শনিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস
১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম :: (২৬ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.২০মি.) রবিবার ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। পাহাড়ের মানুষ আর তাদের কঠোর জীবনযাত্রা তুলে ধরার প্রয়াসে ২০০৩ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস।
জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের নির্দেশনায় ১১ ডিসেম্বর পর্বত দিবস পালিত হয়ে থাকে।
বিশ্বের ২৭ শতাংশ পাহাড়ের ভূমিকে কাজে লাগিয়ে সফল উত্পাদনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করা আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালন জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট মহলের উদ্দেশ্য।
অভিজ্ঞদের ধারনা, সঠিক উপায়ে পাহাড়ের ভূমিকে কাজে লাগাতে পারলে পাহাড়ের তো বটেই সমতলের খাদ্য চাহিদা মেটাতেও সক্ষম। আর এজন্য চাই পাহাড়ে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। যার ফলে পাহাড়ে একটি টেকসই কৃষি নির্ভর অর্থনীতি দেখা যাবে। স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পর্বতের গুরুত্ব তুলে ধরাই দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেপ্লাভমেন্ট (আইসিএমওডি) International Centre for Intigrated Mountain Development (ICMOD) এর ৪৭তম বোর্ড সভায় অংশগ্রহণের জন্য গণ্যমান্য বিদেশী ব্যক্তিবর্গ গত ৫ ডিসেম্বর সোমবার রাঙামাটিতে আগমন করেন।
রাঙামাটি সেনানিবাসস্থ রেস্ট হাউজ ‘আরণ্যক’ এ অতিথিদেরকে অভ্যর্থনা জানান রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ও জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
এরপর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর আয়োজনে ‘গিরিশোভা’ লঞ্চে আগত বিদেশীদের সম্মানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। কাপ্তাই হৃদে পানির উপর আয়োজিত মনোমুগ্ধকর এ পরিবেশনার ভূয়সী প্রশংসা করেন রাঙামাটিতে আগত বিদেশী অতিথিবৃন্দ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি, ৩০৫ পাদাতিক রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সানাউল হক পিএসসি ও রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান প্রমুখ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোয় রয়েছে ছোট-বড় অনেক পর্বত। কিন্তু এর সঠিক উচ্চতা নিয়ে রয়েছে নানা মত। সেজন্য এসব পর্বতের সঠিক উচ্চতা নির্ণয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে ভ্রমণ সংগঠন ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ ও অনলাইন ফোরাম ‘অ্যাডভেঞ্চারবিডি’।
তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার সাতটি পর্বত। গাজী মুনছুর আজিজ জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট-বড় বেশ কিছু পাহাড় বা পর্বতশৃঙ্গ। এসব পর্বতশৃঙ্গের সঠিক উচ্চতা নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে ভুল ধারণাও রাখেন। সেজন্যই এসব পর্বতের প্রকৃত উচ্চতা নির্ণয় করার লক্ষ্যে এক দল অভিযাত্রী ট্রেকার বা পর্বতারোহী কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা এক বছর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান চালান। তারা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত যন্ত্রের সাহায্যে নির্ণয় করেন দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার সাতটি পর্বত। আর অনুসন্ধান কার্যক্রমের আয়োজন করেন যৌথভাবে ভ্রমণ সংগঠন ভ্রমণ বাংলাদেশ ও অনলাইন ফোরাম অ্যাডভেঞ্চারবিডি।
এসব সংগঠনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের পর্বতগুলোর খোঁজ করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে সম্প্রতি তারা দেশের সাতটি সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্বতের তথ্য প্রকাশ করেছেন। তারা এসব পর্বতের উচ্চতা মাপার জন্য ব্যবহার করেছেন- জারমিন ইট্র্যাক্স-৩০, ইট্র্যাক্স সামিট, ইট্র্যাক্স-৭৬ সিএসএক্স নামের যন্ত্রগুলো। এ যন্ত্রগুলোয় রয়েছে পৃথক ব্যারোম্যাটিক অলটামিটার (বায়ুর চাপ নির্ভর উচ্চতা মাপক যন্ত্র); যা দিয়ে উচ্চতা মাপার ক্ষেত্রে নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায়। আর এসব যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কারিগরি সহযোগিতা করেছে জিপিএস বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম। তিনি পর্বতের উচ্চতা মাপার এ অভিযাত্রী দলের জিপিএস ম্যাপ-ট্রেইল ও অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে লক্ষ রাখেন।
তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার সাতটি পর্বতের মধ্যে প্রথমটির অবস্থান বান্দরবানের রেমাক্রির ‘মাদক তং বা সাকাহাফং’ পর্বত। এর উচ্চতা ১ হাজার ৫০ মিটার বা ৩ হাজার ৪৪৫ ফুট।
দ্বিতীয়টির অবস্থান বান্দরবানের থানছির ‘জ-তলং’। এর উচ্চতা ১ হাজার ১৪ মিটার বা ৩ হাজার ৩২৮ ফুট।
তৃতীয়টির অবস্থান বান্দরবানের রেমাক্রির ‘দুমলং’ পর্বত। এর উচ্চতা ১ হাজার ১০ মিটার বা ৩ হাজার ৩১৫ ফুট।
চতুর্থ স্থানে আছে বান্দরবানের রুমার ‘কেওক্রাডং’ পর্বত। এর উচ্চতা ৯৮৫ মিটার বা ৩ হাজার ২৩০ ফুট।
পঞ্চম স্থানে আছে বান্দরবানের থানছির ‘কংদুক বা যোগিহাফং’ পার্বত। এর উচ্চতা ৯৮৩ মিটার বা ৩ হাজার ২২২ ফুট।
ষষ্ঠ স্থানে আছে বান্দরবানের বড়থলির ‘মাই-থাইজমা’ পর্বত। এর উচ্চতা ৯৬৯ মিটার বা ৩ হাজার ১৭৯ ফুট
এবং সপ্তম স্থানে আছে বান্দরবানের থিন্দলপাড়ার ‘লুকু তংবা থিন্দলতে’ পর্বত। এর উচ্চতা ৯৫৭ মিটার বা ৩ হাজার ১৩৯ ফুট।
ভ্রমণ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান খান মনা সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, ভ্রমণ বাংলাদেশের সদস্যরা ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, প্রত্যন্ত এলাকার নতুন নতুন ট্রেইল, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর আবাস-আবাসন, জীবনধারা ও সংস্কৃতি নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সেজন্য প্রতি বছরই ভ্রমণ বাংলাদেশের বেশ কিছু অভিযাত্রা ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে দেশের সর্বোচ্চ চূড়া নিয়ে তথ্যবিভ্রাট দেখা যায় অনেক আগে থেকেই।
তাই এ বিষয়ে একটি সমন্বিত অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা, যা সময়ের অনিবার্য দাবি। সময়ের সে দাবি পূরণ করার লক্ষ্যেই এ পর্বতশৃঙ্গগুলো পরিমাপ ও জরিপের কাজটি গত দুই বছর ধরে পরিচালনা করে আসছে।
অ্যাডভেঞ্চাচারবিডির রাতুল সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি চূড়ায় উপস্থিত থেকে জিপিএস রিডিং ও এর ছবি সংগ্রহ করেছি আমি এবং চেষ্টা করেছি নির্ভুল তথ্য উপস্থাপন করতে। ছবি :অ্যাডভেঞ্চারবিডি