুরব্বী আবদুর রহমান, ফয়জুল হক, ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান মাসুদ, এসআই হাবিবুর রহমান’সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ শাহিনুল ইসলাম শাহীন’র সন্ধানের (উদ্ধার) জন্য রাত ৭টায় সিলেট থেকে আসা ফায়ার ব্রিগেডের ডুবুরি দল প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে লামাকাজী বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এঘটনার সংবাদ পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থল উপস্থিত হন বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল হক।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লামাকাজী এলাকায় চলমান ভারতীয় ‘তীর’ খেলার জুয়ার আস্তানায় অভিযান চালানোর জন্য বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান মাসুদ’র নেতৃত্বে এক দল পুলিশ বুধবার বিকেলে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। পথিমধ্যে শাহীন নামক ওই ব্যক্তি পুলিশ দেখে দূর দেয়। পুলিশ তাকে পেছন থেকে দাড়াঁনোর চেষ্ঠা করলেও, শাহীন না থেমে আরো জোরে দূরে ওই এলাকায় দিয়ে বহমান সুরমা নদীতে ঝাঁপ দেয়। কিছু দূর সাঁতার দিয়ে যাওয়ার পর শাহীন পানিতে তলিয়ে যায়। শাহীন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পানিতে নিখোঁজ হয়ে পড়েছে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনতা বিক্ষোদ্ধ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বিক্ষোদ্ধ জনতা পুলিশকে ধাওয়া করেন। পুলিশ জনতায় ধাওয়ায় রাগীব-রাবেয়া উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এন্ড কলেজে অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম পিপিএম’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় এরির্পোট লেখা পর্যন্ত নদীতে ঝাপ দেয়া নিখোঁজ যুবকের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানাযায়।
‘শাহীন’ একজন তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে দাবি করে বিশ্বনাথ থানার এসআই হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জুয়াড়ীদের গ্রেফতার করার জন্য লামাকাজী এলাকায় গতকাল বুধবার বিকেলে পুলিশ অভিযান চালানোর প্রস্তুতিকালে, পুলিশ দেখে ‘শাহীন’ দূরে পালিতে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ।
লামাকাজী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এনামুল হক এনাম মেম্বার বলেন, পুলিশ দেখে শাহীন পালাতে ঘিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। তার সন্ধানের জন্য ফায়র ব্রিগেডের ডুবুরি দলের প্রচেষ্ঠায় তার (শাহীন) সন্ধানের জন্য প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম পিপিএম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, পুলিশ জুয়াড়িদের আস্তানায় হানা দেয়। এসময় ৬জন জোয়াড়িকে আটক করলে স্থানীয় জনতা ৪জনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তবে নদীতে ঝাপ দেয়া ব্যক্তি পুলিশ ধাওয়া করেনি বলে তিনি জানান। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।