বৃহস্পতিবার ● ১ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » ঝিনাইদহে ১০ইউনিয়নে আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬১: ৩ জনের মৃত্যু
ঝিনাইদহে ১০ইউনিয়নে আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬১: ৩ জনের মৃত্যু
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (১৭ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.২৩মি.) ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০টি ইউনিয়ন ৪০টি গ্রামে আর্সেনিক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ঐ সব গ্রামের অধিকাংশ টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নের মাঝদিয়া ও জামাল ইউনিয়নের খোর্দ্দ তালিয়ান গ্রামের শতভাগ নলকুপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ে আর্সেনিক রোগীর কোন তালিকা কিংবা রোগীদের সার্বিক সহযোগিতার কোন খবর না থাকলেও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী প্রায় ১৬১জন তালিকাভুক্ত আর্সেনিক রোগী রয়েছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর আগে একটি জরিপ করে তার তালিকা অফিসে ঝুলিয়ে রাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী (২০১২) উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নের মাঝদিয়া গ্রামে ৬৩ জন, সুবর্ণসারা গ্রামে ১১ জন, বেলাট দৌলতপুর গ্রামে ৪ জন, মহিষাহাটি গ্রামে ১জন, জগন্নাথপুর গ্রামে ১৬জন, সোনালী ডাঙ্গা গ্রামে ১ নাটোপাড়া গ্রামে ৪জন, বাদুরগাছা গ্রামে ৩জন, বাদেডিহি গ্রামে ৪ জন, বারফা গ্রামে ১জন, হাসিলবাগ গ্রামে ২জন, জামাল ইউনিয়নের খোর্দ্দতালিয়ান গ্রামে ১১ জন, উল্লাহ গ্রামে ১জন, বড় তালিয়ান গ্রামে ২, ছোট তালিয়ান গ্রামে ৬জন, গোপালপুর গ্রামে ২জন, রাখালগাছি ইউনিয়নের সানবান্ধা গ্রামে ৪জন, বড়ধোপাদি গ্রামে ২জন,।
সুন্দরপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে ২জন, আলাইপুর গ্রামে ২জন ছোট ভাটপাড়া গ্রামে ২জন, কাদিরকোল গ্রামে ১জন, হাসানহাটি গ্রামে ১জন, সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামে ১জন, বড় সিমলাগ্রামে ১জন, নিয়ামতপুর ইউনিয়নের শালিখা গ্রামে ১জন, দাপনা গ্রামে ১জন নগরচাপরাইল গ্রামে ১জন, রায়গ্রাম ইউনিয়নের গুমরাইল গ্রামে ১জন, মালিয়াট ইউনিয়নের দিঘারপাড়া গ্রামে ৪জন, মাগুরা গ্রামে ২জন, বেথুলি গ্রামে ১জন, কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাডাঙ্গা গ্রামে ১জন, কোলা ইউনিয়নের কামালহাট গ্রামে ১জন, দামদরপুর গ্রামে ২জন, দাড়বায়শা গ্রামে ১জন, ত্রিলোচানপুর ইউনিয়নের গোবরডাঙ্গা গ্রামে ২জন, বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ১জন।
এছাড়াও আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে খোর্দ্দ তালিয়ান গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে ইউসুফ মন্ডল ও মাঝদিয়া গ্রামে ইজ্জত আলী ও জয়দেব নামক ৩ জন রোগী মারা গেছে।
খোর্দ্দ তালিয়ান গ্রামের আব্দুল মজিদ, সামসুদ্দিন, শহিদুর ইসলাম, বারেক মন্ডল, ইসলাম মন্ডল, হিলাল উদ্দিন বলেন, তারা জন্মের পর থেকেই বাড়ির নলকুপ থেকে পানি খাচ্ছিলেন। হঠাত ২০০৮ সালের দিকে দেখেন হাতে তালু, শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানির মতো ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রথমে মনে করেছিলেন তাদের শরীরে চুলকানী বা পচড়া জাতিয় কিছু হতে পারে। বিষয়টি জানাজানি হবার পর স্থানীয় কিছু এনজিও তাদরে এই স্থানগুলো পরিক্ষা করে জানতে পারে তাদের শরীরে আর্সেনিক যুক্ত পানি খাওয়ার কারনে আর্সেনিকোসিসে রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
তারা আরো বলেন, ২০১২-২০১২ সালের দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তারা আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের তালিকাভুক্ত হন। হাসপাতাল থেকে সেই সময় কিছু ঔষধ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন তার আর কোন ঔষধ খান না। জেনে শুনে আসেনিক যুক্ত নলকুপেরর পানি পান করছে। কালীগঞ্জে মাঝদিয়া গ্রামে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায, যখন নলকুপে আর্সেনিক আছে জানা যায সেই সময় বেশ কয়েকটি এনজিও রোগীদের বিশুদ্ধ পানি খাবার জন্য আর্সেনিক আইরান রিমুভাল প্লান্ট (এআইআরপি) ও গভীর নলকুপ স্থাপন করে। এছাড়ার আক্রান্ত রোগীরা বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনেকে ভাল হবার পথে।
খোর্দ্দ তালিয়ান গ্রামের বাসিন্দা ও কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জয়নাল আবেদিন জানান, তাদের গ্রামে শতভাগ নলকুপে আর্সেনিক । এই গ্রামে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মাত্র ২টি গভীর নলকুপ স্থাপন করেছে। যা গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার লোকের জন্য অপ্রতুল।
কালীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো: আব্দুল মান্নান সাংবাদিককে বলেন, গত ২০০৩ সালে উপজেলায় আর্সেনিক বিষয়ে একটি জরিপ করা হয়। ঐ জরিপে সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নে ৫.৩৭% নলকুপে, জামাল ইউনিয়নে ১২.৮৫% কোলা ইউনিয়নে ১৮.৯৪% নলকুপে, নিয়ামতপুর ইউনিয়ে ৮.৯২% নলকুপে, সিমলা রোকনপুর ইউনিয়নে৩.৮৬%, ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে ২.২২% নলকুপে, রায়গ্রাম ইউনিয়নে ৪.৯৯% নলকুপে, মালিয়াট ইউয়িনয়ে ১৩.৮৯% নলকুপে, বারবাজার ইউনিয়নে ২৭.৩০% নলকুপে, কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নে ১০.০৮% নলকুপে, রাখালগাছি ইউনিয়নে ৪.৪৩% নলকুপে, এবং কালীগঞ্জ পৌরসভায় ৪.৪৮% নলকুপে আর্সেনক দুষণযুক্ত (লাল) রয়েছে। সেই সময় ২৯জন রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এর পর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকায় শুধু গভীর নলকুপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিতে অনুরোধ করা হয়।