বৃহস্পতিবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাপা সিলেট শাখার সেক্রেটারী কিম ‘কে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে
বাপা সিলেট শাখার সেক্রেটারী কিম ‘কে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে
সিলেট প্রতিনিধি :: (১ পৌঁষ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৫.৫৬মি.) বাপা সিলেট শাখার সেক্রেটারী আব্দুল করিম কিমকে ১৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে।
আব্দুল করিম কিম-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এখনো থানায় আছি। আমি আমার ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছি দেখেন। যে অভিযোগে আমাকে পুলিশ নিয়ে এসেছে আমি তার সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নই।
পাঠকদের জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র সিলেট শাখার সেক্রেটারী আব্দুল করিম কিম-এর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো….
রাত প্রায় দেড়টা বাজে তখন। মোবাইলে রিং হতে বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরি। ওপাশ থেকে পুর্ব পরিচিত এক পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, কিম ভাই, আপনি বাসায়। অবাক হয়ে বললাম জ্বি বাসায়।
আমাদের স্যার একটু কথা বলবেন নিচে আসুন।
আমি লুঙ্গি ও স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরে নিচে নামলাম। বাইরের গেইট খুলতেই আমাকে এক দল পুলিশ ঘিরে ধরে বলে আপনাকে আমাদের সাথে একটু থানায় যেতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, কেন? কি বিষয়? জবাব না দিয়ে গাড়ির দিকে এগুতে বললেন। বাসার বাইরে দেখলাম পুলিশের ছয়টি গাড়ি দাঁড়ানো।
আমি কাপড় বদলে আসতে চাইলাম। উনারা বললেন, কাউকে ফোন দিয়ে বলেন শীতের কাপড় ও ঔষধ কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসতে। ভাগ্যিস মোবাইলটা সংগে এনেছিলাম।
গাড়িতে বসে আমার স্ত্রীকে ফোন দিলাম। বেচারী মাত্র ঘুমিয়েছে। ফোন না ধরায় পরিচিত দুই বড় পুলিশ কর্মকর্তাকে চেষ্টা করলাম। উনাদেরকেও ফোনে ধরতে পারলাম না। ফোন দিলাম ঘনিষ্ট একজন সাংবাদিককে। তিনি বললেন, কিম ভাই এক্ষুনি থানায় আসছি।
থানায় নিয়ে এসে উপ কমিশনারের রুমে বসানো হল। উনারা জানতে চাইলেন, আমি ব্লগে লিখি কি না? জানালাম ব্লগে লিখিনা।
এতোক্ষন ভাবছিলাম সুন্দরবন আন্দোলন নিয়ে হয়তো কোন জিজ্ঞাসাবাদ। যদিও আমি এই আন্দোলনে সামান্য একজন কর্মী ।
উনারা ব্লগ সংক্রান্ত প্রশ্ন করায় বুঝলাম বিষয় অন্য কিছু। আমি বললাম, আমাকে বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলেন আপনারা আমার কাছে কী জানতে চাইছেন?
তখন আমার সামনে একটি প্রিন্ট কাগজ দেয়া হল। যা দেখে বোঝা গেল এটা একটা ফেইসবুক ম্যাসেজ কনভার্সেশন। যেখানে আমার বর্তমান প্রোফাইল ছবি যুক্ত করা আছে।
সেখানে আমার ছবির পাশে চরম আপত্তিকর ধর্ম অবমাননাকর কথা লেখা। যা দেখে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠে। আমি ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলে চোখ ফিরিয়ে নেই। এটা পড়া বা উচ্চারণ করা একজন মুসলমানের জন্য গর্হীত অপরাধ ।
আমি উনাদের কাছে ফেইসবুক পাসওয়ার্ড দিলাম। উনারা আমার ম্যাসেজগুলো দেখতে থাকলেন। আমি আবারো সেই প্রিন্ট কপি দেখে কিছু অসংগতি দেখালাম। উনারা জানতে চাইলেন, আমার কারো সাথে কোন শত্রুতা আছে কি না? ধর্ম নিয়ে ফেইসবুকে কখনো কটাক্ষ করেছি কি না?
আমি জানালাম, আমি ধর্মপ্রাণ একজন মুসলিম। জীবনে কখনো ধর্মকে অবমাননা করে কিছু লেখার প্রশ্নই আসে না। আমার কাজ পরিবেশ আন্দোলন । এর বাইরে নাগরিক অধিকার নিয়ে কথা বলি।
আমি গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের একজন সংগঠক ছিলাম। আমি মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজাকারদের সর্বোচ্চ বিচার চেয়েছি।
উনারা জানালেন আমার নাম দিয়ে তৈরিকৃত সেই ম্যাসেজ বাঁশেরকেল্লা টাইপের বিভিন্ন গ্রুপে কাল থেকে শেয়ার করা হয়েছে। আমার উপর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে উস্কানী দেয়া হচ্ছে। তাই আমার নিরাপত্তা ও বিষয়টির আড়ালে কারা আছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য উনারা আমাকে থানায় নিয়ে এসেছেন ।
আমি পরিচিত আত্মিয় বন্ধু স্বজন ও শুভান্যুধায়ীদের কাছে দোয়া চাইছি, যেন আল্লাহ্ তালা আমাকে এই ষড়যন্ত্র থেকে ইজ্জতের সাথে মুক্ত করেন ।
আর যে বা যারা আমাকে ফাসানোর জন্য এমন কাজ করেছে তারা যেন তওবা করে নিজেদের শোধরে নেয়।