শুক্রবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার
গাজীপুরে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২ পৌঁষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৫৭মি.) গাজীপুরে নিখোঁজ সেই স্কুলছাত্র আতিকুর রহমান আতিকের (১৫) লাশ সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিখোঁজের সাতদিন পর ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মীরেরগাঁও কারখানাবাজার এলাকার একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
জয়দেবপুর থানার এসআই মোঃ রাজিব শেখ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে মীরেরগাঁও কারখানাবাজার এলাকার জনৈক সিরাজুল ইসলামের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক নারী ওই বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ (কিছু মরার পঁচা গন্ধ) পান। পরে তা তিনি স্থানীয়দের জানান। স্থানীয়রা সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা সরিয়ে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর সোয়া ১টার দিকে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় আতিকের বাবা তার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন।
লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আতিক গত ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকে নিখোঁজ ছিল। সে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিপ্রবর্থা এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে এবং কাউলতিয়া জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। পাশাপাশি আতিক কারখানাবাজার এলাকার দেওয়ান ব্রিকস-এ ট্রাকে ইট লোড-আনলোডের শ্রমিক হিসেবে কাজ করত।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আতিক নিখোঁজের পর ওই ব্রিকসের ট্রাক চালক ও বিপ্রবর্থা এলাকার আব্দুর বারেকের ছেলে আব্দুল আলিম (৩২), শ্রমিক ও একই এলাকার শাহজাহানের ছেলে শফিকুর রহমান (২৩), মারফত আলীর ছেলে শাহিন ওরফে শাহিনুর (২২) ও মীরেরগাঁও এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে খোরশেদ আলমকে (২২) ডেকে সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ফারুক আহম্মেদের উপস্থিতিতে সালিশ করে এলাকাবাসী। সালিশে তারা একেকবার একেক তথ্য দিলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
পরে আতিকের বাবা বাদী হয়ে ১৪ ডিসেম্বর বুধবার রাতে জয়দেবপুর থানায় ওই ব্রিকস মালিক ইমরান দেওয়ান ও আটক ওই চার জনকে আসামি করে মামলা করেন।
এর আগে বুধবার জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুল হাসান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃতদের মধ্যে শাহিনুর জানিয়েছিল, তাদের সঙ্গে আতিকও ট্রাকে করে ঢাকার আজিমপুর যায়। সেখানে ইট আনলোড করার সময় দুর্ঘটনায় (ট্রাকের ঢালার আঘাতে) আতিক মারা যায়। পরে সেখান থেকে তার লাশ ট্রাকে করে এনে ইটভাটার মালিক ইমরান দেওয়ানের কাছে হস্তান্তর করে। ইমরান দেওয়ান কৈফিয়ত এড়াতে লাশটি তার পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর না করে ওই ইটভাটায় ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে পারে বলে শাহিনুরের ধারণা।
শহিনুরের দেওয়া ওই তথ্য অনুযায়ী গত বুধবার দেওয়ান ব্রিকস-এ অভিযান পরিচালনা করেছিল পুলিশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হয়।
গাজীপুর আদালতের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে জানান, তিন আসামি (আলিম, খোরশেদ ও শফিকুল) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইলিয়াস রহমানের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেন যে, ঢাকায় ইট নামানোর সময় ইটের সঙ্গে আতিক মাটিতে পড়ে যায়। তার শরীর ঠাণ্ডা থাকায় সে মারা গেছে বলে তারা মনে করে। বিষয়টি মালিক ইমরান দেওয়ানকে জানালে তিনি লাশ বস্তায় ভরে ইট ভাটায় নিয়ে যেতে বলেন। মালিকের কথামত তারা আতিকের লাশ বস্তায় ভরে ট্রাকসহ ইটভাটায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ভাটা মালিক তাদের চলে যেতে বলে। পরে আতিকের লাশ কি করা হয়েছে তা তারা জানেন না।