বুধবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঐক্যবদ্ধ সনাতন সমাজ নামের সংগঠনের কর্মীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়েছে
ঐক্যবদ্ধ সনাতন সমাজ নামের সংগঠনের কর্মীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়েছে
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :: মঙ্গলবার ৬ ডিসেম্বর বিকেলে প্রেসক্লাব ভবনের প্রধান ফটক এবং সামনের সড়ক অবরুদ্ধ করে মানববন্ধন করছিল তারা। এসময় সাংবাদিকরা প্রেসক্লাব ফটক ও সড়ক বন্ধ না করার অনুরোধ করলে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা শুরু করে। এসময় তারা সাংবাদিকের গাড়ি ভাংচুর করে আগুন দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এছাড়া সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে নিজেরাই ছবি মুছে ফেলে।
ঐক্যবদ্ধ সনাতন সমাজ, বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। এসময় চার সাংবাদিককে মারধর করেছে তারা।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং চারজনকে আটক করে। হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে কোতয়ালি থানার এসআই বিকাশ চন্দ্র শীলও মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
আটক চারজন হল, অজয় দত্ত (২০), নয়ন সরকার (২১), পিয়াল শর্মা (২০) ও অনুভব মজুমদার (২১)।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, হামলাকারী যুবকরা রাস্তা থেকে প্রেসক্লাবের দোতলায় উঠে আসে। আমি এবং বাংলানিউজের ব্যুরো প্রধান তপন চক্রবর্তী বারবার তাদের থামতে বললেও তারা আমাদের সঙ্গেও উদ্ধত আচরণ করে। তারা সাংবাদিক উজ্জ্বল ধর এবং রমেন দাশগুপ্তকে দেখিয়ে তাদের প্রেসক্লাব থেকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকে। এসময় তারা এই দুই সাংবাদিককে পেটানোর হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষসহ সাংবাদিক সমাজ সবসময়ই সংবেদনশীল। কিন্তু এসব দাবিতে সমবেত হওয়া একটি সংগঠনের কর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে যেভাবে হামলা করেছে তা স্মরণকালের ইতিহাসে নেই। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম রাস্তা থেকে প্রেসক্লাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা চালায়। কিন্তু তারাও প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢোকার সাহস পায়নি। আমরা এই ঘৃণ্য হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের আলোকচিত্রী হেলাল সিকদার জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হিন্দুদের মঠ-মন্দিরে ও বাড়িঘরে হামলার প্রতিবাদে জামালখানে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করছিল সংগঠনটি। মানববন্ধনে জড়ো হওয়া লোকজন প্রেসক্লাবের মূল ফটক ঘিরে এবং সড়কের মাঝখানে দাঁড়ানোর কারণে গাড়ি চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এসময় সেখানে আটকা পড়ে একুশে টেলিভিশনের প্রাইভেট কার। গাড়িতে বসা ছিলেন একুশে টেলিভিশনের আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহার এবং সময় টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান কমল দে। দুই সাংবাদিক গাড়ি থেকে নেমে উপস্থিত পুলিশের কাছে সাংবাদিকদের বহনকারী গাড়িটি পার করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। পুলিশকে অনুরোধ জানানোর সময় ২৫ থেকে ৩০ জন যুবক এসে গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করে। অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালিগালাজ করে। গাড়িতে লাথি মারে এবং কয়েকজন যুবক জ্বলন্ত মোমবাতি নিয়ে গাড়িটিতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। সাংবাদিক রফিকুল বাহার এসময় হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে অকারণে ক্ষিপ্ত যুবকদের শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তারা ওইসময় মোবাইল ফোনে গাড়ির নম্বরপ্লেট এবং সাংবাদিকের ছবি তুলতে থাকে।
পরে পুলিশ গাড়িটিকে সরিয়ে নিলে হামলাকারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে এসব যুবক প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা করলে আলোকচিত্র সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় তাদের ওপরও হামলা চালায়। সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবের দোতলায় উঠে গেলে হামলাকারী যুবকরা দৌড়ে এসে সেখানেও হামলা এবং ভাঙচুর চালায়।
এরপর তারা আলোকচিত্র সাংবাদিক বাংলানিউজের উজ্জল ধর সিংকু, ডেইলি স্টারের অনুরুপ টিটু ও সুপ্রভাত বাংলাদেশের হেলাল উদ্দিন সিকদার এবং বাংলানিউজের বিশেষ প্রতিনিধি রমেন দাশগুপ্তকে লাঞ্ছিত করে। প্রেসক্লাবের তিনতলা থেকে এটিএন নিউজের ক্যামেরাম্যান নয়ন চক্রবর্তী আলোকচিত্র ধারণের সময় তাকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করে।
প্রেসক্লাবের কার্যালয় থেকে সভাপতি কলিম সরওয়ারসহ সিনিয়র সাংবাদিক নেতারা এসে হামলাকারীদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হামলাকারী যুবকরা প্রেসক্লাব সভাপতির ওপরও হামলার চেষ্টা করে।
এছাড়া প্রেসক্লাবে উপস্থিত গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান, উদীচীর সহ সভাপতি সুনীল ধর, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান এবং বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপংকর দাশ তাদের থামানোর চেষ্টা করলে তাদেরও লাঞ্ছিত করে হামলাকারীরা।
পরে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চাওয়া হয়। সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে নগর পুলিশের উপ কমিশনারের (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের ধাওয়া দেয়। এসময় চারজনকে আটক করা হয়।
নগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমরা খুব গুরত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ইতোমধ্যে চারজনকে আটক করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে বাকিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। হামলায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ বলেন, আটক চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত আছে সেটা বের করার চেষ্টা করছি। হামলায় কারও ইন্ধন আছে কিনা কিংবা তাদের মোটিভ কি ছিল সেটা আমরা খতিয়ে দেখব।
হামলার ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে), চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। হামলায় জড়িত সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।