বুধবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে কবর স্থানে ওষধি বাগান
ঝিনাইদহে কবর স্থানে ওষধি বাগান
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (৩০ অগ্রহায়ন ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৩৭মি.) কবর স্থান পরিস্কার রাখতে ও নিয়মিত আসা যাওয়া করতে ঝিনাইদহ ভুটিয়ারগাতি এলাকার এক মহান ব্যাক্তি গড়ে তুলেছেন ওষধি বাগান। পথ চলতে ঘন জঙ্গল চোখে পড়লেই ধরে নেওয়া হয় জায়গাটি কবরস্থান। কেউ মারা গেলে সেখানে দাফনের জন্য যাওয়া হয়, বাকি সময়ে জায়গাটির খোঁজ কেউ রাখে না। শিয়াল-কুকুরের আস্তানায় পরিনত হয় এই সকল জায়গাগুলি।
অনেকে এগুলোর হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখেন। কিন্তু জঙ্গল জঙ্গলই রয়ে যায়। আর কবর স্থান কবর স্থানই থাকে। নওশের আলীর সহযোগিতায় মাজেদুর রহমান তাদের পারিবারিক কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করেই ঘন জঙ্গল পরিষ্কারের মাধ্যমে সেখানে গড়ে তুলেছেন এক ঔষধি গাছের বাগান। যেখানে নিয়মিত পরিচর্চার কারনে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। অনেকে ঔষধি গাছের লতা-পাতা নিতে এই বাগানে আসছেন। বিভিন্ন গাছের ফুলের গন্ধে পাশ^বর্তী এলাকা মুগ্ধ হয়ে আছে। আর এই বাগান এলাকাবাসিকেও অনুপ্রানিত করেছে। আরো একটি বাগান গড়ে উঠছে তাদের গ্রামেই।
ঝিনাইদহ পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতি গ্রামের জোয়ারর্দার আনোয়ার হোসেন ওরফে মিনি মিয়ার দুই সন্তান। ছোট ছেলে জোয়ারর্দার মতিয়ার রহমান ওরফে মতি মিয়া ইতোমধ্যে মারা গেছেন। বড় ছেলে নওশের আলী থাকেন ঢাকায়। মৃত মতিয়ার রহমানের এক ছোট ছেলে মাজেদুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বড় ছেলে নওশের আলী গড়ে তুলেছেন এই ঔষধি গাছের বাগান। মাজেদুর রহমান সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, তাদের ৩৩ শতক জমির উপর রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান। যেখানে তার দাদা-দাদীর কবর রয়েছে।
এরপর তার বাবা মারা গেলে তাকেও এখানে দাফন করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার বাবা মারা গেছে প্রায় ৮ বছর। তিনি সে সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন। ৩ বছর হলো তিনি দেশে এসে বাবার কবর দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে জঙ্গল আর জঙ্গল। অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল তাদের বাবার কবরটি খুজে পাওয়া মুশকিল।এই অবস্থা দেখে তার মাথায় আসে জায়গাটি পরিষ্কার এবং ব্যবহার করতে হবে। তিনি জানান, চাচা নওশের আলী আগেথেকেই ঔষধি গাছ নিয়ে কাজ করেন। গাজিপুরে তার একটি বাগানও রয়েছে। এরপর চাচা আর তিনি মিলে নিজ গ্রামের কবর স্থানে গড়ে তুলেছেন ঔষধি গাছের বাগান।
মাজেদুর রহমান আরো বলেন, শুরুতে কবর স্থানের পবিত্রতা রক্ষা রাখার জন্য সেখানে কিভাবে এই বাগান করা যায় সেই চিন্তা মাথায় নেন। এরপর জায়গাটি পরিষ্কার করার কাজে হাত দেন। শুরু করেন বিভিন্ন ঔষধি গাছের চারা রোপন। যেখানেই কোনো ঔষধি গাছ পেয়েছেন সেখান থেকেই কিনে এনে তার বাগানে রোপন করেছেন। এক বছর বেড়া দিয়ে জায়গাটি ঘিরে রাখার পর ইটের প্রাচীর নির্মান করেছেন। কবর স্থানের জমিটিও ট্রাষ্টি করে দিয়েছেন। তিনি নিজেই প্রতিনিয়ত এই বাগানের পরিচর্জা করেন। গাছে পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার সবকিছুই নিজেই করেন।
বর্তমানে অশগন্ধা, দশমূল, অশোক, ইসেরমূল, লাল চন্দন, সাদা চন্দন, দুধরাজ, মনিরাজ, কাঞ্চনফুল, বিষকরবী, রিটা, গুয়েবাবলা, হরিতকি, আমলকি, বহেরা, চুইঝাল, কুঁজ, মহা সমুদ্র কোস্তরী আদাসহ শতাধিক ঔষধি গাছ রয়েছে। বাগানে সারিবদ্ধ গাছের ফাঁকে রয়েছে ৫টি কবর। জায়গা রাখা আছে আরো কবরের। গাছের পরিচর্জা করতে গিয়ে নিয়মিত কবরটিও পরিচর্জা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষ তাদের প্রয়োজনমত মতো লতা-পাতা ও গাছেরছাল নিয়ে যান। প্রাচীরের গেটের চাবি পাশের এক বাড়িতে রাখা থাকে। যেকোনো মানুষ এখানে এসে তালা খুলে তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছেন। ভুটিয়ারগাতি গ্রামের মামুনুর রহমান বলেন, জোয়ারদারদের এই উদ্যোগ তাদেরকে অনুপ্রানিত করেছে। এটা দেখে তাদের খুব ভালো লেগেছে। তাই তারাও উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের পারিবারিক কবরস্থানে ঔষধি গাছের বাগান করবেন। ইতোমধ্যে ৮৬ শতক জমি প্রাচীর দিয়েছেন। গাছ লাগানো শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।