বৃহস্পতিবার ● ১ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সহিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সহিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম :: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার প্রতি পূর্ণ ও অবিচল আনুগত্য রাখিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরাম্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নিম্নে বর্ণিত চারি খন্ড (ক, খ, গ, ঘ) সম্বলিত চুক্তিতে উপনীত হইলেনঃ
(ক) সাধারণ
১। উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করিয়া এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিয়াছেন;
২। উভয়পক্ষ এই চুক্তির আওতায় যথাশীঘ্র ইহার বিভিন্ন ধারায় বিবৃত ঐকমত্য ও পালনীয় দায়িত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইন, বিধানাবলী, রীতিসমূহ প্রণয়ন, পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন আইন মোতাবেক করা হইবে বলিয়া স্বীকৃত করিয়াছেন;
৩। এই চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করিবার লক্ষ্যে নিম্নে বর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হইবে;
(ক) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত একজন সদস্য আহ্বায়ক
(খ) এই চুক্তির আওতায় গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সদস্য
(গ) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ঐ
৪। এই চুক্তি উভয় পক্ষ কর্তৃক সম্পাদিত ও সহি করিবার তারিখ হইতে বলবৎ হইবে। বলবৎ হইবার তারিখ হইতে এই চুক্তি অনুযায়ী উভয়পক্ষ হইতে সম্পাদনীয় সকল পদক্ষেপ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই চুক্তি বলবৎ থাকিবে।
(খ) পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ/পার্বত্য জেলা পরিষদ
উভয় পক্ষ এই চুক্তি বলবৎ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯, বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯) এবং এর বিভিন্ন ধারাসমূহের নিম্নে বর্ণিত পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোপন করার বিষয়ে ও লক্ষ্যে একমত হইয়াছেন :
১। পরিষদের আইনে বিভিন্ন ধারায় ব্যবহৃত “উপজাতি” শব্দটি বলবৎ থাকিবে।
২। “পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ” এর নাম সংশোধন করিয়া তদপরিবর্তে এই পরিষদ “পার্বত্য জেলা পরিষদ” নামে অভিহিত হইবে।
৩। “অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা” বলিতে যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণত: বসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে।
৪। (ক) প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মহিলাদের জন্য ৩ (তিন) টি আসন থাকিবে। এইসব আসনের এক তৃতীয়াংশ (১/৩) অ-উপজাতীয়দের জন্য হইবে।
(খ) ৪ নম্বর ধারার উপ-ধারা ১, ২, ৩ ও ৪ মূল আইন মোতাবেক বলবৎ থাকিবে।
(গ) ৪ নম্বর ধারার উপ-ধারা (৫) এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত “ডেপুটি কমিশনার” এবং “ডেপুটি কমিশনারের” শব্দগুলির পরিবর্তে যথাক্রমে “সার্কেল চীফ” এবং “সার্কেল চীফের” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।
(ঘ) ৪ নম্বর ধারায় নিম্নোক্ত উপ-ধারা সংযোজন করা হইবে-“কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় কিনা এবং হইলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের সদস্য তাহা সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের চীফ স্থি’র করিবেন এবং এতদসম্পর্কে সার্কেল চীফের নিকট হইতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ব্যতীত কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় হিসাবে কোন অ-উপজাতীয় সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হইতে পারিবেন না”।
৫। ৭ নম্বর ধারায় বর্ণিত আছে যে, চেয়ারম্যান বা কোন সদস্য পদে নির্বাচিত ব্যক্তি তাঁহার কার্যভার গ্রহণের পূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগের
কমিশনারের সম্মুখে শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিবেন। ইহা সংশোধন করিয়া “চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার” এর পরিবর্তে “হাইকোর্ট ডিভিশনের কোন বিচারপতি” কর্তৃক সদস্যরা শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিবেন- অংশটুকু সন্নিবেশ করা হইবে।
৬। ৮ নম্বর ধারার চতুর্থ পংক্তিতে অবস্থিত “চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারের নিকট” শব্দগুলির পরিবর্তে “নির্বাচন বিধি অনুসারে” শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
৭। ১০ নম্বর ধারার দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত “তিন বৎসর” শব্দগুলির পরিবর্তে “পাঁচ বৎসর” শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
৮। ১৪ নম্বর ধারায় চেয়ারম্যানের পদ কোন কারণে শূন্য হইলে বা তাহার অনুপস্থিতে’ পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত একজন উপজাতীয় সদস্য সভাপতিত্ব করিবেন এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালন করিবেন বলিয়া বিধান থাকিবে।
৯। বিদ্যমান ১৭ নং ধারা নিম্নে উল্লেখিত বাক্যগুলি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হইবেঃ আইনের আওতায় কোন ব্যক্তি ভোটার তালিকাভূক্ত হওয়ার যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইতে পারিবেন যদি তিনি (১) বাংলাদেশের নাগরিক হন; (২) তাহার বয়স ১৮ বৎসরের কম না হয়; (৩) কোন উপযুক্ত আদালত তাহাকে মানসিকভাবে অসুস্থ ঘোষণা না করিয়া থাকেন; (৪) তিনি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন।
১০। ২০ নম্বর ধারার (২) উপ-ধারায় “নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ” শব্দগুলি স্বতন্ত্রভাবে সংযোজন করা হইবে।
১১। ২৫ নম্বর ধারার উপ-ধারা (২) এ পরিষদের সকল সভায় চেয়ারম্যান এবং তাহার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত একজন উপজাতীয় সদস্য সভাপতিত্ব করিবেন বলিয়া বিধান থাকিবে।
১২। যেহেতু খাগড়াছড়ি জেলার সমস্ত অঞ্চল মং সার্কেলের অন্তর্ভূক্ত নহে, সেহেতু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আইনে ২৬ নম্বর ধারায় বর্ণিত “খাগড়াছড়ি মং চীফ” এর পরিবর্তে “মং সার্কেলের চীফ এবং চাকমা সার্কেলের চীফ” শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হইবে। অনুরূপভাবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সভায় বোমাং সার্কেলের চীফেরও উপস্থিত থাকার সুযোগ রাখা হইবে। একইভাবে বান্দরবান জেলা পরিষদের সভায় বোমাং সার্কেলের চীফ ইচ্ছা করিলে বা আমন্ত্রিত হইলে পরিষদের সভায় যোগদান করিতে পারিবেন বলিয়া বিধান রাখা হইবে।
১৩। ৩১ নম্বর ধারার উপ-ধারা (১) ও উপ-ধারা (২) এ পরিষদে সরকারের উপ-সচিব সমতুল্য একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সচিব হিসাবে থাকিবেন এবং এই পদে উপজাতীয় কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হইবে বলিয়া বিধান থাকিবে।
১৪। (ক) ৩২ নম্বর ধারার উপ-ধারা (১) এ পরিষদের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে পরিষদ সরকারের অনুমোদনক্রমে, বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করিতে পারিবে বলিয়া বিধান থাকিবে।
(খ) ৩২ নম্বর ধারার উপ-ধারা (২) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে প্রণয়ন করা হইবেঃ “পরিষদ প্রবিধান অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে এবং তাঁহাদেরকে বদলী ও সাময়িক বরখাস্ত, অপসারণ বা অন্য কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার বজায় রাখিতে হইবে”।
(গ) ৩২ নম্বর ধারা উপ-ধারা (৩) এ পরিষদের অন্যান্য পদে সরকার পরিষদের পরামর্শক্রমে বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ করিতে পারিবে এবং এই সকল কর্মকর্তাকে সরকার অন্যত্র বদলী, সাময়িক বরখাস্ত, বরখাস্ত, অপসারণ অথবা অন্য কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করিতে পারিবে বলিয়া বিধান থাকিবে।
১৫। ৩৩ নম্বর ধারার উপ-ধারা (৩) এ বিধি অনুযায়ী হইবে বলিয়া উল্লেখ থাকিবে।
১৬। ৩৬ নম্বর ধারার উপ-ধারা (১) এর তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘‘অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন প্রকারে” শব্দগুলি বিলুপ্ত করা হইবে।
১৭। (ক) ৩৭ নম্বর ধারার (১) উপ-ধারার চতুর্থতঃ এর মূল আইন বলবৎ থাকিবে।
(খ) ৩৭ নম্বর ধারার (২) উপ-ধারা (ঘ) তে বিধি অনুযায়ী হইবে বলিয়া উল্লেখিত হইবে।
১৮। ৩৮ নম্বর ধারার উপ-ধারা (৩) বাতিল করা হইবে এবং উপ-ধারা (৪) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভারে এই উপ-ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ কোন অর্থ বৎসর শেষ হইবার পূর্বে যে কোন সময় সেই অর্থ-বৎসরের জন্য, প্রয়োজন হইলে, একটি বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করা যাইবে।
১৯। ৪২ নম্বর ধারায় নিম্নোক্ত উপ-ধারা সংযোজন করা হইবেঃ পরিষদ সরকার হইতে প্রাপ্য অর্থে হস্তান্তরিত বিষয়সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করিতে পারিবে, এবং জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিষদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করিবে।
২০। ৪৫ নম্বর ধারার উপ-ধারা (২) এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘‘সরকার” শব্দটির পরিবর্তে ‘‘পরিষদ’ শব্দটি প্রতিষ্ঠাপন করা হইবে।
২১। ৫০, ৫১ ও ৫২ নম্বর ধারাগুলি বাতিল করিয়া তদপরিবর্তে নিম্নোক্ত ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ এই আইনের উদ্দেশ্যের সহিত পরিষদের কার্যকলাপের সামঞ্জস্য সাধনে নিশ্চয়তা বিধানকল্পে সরকার প্রয়োজনে পরিষদকে পরামর্শ প্রদান বা অনুশাসন করিতে পারিবে। সরকার যদি নিশ্চিতভাবে এইরুপ প্রমাণ লাভ করিয়া থাকে যে, পরিষদ বা পরিষদের পক্ষে কৃত বা প্রস্তাবিত কোন কাজ-কর্ম আইনের সহিত সংগতিপূর্ণ নহে অথবা জনস্বার্থের পরিপন্থী তাহা হইলে সরকার লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিষদের নিকট হইতে তথ্য ও ব্যাখ্যা চাহিতে পারিবে এবং পরামর্শ বা নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
২২। ৫৩ ধারার (৩) উপ-ধারার ‘‘বাতিল থাকার মেয়াদ শেষ হইলে” শব্দগুলি বাতিল করিয়া তদ্পরিবর্তে ‘‘এই আইন” শব্দটির পূর্বে ‘‘পরিষদ বাতিল হইলে নব্বই দিনের মধ্যে” শব্দগুলি সন্নিবেশ করা হইবে।
২৩। ৬১ নম্বর ধারার তৃতীয় ও চতুর্থ পংক্তিতে অবস্থিত ‘‘সরকারের” শব্দটির পরিবর্তে ‘‘মন্ত্রণালয়ের” শব্দটি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
২৪। (ক) ৬২ নম্বর ধারার উপ-ধারা (১) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই উপ-ধারাটি প্রণয়ন করা হইবেঃ আপাতত: বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পুলেশের সাব-ইন্সপেক্টর ও তদ্নিম্ন স্তরের সকল সদস্য প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং পরিষদ তাহাদের বদলী ও প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার বজায় রাখিতে হইবে।
(খ) ৬২ নম্বর ধারার উপ-ধারা (৩) দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘‘আপাততঃ বলবৎ অন্য সকল আইনের বিধান সাপেক্ষে” শব্দগুলি বাতিল করিয়া তদ্পরিবর্তে ‘‘ যথা আইন ও বিধি অনুযায়ী” শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
২৫। ৬৩ নম্বর ধারার তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘‘সহায়তা দান করা” শব্দগুলি বলবৎ থাকিবে।
২৬। ৬৪ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারাটি প্রণয়ন করা হইবেঃ
(ক) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলার এলাকাধীন বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমিসহ কোন জায়গা-জমি পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে ইজারা প্রদানসহ বন্দোবস্ত, ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তর করা যাইবে না।
তবে শর্ত থাকে যে, রক্ষিত (Reserved) বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় শিল্প কারখানা ও সরকারের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হইবে না।
(খ) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ও আওতাধীন কোন প্রকারের জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিষদের সাথে আলোচনা ও ইহার সম্মতি ব্যতিরেকে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাইবে না।
(গ) পরিষদ হেডম্যান, চেইনম্যান, আমিন, সার্ভেয়ার, কানুনগো ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দের কার্যাদি তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে।
(ঘ) কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা (Fringe Land) জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির মূল মালিকদেরকে বন্দোবস্ত দেওয়া হইবে।
২৭। ৬৫ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারা প্রণয়ন করা হইবে ঃ আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জেলার ভূমি উন্নয়নকর আদায়ের দায়িত্ব পরিষদের হস্তে ন্যস্ত থাকিবে এবং জেলায় আদায়কৃত উক্ত কর পরিষদের তহবিলে থাকিবে।
২৮। ৬৭ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ পরিষদ এবং সরকারী কর্তৃপক্ষের কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিলে সরকার বা পরিষদ নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করিবে এবং পরিষদ ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের সমন্বয় বিধান করা যাইবে।
২৯। ৬৮ নম্বর ধারার উপ-ধারা (১) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই উপ-ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে এবং কোন বিধি প্রণীত হওয়ার পরেও উক্ত বিধি পূনর্বিবেচনার্থে পরিষদ কর্তৃক সরকারের নিকট আবেদন করিবার বিশেষ অধিকার থাকিবে।
৩০। (ক) ৬৯ ধারার উপ-ধারা (১) এর প্রথম ও দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘‘সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে” শব্দগুলি বিলুপ্ত এবং তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘‘করিতে পারিবে” এই শব্দগুলির পরে নিম্নোক্ত অংশটুকু সন্নিবেশ করা হইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, প্রণীত প্রবিধানের কোন অংশ সম্পর্কে সরকার যদি মতভিন্নতা পোষণ করে তাহা হইলে সরকার উক্ত প্রবিধান সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে বা অনুশাসন করিতে পারিবে।
(খ) ৬৯ নম্বর ধারার উপ-ধারা (২) এর (জ) এ উল্লেখিত ‘‘পরিষদের কোন কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা অর্পণ”-এই শব্দগুলি বিলুপ্ত করা হইবে।
৩১। ৭০ নম্বর ধারা বিলুপ্ত করা হইবে।
৩২। ৭৯ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ পার্বত্য জেলায় প্রযোজ্য জাতীয় সংসদ বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত কোন আইন পরিষদের বিবেচনায় উক্ত জেলার জন্য কষ্টকর হইলে বা উপজাতীয়দের জন্য আপত্তিকর হইলে পরিষদ উহা কষ্টকর বা আপত্তিকর হওয়ার কারণ ব্যক্ত করিয়া আইনটির সংশোধন বা প্রয়োগ শিথিল করিবার জন্য সরকারের নিকট লিখিত আবেদন পেশ করিতে পারিবে এবং সরকার এই আবেদন অনুযায়ী প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিবে।
৩৩। (ক) প্রথম তফসিলে বর্ণিত পরিষদের কার্যাবলীর ১ নম্বরে ‘‘শৃঙ্খলা” শব্দটির পরে ‘‘তত্ত্বাবধান” শব্দটি সন্নিবেশ করা হইবে।
(খ) পরিষদের কার্যাবলীর ৩ নম্বরে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ সংযোজন করা হইবেঃ (১) বৃত্তিমূলক শিক্ষা, (২) মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা, (৩) মাধ্যমিক শিক্ষা।
(গ) প্রথম তফসিলে পরিষদের কার্যাবলীর ৬(খ) উপ-ধারায় ‘‘সংরক্ষিত বা” শব্দগুলি বিলুপ্ত করা হইবে।
৩৪। পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্য ও দায়িত্বাদির মধ্যে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়াবলী অন্তর্ভূক্ত হইবেঃ
(ক) ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা;
(খ) পুলিশ (স্থানীয়);
(গ) উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার;
(ঘ) যুব কল্যাণ;
(ঙ) পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন;
(চ) স্থানীয় পর্যটন;
(ছ) পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাষ্ট ও অন্যান্য স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ;
(জ) স্থানীয় শিল্প-বাণিজ্যের লাইসেন্স প্রদান ;
(ঝ) কাপ্তাই হ্রদের জলসম্পদ ব্যতীত অন্যান্য নদী-নালা, খাল-বিলের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সেচ ব্যবস্থা;
(ঞ) জন্ম-মৃত্যু ও অন্যান্য পরিসংখ্যান সংরক্ষণ;
(ট) মহাজনী কারবার ;
(ঠ) জুম চাষ।
৩৫। দ্বিতীয় তফসিলে বিবৃত পরিষদ কর্তৃক আরোপণীয় কর, রেইট, টোল এবং ফিস এর মধ্যে নিম্নে বর্ণিত ক্ষেত্র ও উৎসাদি অন্তর্ভূক্ত হইবেঃ
(ক) অযান্ত্রিক যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশন ফি;
(খ) পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের উপর কর;
(গ) ভূমি ও দালান-কোঠার উপর হোল্ডিং কর;
(ঘ) গৃহপালিত পশু বিক্রয়ের উপর কর;
(ঙ) সামাজিক বিচারের ফিস;
(চ) সরকারী ও বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর হোল্ডিং কর;
(ছ) বনজ সম্পদের উপর রয়্যালটির অংশ বিশেষ;
(জ) সিনেমা, যাত্রা, সার্কাস ইত্যাদির উপর সম্পূরক কর;
(ঝ) খনিজ সম্পদ অন্বেষণ বা নিস্কর্ষণের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুজ্ঞা পত্র বা পাট্টাসমূহ সূত্রে প্রাপ্ত রয়্যালটির অংশবিশেষ;
(ঞ) ব্যবসার উপর কর;
(ট) লটারীর উপর কর;
(ঠ) মৎস্য ধরার উপর কর।
(গ) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদঃ
১। পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করিবার লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ ইং (১৯৮৯ সনের ১৯, ২০ ও ২১ নং আইন) এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন ও সংযোজন সাপেক্ষে তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হইবে।
২। পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইবেন যাহার পদমর্যাদা হইবে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমকক্ষ এবং তিনি অবশ্যই উপজাতীয় হইবেন।
৩। চেয়ারম্যানসহ পরিষদ ২২ (বাইশ) জন সদস্য লইয়া গঠন করা হইবে। পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য উপজাতীয়দের মধ্যে হইতে নির্বাচিত হইবে। পরিষদ ইহার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিবেন।
পরিষদের গঠন নিম্নরূপ হইবেঃ
চেয়ারম্যান ১ জন
সদস্য উপজাতীয় (পুরুষ) ১২ জন
সদস্য উপজাতীয় (মহিলা) ২ জন
সদস্য অ-উপজাতীয় (পুরুষ) ৬ জন
সদস্য অ-উপজাতীয় (মহিলা) ১ জন
উপজাতীয় পুরুষ সদস্যদের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হইবেন চাকমা উপজাতি হইতে, ৩ জন মার্মা উপজাতি হইতে, ২ জন ত্রিপুরা উপজাতি হইতে, ১ জন মুরং ও তনচৈঙ্গ্যা উপজাতি হইতে এবং ১ জন লুসাই, বোম, পাংখো, খুমী, চাক ও খিয়াং উপজাতি হইতে।
অ-উপজাতীয় পুরুষ সদস্যদের মধ্যে হইতে প্রত্যেক জেলা হইতে ২ জন করিয়া নির্বাচিত হইবেন।
উপজাতীয় মহিলা সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকমা উপজাতি হইতে ১ জন এবং অন্যান্য উপজাতি হইতে ১ জন নির্বাচিত হইবেন।
৪। পরিষদের মহিলাদের জন্য ৩ (তিন) টি আসন সংরক্ষিত রাখা হইবে। এক তৃতীয়াংশ (১/৩) অ-উপজাতীয় হইবে।
৫। পরিষদের সদস্যগণ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হইবেন। তিন পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যানগণ পদাধিকারবলে পরিষদের সদস্য হইবেন এবং তাহাদের ভোটাধিকার থাকিবে। পরিষদের সদস্য প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার অনুরূপ হইবে।
৬। পরিষদের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বৎসর হইবে। পরিষদের বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন, পরিষদ বাতিলকরণ, পরিষদের বিধি প্রণয়ন, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয় ও পদ্ধতি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকূলে প্রদত্ত ও প্রযোজ্য বিষয় ও পদ্ধতির অনুরূপ হইবে।
৭। পরিষদে সরকারের যুগ্ম-সচিব সমতুল্য একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকিবেন এবং এই পদে নিযুক্তির জন্য উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে।
৮। (ক) যদি পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয় তাহা হইলে অন্তর্বতীকালীন সময়ের জন্য পরিষদের অন্যান্য উপজাতীয় সদস্যগণের মধ্যে হইতে একজন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইবেন।
(খ) পরিষদের কোন সদস্যপদ যদি কোন কারণে শূন্য হয় তবে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তাহা পূরণ করা হইবে।
৯। (ক) পরিষদ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বয় সাধন করাসহ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন ও ইহাদের উপর অর্পিত বিষয়াদি সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করিবে। ইহা ছাড়া অর্পিত বিষয়াদির দায়িত্ব পালনে তিন জেলা পরিষদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব কিংবা কোনরূপ অসংগতি পরিলক্ষিত হইলে আঞ্চলিক পরিষদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলিয়া পরিগণিত হইবে।
(খ) এই পরিষদ পৌরসভাসহ স্থানীয় পরিষদসমূহ তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করিবে।
(গ) তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধান করিতে পারিবে।
(ঘ) পরিষদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ এনজিওদের কার্যাবলী সমন্বয় সাধন করিতে পারিবে।
(ঙ) উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার আঞ্চলিক পরিষদের আওতাভূক্ত থাকিবে।
(চ) পরিষদ ভারী শিল্পের লাইসেন্স প্রদান করিতে পারিবে।
১০। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পরিষদের সাধারণ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অর্পিত দায়িত্ব পালন করিবে। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যোগ্য উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার প্রদান করিবেন।
১১। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি ও অধ্যাদেশের সাথে ১৯৮৯ সনের স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের যদি কোন অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয় তবে আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শ ও সুপারিশক্রমে সেই অসঙ্গতি আইনের মাধ্যমে দূর করা হইবে।
১২। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার
অন্তর্বতীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করিয়া তাহার উপর পরিষদের প্রদেয় দায়িত্ব দিতে পারিবেন।
১৩। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করিতে গেলে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে ও ইহার পরামর্শক্রমে আইন প্রণয়ন করিবেন। তিনটি পার্বত্য জেলার উন্নয়ন ও উপজাতীয় জনগণের কল্যাণের পথে বিরূপ ফল হইতে পারে এই রূপ আইনের পরিবর্তন বা নতুন আইন প্রনয়ণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পরিষদ সরকারের নিকট আবেদন অথবা সুপারিশমালা পেশ করিতে পারিবেন।
১৪। নিম্নোক্ত উৎস হইতে পরিষদের তহবিল গঠন হইবেঃ
(ক) জেলা পরিষদের তহবিল হইতে প্রাপ্ত অর্থ;
(খ) পরিষদের উপর ন্যস্ত এবং তৎকর্তৃক পরিচালিত সকল সম্পত্তি হইতে প্রাপ্ত অর্থ বা মুনাফা;
(গ) সরকার বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ঋণ ও অনুদান;
(ঘ) কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;
(ঙ) পরিষদের অর্থ বিনিয়োগ হইতে মুনাফা;
(চ) পরিষদ কর্তৃক প্রাপ্ত যে কোন অর্থ;
(ছ) সরকারের নির্দেশে পরিষদের উপর ন্যস্ত অন্যান্য আয়ের উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।
(ঘ) পূনর্বাসন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও অন্যান্য বিষয়াবলী
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা পুনস্থাপন এবং এই লক্ষ্যে পূনর্বাসন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও সংশ্লিষ্ট কার্য এবং বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ নিম্নে বর্ণিত অবস্থানে পৌঁছিয়াছেন এবং কার্যক্রম গ্রহণে একমত হইয়াছেনঃ
১। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থানরত উপজাতীয় শরণার্থীদের দেশে ফিরাইয়া আনার লক্ষ্যে সরকার ও উপজাতীয় শরণার্থী নেতৃবৃন্দের সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ৯ই মার্চ’ ৯৭ ইং তারিখে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ২৮ শে মার্চ ’ ৯৭ ইং হইতে উপজাতীয় শরণার্থীগণ দেশে প্রত্যাবর্তন শুরু করেন। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকিবে এবং এই লক্ষ্যে জন সংহতি সমিতির পক্ষ হইতে সম্ভাব্য সব রকম সহযোগিতা প্রদান করা হইবে। তিন পার্বত্য জেলার আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্থদের নির্দিষ্টকরণ করিয়া একটি টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
২। সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন এবং উপজাতীয় শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্ভাস্তুদের পূনর্বাসনের পর সরকার এই চুক্তি অনুযায়ী গঠিতব্য আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে যথাশীঘ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপ কাজ শুরু এবং যথাযথ যাচাইয়ের মাধ্যমে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করত: উপজাতীয় জনগণের ভূমি মালিকানা চুড়ান্ত করিয়া তাহাদের ভূমি রেকর্ডভূক্ত ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করিবেন।
৩। সরকার ভূমিহীন বা দুই একরের কম জমির মালিক উপজাতীয় পরিবারের ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করিতে পরিবার প্রতি দুই একর জমি স্থানীয় এলাকায় জমির লভ্যতা সাপেক্ষে বন্দোবস্ত দেওয়া নিশ্চিত করিবেন। যদি প্রয়োজনমত জমি পাওয়া না যায় তাহা হইলে সেই ক্ষেত্রে টিলা জমির (গ্রোভ ল্যান্ড) ব্যবস্থা করা হইবে।
৪। জায়গা-জমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে একজন অবসর প্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন (ল্যান্ড কমিশন) গঠিত হইবে। পূনর্বাসিত শরনার্থীদের জমি জমা বিষয়ক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা ছাড়াও এই যাবৎ যেইসব জায়গা-জমি ও পাহাড় অবৈধভাবে বন্দোবস্ত ও বেদখল হইয়াছে সেই সমস্ত জমি ও পাহাড়ের মালিকানা স্বত্ব বাতিল করণের পূর্ণ ক্ষমতা এই কমিশনের থাকিবে। এই কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপিল চলিবে না এবং এই কমিশনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে। ফ্রীঞ্জ ল্যান্ড (জলেভাসা জমি) এর ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হইবে।
৫। এই কমিশন নিম্নোক্ত সদস্যদের লইয়া গঠন করা হইবেঃ
(ক) অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি;
খ) সার্কেল চীফ (সংশ্লিষ্ট);
(গ) আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি;
(ঘ) বিভাগীয় কমিশনার/অতিরিক্ত কমিশনার;
(ঙ) জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (সংশ্লিষ্ট)।
৬। (ক) কমিশনের মেয়াদ তিন বৎসর হইবে। তবে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শক্রমে ইহার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাইবে।
(খ) কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি করিবেন।
৭। যে উপজাতীয় শরণার্থীরা সরকারের সংস্থা হইতে ঋণ গ্রহণ করিয়াছেন অথচ বিবাদমান পরিস্থিতির কারণে ঋণকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করিতে পারেন নাই সেই ঋণ সুদসহ মওকুফ করা হইবে।
৮। রাবার চাষের ও অন্যান্য জমি বরাদ্দঃ যেসকল অ-উপজাতীয় ও অস্থানীয় ব্যক্তিদের রাবার বা অন্যান্য প্লান্টেশনের জন্য জমি বরাদ্দ করা হইয়াছিল তাহাদের মধ্যে যাহারা গত দশ বছরের মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেন নাই বা জমি সঠিক ব্যবহার করেন নাই সেসকল জমির বন্দোবস্ত বাতিল করা হইবে।
৯। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের লক্ষ্যে অধিক সংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করিবেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরী করার লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করিবেন। এবং সরকার এই উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করিবেন। সরকার এই অঞ্চলে পরিবেশ বিবেচনায় রাখিয়া দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়নে উৎসাহ যোগাইবেন।
১০। কোটা সংরক্ষণ ও বৃত্তি প্রদানঃ চাকুরী ও উচ্ছ শিক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমপর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত সরকার উপজাতীয়দের জন্য সরকারী চাকুরী ও উ”চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখিবেন। উপরোক্ত লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য সরকার অধিক সংখ্যক বৃত্তি প্রদান করিবেন। বিদেশে উচ্ছ শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বৃত্তি প্রদান করিবেন।
১১। উপজাতীয় কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার জন্য সরকার ও নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সচেষ্ট থাকিবেন। সরকার উপজাতীয় সংস্কৃতির কর্মকান্ডকে জাতীয় পর্যায়ে বিকশিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা করিবেন।
১২। জনসংহতি সমিতি ইহার সশস্ত্র সদস্যসহ সকল সদস্যের তালিকা এবং ইহার আওতাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিবরণী এই চুক্তি স্বাক্ষরের ৪৫ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট দাখিল করিবেন।
১৩। সরকার ও জনসংহতি সমিতি যৌথভাবে এই চুক্তি স্বাক্ষরের ৪৫ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমাদানের জন্য দিন, তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করিবেন। জনসংহতি সমিতির তালিকাভূক্ত সদস্যদের অস্ত্র ও গোলাবার“দ জমাদানের জন্য দিন, তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করার পর তালিকা অনুযায়ী জনসংহতি সমিতির সদস্য ও তাহাদের পরিবারবর্গের স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের জন্য সবরকমের নিরাপত্তা প্রদান করা হইবে।
১৪। নির্ধারিত তারিখে যে সকল সদস্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিবেন সরকার তাহাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করিবেন। যাহাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা আছে সরকার ঐ সকল মামলা প্রত্যাহার করিয়া নিবেন।
১৫। নির্দিষ্ট সময়-সীমার মধ্যে কেহ অস্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হইলে সরকার তাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন।
১৬। জনসংহতি সমিতির সকল সদস্য স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর তাহাদেরকে এবং জনসংহতি সমিতির কার্যকলাপের সাথে জড়িত স্থায়ী বাসিন্দাদেরকেও সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হইবে।
(ক) জনসংহতি সমিতির প্রত্যাবর্তনকারী সকল সদস্যকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পরিবার প্রতি এককালীন ৫০,০০০ টাকা প্রদান করা হইবে।
(খ) জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সদস্যসহ অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যাহাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া জারি অথবা অনুপস্থিতিকালীন সময়ে বিচারে শাস্তি প্রদান করা হইয়াছে, অস্ত্রসমর্পণ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর যথাশীঘ্র সম্ভব তাহাদের বিরুদ্ধে সকল মামলা, গ্রেফতারী পরোয়ানা এবং হুলিয়া প্রত্যাহার করা হইবে এবং অনুপস্থিতিকালীন সময়ে প্রদত্ত সাজা মওকুফ করা হইবে। জনসংহতি সমিতির কোন সদস্য জেলে আটক থাকিলে তাহাকেও মুক্তি দেওয়া হইবে।
(গ) অনুরুপভাবে অস্ত্র সমর্পণ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর কেবলমাত্র জনসংহতি সমিতির সদস্য ছিলেন কারনে কাহারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা শাস্তি প্রদান বা গ্রেফতার করা যাইবে না।
(ঘ) জনসংহতি সমিতির যে সকল সদস্য সরকারের বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা হইতে ঋণ গ্রহণ করিয়াছেন কিন্তু বিবাদমান পরিস্থিতির জন্য গৃহীত ঋণ সঠিক ভাবে ব্যবহার করিতে পারেন নাই তাহাদের উক্ত ঋণ সুদসহ মওকুফ করা হইবে।
(ঙ) প্রত্যাগত জনসংহতি সমিতির সদস্যদের মধ্যে যাহারা পূর্বে সরকার বা সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত ছিলেন তাহাদেরকে স্ব স্ব পদে পুনর্বহাল করা হইবে এবং জনসংহতি সমিতির সদস্য ও তাহাদের পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে চাকুরীতে নিয়োগ করা হইবে। এইক্ষেত্রে তাহাদের বয়স শিথিল সংক্রান্ত সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করা হইবে।
(চ) জনসংহতি সমিতির সদস্যদের কুটির শিল্প ও ফলের বাগান প্রভৃতি আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কাজের সহায়তার জন্য সহজশর্তে ব্যাংক ঋণ গ্রহণের অগ্রাধিকার প্রদান করা হইবে।
(ছ) জনসংহতি সমিতির সদস্যগণের ছেলেমেয়েদের পড়া-শুনার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হইবে এবং তাহাদের বৈদেশিক বোর্ড ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হইতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট বৈধ বলিয়া গণ্য করা হইবে।
১৭।(ক) সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি সই ও সম্পাদনের পর এবং জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সাথে সাথে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর) ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলীকদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হইতে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেওয়া হইবে এবং এই লক্ষ্যে সময়-সীমা নির্ধারণ করা হইবে। আইন-শৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে এবং এই জাতীয় অন্যান্য কাজে দেশের সকল এলাকার ন্যায় প্রয়োজনীয় যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা যাইবে। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন বা সময় অনুযায়ী সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করিতে পারিবেন।
(খ) সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প ও সেনানিবাস কর্তৃক পরিত্যক্ত জায়গা-জমি প্রকৃত মালিকের নিকট অথবা পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হইবে।
১৮। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সরকারী, আধা-সরকারী, পরিষদীয় ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারী পদে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ করা হইবে।
তবে কোন পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি না থাকিলে সরকার হইতে প্রেষণে অথবা নির্দিষ্ট সময় মেয়াদে উক্ত পদে নিয়োগ করা যাইবে।
১৯। উপজাতীয়দের মধ্য হইতে একজন মন্ত্রী নিয়োগ করিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হইবে। এই মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করিবার জন্য নিম্নে বর্ণিত উপদেষ্টা কমিটি করা হইবে।
১.পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী
১.চেয়াম্যান/প্রতিনিধি, আঞ্চলিক পরিষদ
১.চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ
১.চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ
১.চেয়ারম্যান/ প্রতিনিধি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ
১.সাংসদ, রাঙামাটি
১.সাংসদ, খাগড়াছড়ি
১.সাংসদ, বান্দরবান
১.চাকমা রাজা
১.বোমাং রাজা
(১১) মং রাজা
(১২) তিন পার্বত্য জেলা হইতে সরকার কর্তৃক মনোনীত এলাকার স্থায়ী অধিবাসী তিন জন অ-উপজাতীয় সদস্য।
এই চুক্তি উপরোক্তভাবে বাংলাভাষায় প্রণীত এবং ঢাকায় ১৮ই অগ্রহায়ণ ১৪০৪ সাল মোতাবেক ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ ইং তারিখে সম্পাদিত ও সইকৃত।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা
আহ্বায়ক সভাপতি
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।
———————- পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন
মঙ্গলবার, জুলাই ১৭, ২০০১
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
ঢাকা, ১৭ জুলাই, ২০০১/২রা শ্রাবণ ১৪০৮
সংসদ কর্তৃক গৃহীত নিম্নলিখিত আইনটি ১৭ই জুলাই, ২০০১ (২রা শ্রাবণ, ১৪০৮) তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করিয়াছে এবং এতদ্বারা এই আইনটি সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা যাইতেছে :-
২০০১ সানের ৫৩ নং আইন
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূমি সংক্রান্ত কতিপয় বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রাম অনগ্রসর উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল এবং অনগ্রসর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা বিধেয়; এবং
যেহেতু এই অঞ্চলের উপজাতীয় অধিবাসীগণসহ সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা প্রয়োজন; এবং
যেহেতু উপরিউক্ত লক্ষ্যসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিকের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার প্রতি পূর্ণ অবিচল আনুগত্য রাখিয়া পার্বত্য জেলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য জনসংহতি সমিতি বিগত ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪০৪ বঙ্গাব্ধ মোতাবেক ২রা ডিসেম্বর, ১৯৯৭ খৃষ্টাব্দ তারিখে একটি চুক্তি সম্পাদন করিয়াছে; এবং
যেহেতু উক্ত চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জায়গাজমি সংক্রান্ত কতিপয় বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি কমিশন গঠন ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলঃ-
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম : এই আইন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ নামে অভিহিত হইবে।
২। সংজ্ঞা : বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কিছু না থাকিলে, এই আইনেÑ
(ক) ‘আঞ্চলিক পরিষদ’ অর্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এর ধারা ৩ এর অধীন স্থাপিত আঞ্চলিক পরিষদ;
(খ) ‘কমিশন’ অর্থ এই আইনের ধারা ৩ এর অধীন গঠিত পার্বত্য ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন;
(গ) ‘চেয়ারম্যান’ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান;
(ঘ) ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ অর্থ খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান পার্বত্য জেলাসমূহ;
(ঙ) ‘পার্বত্য জেলা’ অর্থ রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা;
(চ) ‘পুনর্বাসিত শরণার্থী’ অর্থ ৯ই মার্চ ১৯৯৭ ইং তারিখে ভারতের আগরতলায় সরকারের সহিত উপজাতীয় শরণার্থী নেতৃবৃন্দের সম্পাদিত চুক্তির আওতায় তালিকাভুক্ত শরণার্থী;
(ছ) ‘প্রচলিত আইন’ বলিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই আইন বলবৎ হইবার পূর্বে যে সমস্ত আইন, ঐতিহ্য, বিধি, প্রজ্ঞাপন প্রচলিত ছিল কেবলমাত্র সেইগুলিকে বুঝাইবে;
(জ) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
(ঝ) ‘ভূমি’ বলিতে পার্বত্য জেলাধীন পাহাড় এবং জলে ভাসাসহ সমূদয় জমি বুঝাইবে;
(ঞ) ‘সচিব’ অর্থ কমিশনের সদস্য;
(ট) ‘সদস্য’ অর্থ কমিশনের সদস্য;
(ঠ) ‘সর্কেল চীফ’ অর্থ চাকমা চীফ বা বোমাং চীফ বা মং চীফ।
৩। কশিনের গঠন : (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন নামে একটি কমিশন থাকিবে।
(২) নিম্নবর্ণিত সদস্যগণ সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হইবে, যথা:-
(ক) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন;
(খ) আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান বা তাহার প্রতিনিধি হিসাবে তৎকর্তৃক মনোনীত উক্ত পরিষদের একজন সদস্য;
(গ) সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পদাধিকারবলে;
(ঘ) সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ, পদাধিকারবলে;
(ঙ) চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার বা তৎকর্র্তৃক মনোনীত একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার।
ব্যাখ্যা:- দফা (গ) এবং (ঘ) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘সংশ্লিষ্ট’ অর্থ বিরোধীয় ভূমি যথাক্রমে যে পার্বত্য জেলা এবং যে সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত সেই পার্বত্য জেলা এবং সেই সার্কেল।
(৩) কমিশনের চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং তাঁহার চাকুরীর শর্তাবলী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
(৪) সরকারের উদ্দেশ্য স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে চেয়ারম্যান স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।
(৫) যদি সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, চেয়ারম্যান গুরুতর অসদাচরণ কিংবা শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতার কারণে তাঁহার পদে বহাল থাকার অযোগ্য হইয়া পড়িয়াছেন, তাহা হইলে সরকার যে কোন সময়ে চেয়ারম্যানকে তাঁহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, শুনানীর যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান না করিয়া এই উপ-ধারার অধীনে চেয়ারম্যানকে তাঁহার পদ হইতে অপসারণ করা যাইবে না।
৪। কমিশনের কার্যালয় : (১) কমিশনের প্রধান কার্যালয় খাগড়াছড়ি জেলা সদরে থাকিবে।
(২) সরকার প্রয়োজনবোধে, যে কোন পার্বত্য জেলায় কমিশনের শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
৫। কমিশনের মেয়াদ : কমিশনের মেয়াদ হইবে চেয়ারম্যান নিয়োগের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসর :
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার আঞ্চলিক পরিষদের সহিত পরামর্শক্রমে, উহার মেয়াদ বৃদ্ধি করিতে পারিবে।
৬। কমিশনের কার্যাবলী ও ক্ষমতা : (১) কমিশনের কার্যাবলী নিম্নরূপ হইবে, যথা :-
(ক) পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা;
(খ) আবেদনে উল্লিখিত ভূমিতে আবেদনকারী বা ক্ষেত্রমত সংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষের স্বত্ব বা অন্যবিধ অধিকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নির্ধারণ এবং প্রয়োজনবোধে দখল পুনর্বহাল;
(গ) পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন বহির্ভূতভাবে কোন ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হইয়া থাকিলে উহা বাতিলকরণ এবং উক্ত বন্দোবস্তজনিত কারণে কোন বৈধ মালিক ভূমি হইতে বেদখল হইয়া থাকিলে তাহার দখল পুনর্বহাল:
তবে শর্ত থাকে যে, প্রযোজ্য আইনের অধীনে অধিগ্রহণকৃত ভূমি এবং রক্ষিত (জবংবৎাবফ) বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন শিল্প কারখানা ও সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এই উপ-ধারা প্রযোজ্য হইবে না।
(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কার্যাবলী পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমিত থাকিবে।
(৩) উক্ত কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে কমিশন যে কোন সরকারী বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত বা কাগজপত্র সরবরাহের এবং প্রয়োজনীয় উক্ত কর্তৃপক্ষের যে কোন কর্মকর্তাকে স্থানীয় তদন্ত, পরিদর্শন বা জরীপের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারিবে এবং উক্ত কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা উহা পালনে বাধ্য থাকিবেন।
(৪) কমিশন বা চেয়ারম্যান বা কমিশন কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত কোন সদস্য যে কোন বিরোধীয় ভূমি সরেজমিনে পরিদর্শন করিতে পারিবেন।
৭। কমিশনের বৈঠক, কোরাম ও কার্যপদ্ধতি : (১) এই আইন ও বিধি সাপেক্ষে কমিশন উহার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিবে।
(২) চেয়ারম্যানের নির্দেশে সচিব কমিশনের বৈঠকের স্থান, তারিখ ও সময় নির্ধারণ করিয়া সদস্যগণকে লিখিতভাবে অবহিত করিবেন।
(৩) কমিশনের কোন বৈঠকে কোরামের জন্য চেয়ারম্যান এবং অপর দুইজন সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে এবং চেয়ারম্যান কমিশনের সকল বৈঠকে সভাপতিত্ব করিবেন ।
(৪) কোন বৈঠকে বিবেচিত বিষয় অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা পরবর্তী যে কোন বৈঠকে বিবেচনা ও নিষ্পত্তি করা যাইবে এবং সংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী বৈঠকে উপস্থিত সদস্যগণের কাহারও অনুপস্থিতির কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি বন্ধ থাকিবে না বা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম অবৈধ হইবে না ।
(৫) চেয়ারম্যান উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদের সহিত আলোচনার ভিত্তিতে ধারা ৬(১) এ বর্ণিত বিষয়াদিসহ উহার এখতিয়ারভুক্ত অন্যান্য বিষয়ে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে, তবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব না হইলে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
(৬) কমিশন ধারা ৬(১) এ উল্লিখিত কার্যাবলী সম্পাদনের ক্ষেত্রে উহার সকল সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে প্রদান করিবে।
৮। কমিশনের বৈঠকে সদস্যগণের যোগদানের নিমিত্ত প্রাপ্য ভাতা: কমিশনের বৈঠকে যোগদানের জন্য সরকার কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর সদস্যদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করিতে পারিবে এবং তদনুসারে উক্ত সদস্য উক্ত ভাতা পাইবেন।
৯। কমিশনের আবেদন দাখিল : এই আইনের অধীনে ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী তাহার দস্তখত বা টিপসহিযুক্ত দরখাস্ত সাদা কাগজে বাংলা ভাষায় লিখিয়া কমিশনের নিকট দাখিল করিবেন।
১০। আবেদন প্রতিপক্ষ : (১) ধারা ৯ এর অধীনে দায়েরকৃত প্রতিটি আবেদনে প্রতিপক্ষ হিসাবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, অবৈধ বন্দোবস্ত গ্রহীতা এবং ক্ষেত্রমত আবেদনকারীর জানামতে দাবীকৃত ভূমির বর্তমান দখলকার এর নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করিতে হইবে।
(২) উক্ত আবেদনে প্রতিপক্ষ হিসাবে উল্লিখিত সকল ব্যক্তির উপর কমিশন নোটিশ জারী করিবে এবং নোটিশের সহিত আবেদনপত্রের একটি কপিও সংযুক্ত করিবে।
(৩) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী প্রতিপক্ষ হিসাবে উল্লেখ করা হয় নাই এমন কোন ব্যক্তিও সংশ্লিষ্ট কারণ উল্লেখপূর্বক প্রতিপক্ষ হওয়ার আবেদন করিতে পারিবেন এবং কমিশন উক্ত আবেদন বিবেচনাক্রমে উক্ত ব্যক্তিকে প্রতিপক্ষভুক্ত করিতে হইবে।
১১। কমিশন কর্তৃক সাক্ষ্যগ্রহণ : (১) ধারা ৬(১) এ বর্ণিত কার্যাবলী সম্পাদনের নিমিত্ত কমিশনের কোন কার্যক্রমে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশন Evidence Act. 1872 (Act l of 1872) এর বিধানাবলী অনুসরণে বাধ্য থাকিবে না, বরং সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি অনুসারে কমিশন যেইরূপ যথাযথ বিবেচনা করে সেইরূপ সাক্ষ্য গ্রহণ ও লিপিবদ্ধ করিতে পারে।
(২) কোন বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বাংলা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় সাক্ষ্য প্রদান করিলে কমিশন একজন অনুবাদকের সহায়তা গ্রহণ করিতে এবং অনুবাদকের অনুবাদ অনুসারে উক্ত সাক্ষ্য বাংলায় লিপিবদ্ধ করিতে পারিবে।
(৩) কমিশন লিখিত নোটিশ দ্বারা যে কোন ব্যক্তিকে উহার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া সাক্ষ্য প্রদান এবং সকল প্রকার তথ্য ও দলিল-পত্রাদি দাখিলের নির্দেশ দিতে পারিবে।
(৪) কমিশন কর্তৃক কোন ব্যক্তির মৌখিক সাক্ষ্য হুবহু লিপিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক নহে, এবং উহার সারাংশ লিপিবদ্ধ করিলেই চলিবে।
(৫) কমিশনের সম্মুখে সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে Oaths Act. 1883 (Act X of 1883 প্রযোজ্য হইবে।
১২। কমিশন কর্তৃক ক্ষমতা অর্পণ : কমিশন, প্রয়োজনবোধে এবং তৎকর্তৃক নির্ধারিত শর্তাসাপেক্ষে, উহার চেয়ারম্যান বা অন্য কোন সদস্য বা কোন কর্মকর্তাকে লিখিত আদেশ দ্বারা, এই ধারা এবং ধারা ৬(১) এ বর্ণিত কার্যাবলী সম্পাদন ব্যতীত, কমিশনের অন্য যে কোন ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারিবে।
১৩। কমিশনের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ : (১) কমিশনের একজন সচিব থাকিবেন এবং তিনি আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অভিজ্ঞ সরকারের উপ-সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তাগণের মধ্য হইতে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন।
(২) কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের নিমিত্তে, সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা করিবে।
১৪। আর্থিক ব্যবস্থা : (১) কমিশনের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকার থোক বরাদ্দ হিসাবে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করিবে এবং এতদুদ্দেশ্য কমিশন সংশ্লিষ্ট বছরের জন্য আর্থিক বিবরণ সরকারের নিকট প্রেরণ করিবে।
(২) সচিব, চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে কমিশনের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব পালন করিবে।
(৩) কশিনের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও সচিব সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন ও সরকারী নির্দেশাবলী অনুসরণ করিবেন।
১৫। হিসাব ও নিরীক্ষা : (১) বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক অতঃপর মহা-হিসাব নিরীক্ষক বলিয়া অভিহিত, প্রতি বৎসর কমিশনের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা রিপোর্টের একটি করিয়া অনুলিপি সরকার ও কমিশনের নিকট পেশ করিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) মোতাবেক হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা-হিসাব নিরীক্ষক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি কমিশনের সকল রেকর্ড, দলিল-দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভান্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং কমিশনের যে কোন সদস্য, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
১৬। কমিশনের সিদ্ধান্তের আইনগত প্রকৃতি এবং চূড়ান্ততা : ধারা ৬(১) এ বর্ণিত কোন বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদনের উপর কমিশন প্রদত্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ানী আদালতের ডিক্রী বলিয়া গণ্য হইবে, তবে উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন আদালত বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা রিভিশন দায়ের বা উহার বৈধতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
১৭। কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন : (১) অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুকনা কেন কমিশনের সিদ্ধান্ত দেওয়ানী আদালতের ডিক্রী বা ক্ষেত্রমত আদেশের ন্যায় উহার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাধ্যমে বা প্রয়োজনবোধে সরকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করিতে বা করাইতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সকল কর্তৃপক্ষ কমিশনের নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকিবে।
১৮। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা : এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, এই আইন বলবৎ হইবার ছয় মাসের মধ্যে, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন করিবে।
১৯। কমিশনের অবমাননা আদালত অবমাননার শামিল : Penal Code, 1860 (Act XXV of 1860) Gi Section 220 Ges Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898) Gi Section-180 এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কমিশন উক্ত ধারাসমূহের উল্লিখিত দেওয়ানী আদালত বলিয়া গণ্য হইবে এবং তদনুসারে কমিশন উহার অবমাননকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
২০। সরল বিশ্বাসে কৃত কাজ-কর্ম সংরক্ষণ : এই আইন বা প্রবিধানের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোন কাজের ফলে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হইলে বা কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা বা অন্য কোন আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে না।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ
সচিব।