শুক্রবার ● ২ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » পার্বত্য চুক্তির ১৯ বর্ষপূর্তিতে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের ৮ দফা দাবি
পার্বত্য চুক্তির ১৯ বর্ষপূর্তিতে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের ৮ দফা দাবি
আলমগীর হোসেন :: সাবেক শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পিসিজেএসএস সদস্যরা ৩৫ হাজার বাঙালীকে হত্যা করেছে। সেসময় বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে, টাইম-বোমা, আগুন বোমায় ব্রাশ ফায়ারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, সেই নেতার সাথে ১৯৯৮ সালে চীফ হুইপের করা চুক্তিটি আসলে একটি কালোচুক্তি। পার্বত্য অঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পর্যন্ত এখানে সন্তুু লারমা যা বলবেন, তাই মেনে চলতে হচ্ছে।
অর্থাৎ বাঙালিরা এখানেও ন্যায় বিচার পায়নি এভাবে চলতে থাকলে পাবেও না। বাংলাদেশের আইনে মৃত্যুদন্ড পাওয়া পিসিজেএসএস সদস্য আসামীরাও আপীল করতে পারেন, রিভিউ করতে পারেন, এমনকি রাষ্ট্রপতির কাছে ও চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে নিজের ন্যায় বিচার প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে পারেন।
অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে সেই মৌলিক মানবাধিকার টুকুও আজ হরণ করা হল। কেন ?
শুধু তাই নয়, সংক্ষুব্ধ বাঙালিরা প্রতিকার চেয়ে কোন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারী কিংবা কমিশনের চেয়ারম্যান/সদস্য কারো বিরুদ্ধেও কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলাও করতে পারবে না। অতিরিক্ত আবদার হিসেবে সন্তুু লারমা কথিত কমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারী পদে যোগ্য/উপযুক্ত বাংলাভাষী জনবল নিয়োগকেও নিষিদ্ধ করে শুধুমাত্র উপজাতি নিয়োগের ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করে নিয়েছে।
অর্থাৎ জলে-স্থলে অন্তরীক্ষে সব দিক দিয়ে পার্বত্যবাসী বাঙালিদের ভূমি, ভোট, ভাতের অধিকারকে কেড়ে নেয়ার চুড়ান্ত আলামত এই বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন - ২০১৬।
তাই অধিকার হারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি ও উপজাতি জনগোষ্ঠির কল্যাণে নিন্মোক্ত বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করছি:
১। বাংলাদেশে আদিবাসী বিষয়ক সংগঠনগুলোর তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। বাঙালিরাই প্রকৃতভাবে বাংলাদেশের আদিবাসী, এই সত্যকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
২। শিক্ষা, চাকুরী, ঠিকাদারী, ব্যবসা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে উপজাতি কোটা নামকরণ বাতিল করে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জনগোষ্ঠির কোটা/অনগ্রসর কোটা চালু করতে হবে।
উপজাতি ছাত্রাবাসের আদলে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জন সংখ্যানুপা তিকতিক হারে আলাদা-ছাত্রাবাস নির্মান করতে হবে।
৩। ভূমি সমস্যা নিরসনে অবিলম্বে পাহাড়ে ভূমি জরিপ (ক্যাডেস্টাল সার্ভে) করতে হবে। ভূমি কমিশন আইন-২০১৬ এর বৈষম্য মূলক ধারাগুলো বাতিল করতে হবে। বাঙালিদের নামে কেনা ও সরকার প্রদত্ত খাসজমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে (কবুলিয়ত প্রাপ্তদের)। গুচ্ছ গ্রামের বাঙালিদেরকে স্ব-স্ব ভিটায় ঘর-বাড়ি করে দিতে হবে।
৪। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের দমনে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। ৩৫ হাজার বাঙালীর খুনী শান্তিবাহিনী ও তাদের নেতাদের বিচার আওতায় আনতে হবে।
৫। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা প্রত্যাহার চলবেনা। বরং সকল স্পর্শকাতর ঝুকিপূর্ণ অঞ্চলে আরো সেনাক্যাম্প, বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনসহ টহল ডিউটি বাড়াতে হবে।
৬। উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ঘৃনাত্মক, বিদ্বেষমূল্য সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থার আরো বেশী কঠোর মনিটরিং চালু করতে হবে।
৭। ব্যবসা, ব্যাংক লোন, আয়কর, ভ্যাটসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উপজাতিদের মতো পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদেরকেও আয়কর ও ভ্যাট নেয়া বন্ধ করে সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৮। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্ক ফোর্স, পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, পার্বত্য বাঙ্গালীদের মধ্য থেকে সচিব নিয়োগ, চাকুরীসহ সর্বক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গতভাবে ৫০% বাঙালি ও ৫০% উপজাতি কোটা ভাগ করে দিতে হবে।
বিশ্বের কোথাও ভুমি আইন স্থানীয় সরকারের হাতে দেয়া হয় না।
আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে দক্ষিণ সুদান ও পূর্ব তিমুরের ভাগ্যবরণ করতে দিব না। পাহাড়ে বাংলাদেশ সরকারের অধিগ্রহণকৃত ভূমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প-কারখানা ও সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনেই দেখতে চাই। ১৯২৭ সালের রিজার্ভ ফরেস্ট আইন ও ১৯৭৮ সালের বন আইনের বাস্তবায়ন চাই। যুগপৎ ১৯৫৮ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন, প্রাদেশিক সরকারের রাজস্ব দপ্তরের ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আদেশ, ১৯৭৯ সালের ৩১ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারী করা আদেশে পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। পার্বত্য অঞ্চলে ভুমি কর (রাজস্ব) আদায়ে জেলা প্রশাসকদের পূর্ণ ক্ষমতা দাবী করছি।
লেখক : সভাপতি, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।