বুধবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীতার কারণে রাঙামাটি পর্যটন শহরের ফুটপাত বেদখল
কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীতার কারণে রাঙামাটি পর্যটন শহরের ফুটপাত বেদখল
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: (৭ পৌষ ১৪২৩ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.১০মি.) অবৈধ দখলদার আর স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে রাঙামাটি শহরের ফুটপাত ও পায়ে চলার রাস্তা। পর্যটন নগরী খ্যাত রাঙামাটি শহর হয়ে পড়েছে দখলদারদের স্বর্গরাজ্য। পর্যটন পরিবেশ বজায় রাখা তো পরের কথা সাধারনভাবে সুষ্ঠ ও পরিবেশগত জীবণ যাপনেও প্রতিনিয়ত বাধা গ্রস্থ হচ্ছে সাধারন নাগরিকরা।
জানা যায়, রাঙামাটির পৌর এলাকার জনসাধারনের পায়ে চলাচলের জন্য ১৯৭৭-১৯৭৮ সালে সরকারী অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধানে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। পর্যটন নগরী রাঙামাটি পৌর এলাকাটি রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও বনরুপা হয়ে মানিকছড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। দীর্ঘ ৩৮ বছরে রাঙামাটি শহরের সরকারী অর্থে নির্মিত ফুটপাত জনসাধারন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফুটপাত দখল করে তৈরী করা হয়েছে দোকান-পাট, অফিস ও আবাসিক হোটেল ইত্যাদি।
চলতি ভ্রমন মৌসুমে পর্যটকদের আগমনে নির্ভিঘেœ রাঙামাটি শহরে যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে গত ১১ ডিসেম্বর রবিবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আয়োজিত জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় রাঙামাটি শহরের অবৈধ ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং রাঙামাটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যৌথ অভিযানের মাধ্যমে যত্রতত্র স্তুপ করে রাখা লাকড়ী, বাঁশ, গাছ, ইট, বালি ঠেলা গাড়ী, ব্যানগাড়ী, আসবাবপত্র নির্মাণের সামগ্রী (ফার্নিচারের কাঠ) ইত্যাদি ও বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী বেআইনীভাবে ফুটপাত কেটে নিজস্ব রাস্তা তৈরী করা, দোকান-পাট, অফিস, বিভিন্ন মার্কেট ও আবাসিক হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহনের পরেও জেলার উচ্চ পর্যায়ের সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সুশীল সমাজের গৃহীত সিদ্ধান্ত ১০ দিনেও বাস্তবায়িত হয়নি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) রাঙামাটি এর গাফিলতির কারণে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাঙামাটি রাবার বাগান থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলো পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সড়কের দুই পাশে আইন অমান্য করে সরকারী জায়গাতে এক শ্রেনীর লোভী লোকজন তাদের ইচ্ছে মত গড়ে তুলেছে অসংখ্য স্থাপনা।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীতাও উচ্ছেদ অভিযানে অনিহা প্রকাশ রাঙামাটি শহরের ফুটপাত বেদখল হয়ে যাওয়া পিছনে মুল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, জেলা প্রশাসনের আইন শৃংখলা কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন থেকে পুলিশ ফোর্স ও রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাঙামাটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা দিলে আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।
শহরের ভেদ ভেদী বাজার, সিও অফিস এলাকা, কলেজ গেইট এলাকা, কল্যাণপুর এলাকা, দেবাশীষ নগর এলাকা, রাঙামাটি প্রধান ডাকঘরের সামনে, ষ্টেডিয়াম এলাকা, জেলা শিল্পকলা একাডেমেীর সামনে, রানী দয়াময়ী স্কুলের পাশে, রাজবাড়ি স-মিল এলাকা, উন্নয়ন বোর্ডের রেষ্ট হাউজের সামনে (বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্যরা ভাড়া থাকেন),জজ কোর্ট এর সামনে, বনরুপা বাজার এলাকা, রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীর সামনে, কাঠালতলী আইএফআইসি ব্যাংকের আগে ও পরে, কাকলী সিনেমার পরে রাস্তার দু’পাশে আবাসিক হোটেল সুফিয়ার আগে ও পরে, ফিসারী এলাকা,বাস টামির্নাল এলাকা, বাঁধের ওপর, ট্রাক টার্মিনাল এলাকা, পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকা, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পিছনে, রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয়ের পিছনে, পুরাতন ষ্টেডিয়াম এলাকা, ইন্দ্রপুরী সিনেমা হল থেকে রাস্তার দু’পাশে রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট পর্যন্ত, রাঙামাটি শহীদ মিনার থেকে পলওয়ে পুলিশ পার্ক পর্যন্ত, পুরাতন পুলিশ লাইন থেকে আনন্দ বিহার পর্যন্ত, আনন্দ বিহার এর সামনের গেইট থেকে সড়কের দু’পাশে তবলছড়ি বাজার পর্যন্ত, তবলছড়ি বাজার থেকে পর্যটন (ডিয়ার পার্ক ও বিডিআর গেইট) পর্যন্ত, কোতয়ালী থানার সামনে থেকে স্বর্ণটিলা,স্বর্ণটিলা থেকে আসামবস্তী সড়কের দু’পাশে, আসামবস্তী থেকে রাঙাপানি পাড়া, রাঙাপানি থেকে পাড়া ভেদ ভেদী পাড়া পর্যন্ত ও ভেদ ভেদী পাড়া থেকে ভেদ ভেদী বাজার পর্যন্ত জনসাধারন চলাচলের ফুটপাতে যত্রতত্র স্তুপ করে রাখা হয়েছে লাকড়ী, বাঁশ, গাছ, ইট, বালি, ঠেলা গাড়ী, ভ্যানগাড়ী, আসবাবপত্র নির্মাণের সামগ্রী (ফার্নিচারের কাঠ) ইত্যাদি ও বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। কেউ কেউ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি বিহীন ফুটপাতের অংশ কেটে নিজেদের বাড়ীতে প্রবেশ পথ, গাড়ী রাখার স্থান, ড্রেন এমনকি উপড়ে ফেলেছে ফুটপাতের চলাচলের মুল অংশটিও। জেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এসে রাঙামাটি শহরের দর্শনীয় স্থান পায়ে হেটে দেখার কোন সুযোগ নাই।
রাঙামাটি শহরে প্রতিনিয়িত সরকারী জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। বিগত তিন বছরে রাঙামাটি শহরে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের লোকজন গড়ে তুলেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ থেকে রেহাই পাচ্ছেনা জনসাধারনের পায়ে হাটার ফুটপাত পর্যন্ত। বিশেষ করে রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরুপা পেট্রোল পাম্প মালিক ফুটপাত ও সড়কের জায়গা দখল করে নিজেদের পাম্পের তেল বিক্রির স্থান বানিয়ে ফেলেছে। কৃত্রিম ভাবে তৈরী করা হয়েছে জনদুর্ভোগ।
এছাড়াও বনরুপা বাজার, তবলছড়ি বাজার ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় প্রতিনিয়ত সড়কে যান বাহন চলাচলের মুল সড়ক ও সাধারন লোকজন চলাচলের জায়গা রাস্তার পাড় যেখানে ফুটপাত নাই সেই সব স্থানে দোকানের মালামাল বিক্রির জন্য দখল করে রেখেছে।
রাঙামাটি শহরে যত্রতত্র মনগড়া ভাবে এক শ্রেনীর ড্রাইভার ও মালিকরা সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটর সাইকেল পার্কিং এর কাজে ব্যবহার করছে রাঙামাটি শহরের ফুটপাত। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সাধারন মানুষের পায়ে হাটার রাস্তা দখলের এমন চিত্র শহরের প্রায় সব এলাকায় দেখা গেলেও নজর পরছেনা স্থানীয় কোন কর্তৃপক্ষের। রাঙামাটি পর্যটন শহরকে জনসাধারনের যাতায়াতের ক্ষেত্রে পায়ে চলাচলের জায়গা বেদখলকৃত ফুটপাত ও পায়ে হাটার রাস্তা মুক্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞমহল।