শুক্রবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » ভাঙনের কবলে বরগুনার কয়েকটি উপজেলা: স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত
ভাঙনের কবলে বরগুনার কয়েকটি উপজেলা: স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত
মুতাসিম বিল্লাহ,বরগুনা প্রতিনিধি :: (৯পৌষ ১৪২৩ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৪৩মি.) ‘ব্যামালা কইছি,হ্যারা কেউ হোনেনা মোগো কতা। ভিডামাডি সব নদীতে শ্যাস অইয়া যাইবে, হ্যাতে হ্যাগো কিচু অইবেনা। যেহানে লাগবে দশ আত খাড়া, হে হানে দেয় ছয় আত খাড়া। হ্যা থাকপে ক্যামমে নদী ভাঙনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেতাগী সদর ইউনিয়নের জোপখালী গ্রামের তারেক হাওলাদার ও মনিরুজ্জামান, জানান, এছাড়াও, বরগুনার তিনটি নদী ভাঙন কবলিত এলাকার অধিকাংশ মানুষের একই অবস্থা। আর এ ভাঙনের ফলে হুমকিতে রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের ফলে বাবা-দাদার রেখে যাওয়া জমি, বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নামে মাত্র বেড়িবাঁধ দেওয়ায় তা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভেঙে যায়। আবার নতুন করে একইরকম বেড়িবাঁধ দিলেও আতংকে ভুগছে ভুক্ত
ভোগিরা ও ভাঙ্গন কবলিত মানুষেরা। এরই মধ্যে বরগুনার প্রধান তিন নদী
বিষখালী , বুড়িশ্বর ও বলেশ্বর নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন লেগেছে। ভাঙা বেড়িবাঁধে ও বেশ কয়েক স্থান দিয়ে নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, মাছের ঘের, ফসলী ক্ষেত। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন।
বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদীর তীরে বেতাগী সদর এলকার জোপখালী গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অনেক চাষাবাদ জমি-জমা ভিটা-বাড়ী প্রতিনিয়ত মাজে বিষখালীর আকা-বাকা সুরচন্দের জোয়ারে উত্তাল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, পুকুর, মাঝের ঘের, নষ্ট হয়েছে ফসলি জমির ফসল।
বেতাগী সদর পৌর পুলিশ-ফাড়ি এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হতে চলছে বেতাগী পৌর পুলিশ ফাড়ি এলাকা এবং বিষখালীর ভাঙ্গনে বেতাগীর কিছু এলাকা। ভাঙনের ফলে দিনে দুবার করে জোয়ারের পানিতে ভাসছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে এলাকাবাসী।
বলেশ্বর নদীর পানির চাপে কাঠালতলী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বরগুনা আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশীয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৪টি গ্রাম। জোয়ারের পানিতে দিনে দুবার ভাসছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে এখানকার মানুষ।
এছাড়াও বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন এলকা সারেজমিনে ঘুড়ে দেখা গেছে বিষখালির ভাঙ্গনে পড়েছে, যেমনটা দেখা মিললো বেতাগীর কিছু এলাকায় যেমনটি বেতাগী উপজেলার, কালিকাবাড়ী, আলিয়াবাদ, ঝোপখালী, ভোলানাথপুর, জগাইখালী, কালিকাবাড়ী, গাবতলী, আলিয়াবাদ, জোয়ার করুনা, গ্রেমর্দন, পূর্ব বেতাগী, পশ্চিম বেতাগী, বেতাগী পৌর শহারের বেড়ীবাধ এমনি ভাঙ্গনে হুমকিতে
রয়েছে পৌর শহর। যার ফলপ্রসূতিতে বেতাগীতে শহর রক্ষার বাঁধসহ বেশ কিছু এলাকা রয়েছে ঝুঁকিতে।
বরগুনার তালতলী উপজেলার বেড়িবাঁধের ওপরে পচাকোড়ালিয়া বাজারে ভাঙনে বিলিন হয়েছে ৯টি ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী, নিশানবাড়িয়া, নলটোনা, ডালভাঙ্গা, পাথরঘাটা উপজেলার জ্বিনতলা, রুহিতা, বাদুরতলা, হরিণ বাড়ীয়া, পদ্মা, হারিটানা, কোড়ালিয়া, নিজ লাঠিমারা, ছোট টেংরা, গাববাড়ীয়া, তালতলীতে বেড়ীবাধের বাইরে খোটটার চর, নলবুনিয়ার চর, আশার চর, তেতুল বাড়ীয়া,জোয়ারের পানিতে ভাসছে আর ভাটায়
শুকাচ্ছে। আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলি, চর বালিয়াতলী, দক্ষিণ বালিয়াতলী ও পছরবুনিয়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও একই অবস্থা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নামে মাত্র বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গিয়ে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি, মাছের ঘের, সবজির ক্ষেত। প্রতিদিন দুবার করে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।
পচাকোরালিয়া বাজারের ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী হিরন, খোকন ইব্রাহীম বলেন, হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। পরে পানি কমতে থাকলে বাঁধের রাস্তার অর্ধেক ধরে নদীর পাশ ভাঙতে থাকে। যার ফলে আমাদের ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে যায়। তারা আরও বলেন, আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়ে এখন দিশেহার হয়ে পরেছি। নতুন করে দোকান উঠাতে অনেক টাকা লাগে যা আমাদের কারও কাছে নেই। বালিয়াতলী এলাকার সবুজ মিয়া জানান, আমাদের দাবি ছিল বড় করে বেড়িবাঁধ ও ভাঙন রোধে দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতির। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত আছে। অনেকেই
ভাঙনের কারণে ঘর ভেঙে অন্য জায়গায় বাড়ি করেছে। স্কুল সরিয়ে অন্য জায়গায় নেওয়া হয়েছে। যাওয়ার মতো জায়গা নেই এমন অনেক পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে। যে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার নয়। তিনি আরও বলেন, এখন পথে বসে
যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. বশিরুল আলম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে যে সব এলাকায় ভাঙনের খবর পেয়েছি সেসব এলাকা পরিদর্শন
করে দ্রুত সহয়তার জন্য ত্রাণ বিতরণ করেছি, এবং বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কবল থেকে বাঁচাতে সার্বত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।