রবিবার ● ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » আজ বড় দিন : উৎসব কিন্তু সবার
আজ বড় দিন : উৎসব কিন্তু সবার
বিশেষ প্রতিবেদন :: ধর্ম যার যার উৎসব সবার, এমনি পতিপদ্যমায় দিন আজ পালিত হচ্ছে যীশু খ্রীষ্টের জন্মদান তথা (বড়দিন উৎসব) এ নিয়ে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি মুতাসিম বিল্লাহ একটি বিশেষ প্রতিবেদন।
আজ ২৫ শে ডিসেম্বর বড় দিন। প্রতি বছরের মতো এবারও এলো সেই শুভ দিন, বড়দিন। আজ থকে ২০১৬ বছর পূর্বে বৈৎলেহম নগরে যীশু খ্রীষ্টের জন্ম হয়। এক দরিদ্র বেশে তিনি জন্ম নিলেন এই পৃথিবীতে। জন্মের পর তিনি বিছানা হিসাবে লাভ করেছিলেন একটি যাবপাত্র যেখানে পশুদের খাবার দেওয়া হতো। সমগ্র বিশ্বের রাজাধিরাজ হয়েও তিনি বেছে নিলেন এক দরিদ্র পরিবারকে এবং জন্মস্থান হিসাবে এক উপেক্ষিত স্থানকে। আমাদের মহান প্রভু যিনি ঈশ্বর পুত্র রূপে ইতিহাসের একবিশেষ সময়ে আমাদের মাঝে এই ধরণীতে নেমে এলেন।মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের পাপের জন্য তাদের সেই এদোন উদ্যান থেকে বের করে দিয়েছিলেন। মানব জগতে নেমে এসেছিল পাপ আর মন্দতা। নিজের সৃষ্টির এই করুণ অবস্থা-দেখেই স্রষ্টা মানুষকে ভালবেসে নেমে এলেন; পবিত্র আত্মার শক্তিতে এক কুমারী নারীর গর্ভে তিনি জন্ম নিলেন। স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মধ্যদিয়ে এভাবে জন্ম নেওয়ায় তিনি সমগ্র মানব সমাজকে সম্মানিত করেছেন। সম্মানিত করেছেন নারী সমাজকে। মানুষের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা হলো তাঁর পুত্রকে তথা যীশুকে এই জগতে প্রেরণ করা। তিনি এসেছেন যেন মানব সমাজ পাপ থেকে মুক্তি পায়।সারা বিশ্বের সকল মানব সমাজকে তিনি পরিত্রাণ বা মুক্তি উপহার দিয়েছেন এবং মানব সমাজকে তিনি এই স্বাধীনতাও দিয়েছেন যে, সে ইচ্ছা করলে ভাল কিছু গ্রহণ করতে পারে এবং ইচ্ছা না করলে তা বর্জন করতে পারে।
যীশু পৃথিবীতে এসে দুইটা কথা বলেছেন। ১. ভালবাসা, ২. শান্তির কথা।শুনতে ভাল লাগে যখন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সর্বজনবিদিত, স্বর্গীয় মাদার তেরোসার কথাগুলো স্মরণ করি।কোনো এক প্রাক বড়দিনের উৎসবে একদল উৎসুক সাংবাদিক আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে মাদার তেরোসাকে প্রশ্ন করলেন- মাদার বড়দিনের তাৎপর্য সম্বন্ধে আপনি কিছু বলুন।
মাদার মৃদু হেসে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দিলেন-রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পিতা-মাতাহীন অসুস্থ্য, অবাঞ্চিত, অবহেলিতআশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন, সহায়-সম্বলহীন শিশুদের যখন আমি কোলে তুলে নিই, কত ভালবাসি তাদের—এইতোবড়দিন, প্রতিদিন বড়দিন আমার জীবনে।
আজকের পৃথিবীতে এ ধরনের একটি মনের বড় অভাব।শান্তি দুটো শব্দ। অথচ আজকের পৃথিবীতে এর বড় অভাব। সবাই শান্তি চায়।
কিছুদিন আগে জাপানের টোকিও শহরের একজন লোক তার পরিবারশুদ্ধ সবাইকে নিয়ে গাড়িতে চড়ে সাগর সৈকতে গিয়েছিলেন বেড়াতে। হঠাৎ করেই গাড়ির স্টিয়ারিং-টা ঘুরিয়ে দিলেন সাগরের দিকে। গোটা পরিবারটা সাগরের জলে ভেসে গেল। পরে খোঁজ করে পাওয়া গেল ছোট্ট এক টুকরো কাগজ। তাতে লেখা, ‘শান্তির খোঁজে মৃত্যুর পথই বেছে নিলাম।
পবিত্র বাইবেল বলে, শান্তির অভাবই বড় দুঃশ্চিন্তা এবং খারাপ কাজের প্রবণতা জাগায়। স্রষ্টার প্রতি অবিশ্বাসই অশান্তির মূল কারণ। দুঃশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা-মানসিক ব্যাধির উৎপত্তির মূলই অশান্তি।আজ আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে শান্তি এবং ভালবাসা খুবই প্রয়োজন। ঈশ্বর তাঁর প্রিয়পুত্রের জন্মদিনের ভিতর দিয়ে ভালবাসা এবং শান্তি আমাদের দান করতে চান।এ পর্যায়ে ছোট্ট একটি গল্প বলতে চাই। এক বিধবা তার দুটি ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার। একদিন তাদের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। বাচ্চা দুটো ক্ষিধায় ভীষণ কান্না-কাটি করছে আর তার মা চুলার পাশে বসে আছে, খালি হাড়িতে পানি জ্বাল দিচ্ছে।
বাচ্চা দুটো এক সময় ঘুমিয়ে পড়লে তখন তাদের মা বনের দিকে গেল কিছু পাওয়া যায় কিনা। বনের ভিতর থেকে কিছু উটের মাংস পেল। সেটা নিয়ে মা মাংস রান্না করছে তার ছেলে-মেয়ের জন্য। বিধবা মহিলার পাশেই বাদশার বাড়ি। বাদশা হজ করতে যাবেন বলে ওই দিন রোজা আছেন। বাদশা রোজার শেষে খাবার সময় হঠাৎ ওই বিধবার মাংস রান্নার গন্ধ পেল। বাদশা সঙ্গে সঙ্গে লোক ডেকে বললো-যাও, কে এই মাংস রান্না করছে তার কাছ থেকে এই মাংস রান্না নিয়ে এসো, তা খেয়ে আমি আমার রোজা ভাঙবো। বাদশার লোকরা বিধবার কাছে গিয়ে দেখে দুইটা বাচ্চা চুলার পাশে ঘুমিয়ে আছে আর তাদের মা ওই মাংস রান্না করছে। বাদশার লোকেরা বিধবাকে বললো, তোমার ওই মাংসরান্না দাও। আমাদের বাদশা খেয়ে রোজা ভাঙবে। বিধবা কিছুতেই দিবে না। আর বাদশার লোকেরা তত জোর করছে যে দিতেই হবে। কারণ আমাদের বাদশা তা খেয়ে রোজা ভাঙবে। খুব জোরাজুরির এক সময় বিধবা বলল, দেখুন আমার ঘরে কোনো খাবার ছিল না, যার জন্য আমার দুইটা বাচ্চা ক্ষিধায় কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্তহয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
আর এই সময় আমি বনে গিয়ে দেখতে পাই যে, একটা মরা উট পড়ে আছে আর সেই মরা উটের মাংস আমি মসলা ছাড়াই রান্না করছি। এখন বলুন আমি কী করে আমার বাদশাকে এই মাংস রান্না দিতে পারি।তারা নীরবে চলে গেল। বাদশাকে সব খুলে বললো।বাদশা বললো আমার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকবে আর আমি হজ করব; তা হয় না। তিনি তার হজে যাবার জন্য জোগানো সব টাকা গরীবদের জন্য বিলিয়ে দিলেন। আর সেই রাতেই ফেরেস্তা তাকে স্বপ্নে দর্শন দিলেন যে তোমার হজ পূর্ণ হয়েছে।
তোমার মঙ্গল হউক। আমরাও যদি অবহেলিত-অবাঞ্চিত, লাঞ্ছিত, আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীনদের সেবা করতে পারি তবেই খ্রীষ্টের এই জন্মদিন, বড়দিন পূর্ণ হবে।ঈশ্বর তাঁর প্রিয় পুত্রের জন্মউৎসবের ভিতর দিয়ে আমাদের সকলকে ভালবাসা, শান্তি ও আনন্দ দান করুন।
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর পক্ষ থেকে আজ শুভ বড়দিনের অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা খৃষ্টাধর্মলম্বীদের
সুত্র : তথ্য সংগৃহীত।